নখের রোগ ও এর প্রতিকার
নখ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ আমাদের দেহের। নখের নিজস্ব কিছু রোগ রয়েছে। আবার দেহের পদ্ধতিগত কিছু রোগের প্রভাবও নখের ওপর এসে পড়ে। আজ ৪ নভেম্বর, এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২১৯৫তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশ স্কিন অ্যান্ড লেজার সেন্টারের পরামর্শক ডা. তওহিদা রহমান।
প্রশ্ন : সাধারণত কী ধরনের সমস্যা নখে হতে পারে?
উত্তর : আমরা সবাই চাই সুস্থ-সুন্দর নখ। আর মেয়েদের জন্য নখ একটি অলংকারের মতো। তারা এটাকে সুন্দর করে পেইন্ট করে। নখে কোনো সমস্যা হলে পুরো হাতের সৌন্দর্যটাই চলে যায়। নখের বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। নখের নিজস্ব কিছু অসুখ রয়েছে, যেটা নখেই হয়। এ ছাড়া ত্বকের কিছু অসুখ আছে, যার প্রভাব নখে পড়ে। আর পদ্ধতিগত রোগের কারণেও নখে সমস্যা হয়।
প্রশ্ন : যার নখে এ জাতীয় সমস্যা রয়েছে সে বুঝবে কীভাবে?
উত্তর : প্রথমে আমি বলি, নখের অনেক নিজস্ব রোগ হয়। প্রথমেই যেটা হয়, খুব প্রচলিত অনাইকোমাইকোসিস। এটি ফাঙ্গাস দিয়ে হয়। প্রথমে সাধারণত এর কোনো লক্ষণ থাকে না। তাই রোগী কোনো অভিযোগ করে না। দেখা যায়, নখের রং বদলে যাচ্ছে। একটু হলুদাভ হচ্ছে। তখন দেখতে খুব পচা দেখাচ্ছে, এটি ভেবে রোগী আসতে পারে।
প্রশ্ন : সমস্যাটি কী হয় সে ক্ষেত্রে?
উত্তর : রংটা একটু হলুদাভ হয়ে যায়। নখ পুরো হয়ে যায়। থাক থাক ভাব (ফ্লেক) আসতে পারে। পরবর্তীকালে যখন লক্ষণ প্রকাশ হয়, তখন রোগীর দৈনন্দিন শারীরিক কাজ ব্যাহত করে। অনাইকোমাইকোসিস চার রকমের হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে প্রচলিত হলো ডিসট্রাল লেটেরাল সাবাঙ্গুয়াল অনাইকোমাইকোসিস। যেহেতু এটা ছত্রাক দিয়ে হয়, তাই টিপিক্যাল অ্যান্টিফাঙ্গাল ব্যবহার করতে হবে। সেটা লোশন বা ক্রিম হতে পারে। পাশাপাশি মুখের অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ খেতে হয়। এই ওষুধ সাধারণত তিন মাস খেতে হয়।
ডা. তওহিদা রহমান।
প্রশ্ন : আর কী কী ধরনের সমস্যা হয় নখ থেকে?
উত্তর : নখের আরেকটি প্রচলিত সমস্যা হলো প্যারোনাইকিয়া। যারা গৃহিণী, খুব বেশি পানির কাজ করছে, থালা-বাসন মাজছে, তাদের এটি খুব বেশি হয়। এটা খুব ব্যথাযুক্ত। তারা অভিযোগ করে, আমার নখটি ডেবে যাচ্ছে। এর চিকিৎসায় একটি অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্স দিই আমরা। এই সমস্যা ছত্রাকের কারণেও হতে পারে। তখন দীর্ঘমেয়াদি অ্যান্টিফাঙ্গাল দিয়ে চিকিৎসা দিই।
এখন আমরা মেয়েরা নখের বিষয়ে অনেক বেশি যত্নবান। দেখা যায়, নেইল পেইন্ট করি অথবা কৃত্রিম নখ পরি। কৃত্রিম নখের যেই গ্লু রয়েছে, সেটি খুব ক্ষতিকর।
প্রশ্ন : সে ক্ষেত্রে কৃত্রিম নখের ব্যবহারে আপনার পরামর্শ কী?
উত্তর : প্রথমে হলো কৃত্রিম নখ ব্যবহার যতটা এড়িয়ে যাওয়া যায় তত ভালো। আর খোলার সময় খুব সতর্ক হতে হবে। নেইলপলিশ রিমুভারের বিষয়ে খুব সচেতন হতে হবে। রিমুভারটি যেন এসিটোন ফ্রি হয়। কারণ, এসিটোন নখের কিউটিকলকে ক্ষতিগ্রস্ত করে ফেলে।
প্রশ্ন : নখের রোগ থেকে কী কী ধরনের জটিলতা হতে পারে?
উত্তর : আসলে রোগটি তখন নখ থেকে আঙুলে চলে যায়। আবার ত্বকের সমস্যার কিছু রোগ নখেও হয়, যেমন—সোরিয়াসিস। এটি খুব প্রচলিত একটি রোগ। এর পর আসে আরেকটি রোগ লাইকেন প্ল্যানাস। এই রোগের কারণে ব্যক্তি আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভোগে। এগুলো তো গেল ত্বকের বিষয়ে।
আর পদ্ধতিগত রোগগুলো যদি নিয়ন্ত্রণ না করি, তবে এর ক্ষতিকর প্রভাবও নখে পড়ে। একটি কথা বলা হয়, নখ শরীরের অবস্থা বলে দেবে। আপনি একজনের নখ দেখে বুঝতে পারবেন তার শারীরিক অবস্থা কেমন রয়েছে।
প্রশ্ন : অনেকেই নখের যত্নের বিষয়ে অবহেলা করেন। তবে নখের যে যত্নের প্রয়োজন রয়েছে, সে সম্বন্ধে আপনার কী মতামত রয়েছে?
উত্তর : নখের যত্নের ক্ষেত্রে প্রথমে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। নখের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে প্রথমে আসে নখন কাটার ব্যাপারটি। আরেকটি সমস্যা রয়েছে অনাইকোগ্রাইফোসিস। নখ অস্বাভাবিকভাবে বড় হতে থাকে। যদি নখের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় না রাখি, এসব সমস্যা দেখা দেয়। তাই নখ কাটতে হবে, পরিষ্কার রাখতে হবে। আর বিভিন্ন ধরনের রোগের প্রতিরোধে যতবার আপনি হাত ধোবেন, ততবার একটি ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবেন। সামনে তো শীত আসছে। বারবার ময়েশ্চারাইজার দিতে হবে।
আর খাবার-দাবারের বেলাতেই সচেতন হতে হবে। নখ তো প্রোটিন দিয়ে গঠিত। তাই জিংক, প্রোটিন, বায়োটিন এই সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। পাশাপাশি আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। কারণ, আয়রনের অভাবে নখে রোগ হয়ে যায়। চামচের মতো নখ হয়ে যায়, যাকে কোইলোনাইকিয়া কলে।
প্রশ্ন : আপনাদের চিকিৎসা কী থাকে, যখন এই জাতীয় সমস্যা নিয়ে রোগী আসে?
উত্তর : এ জাতীয় সমস্যা নিয়ে রোগী যখন এসেই যায়, তখন তাকে আমরা রক্ত পরীক্ষা করে দেখি হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কী, আয়রনের মাত্রা কী। এরপর খাবার এবং সাপ্লিমেন্ট তাকে নিতে হয়। এগুলো ঠিক করলে নখ আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসে।
প্রশ্ন : যে চিকিৎসা পদ্ধতিগুলোর কথা বললেন, এতে কি নখ পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যায়? নাকি আবার হওয়ার একটি আশঙ্কা থাকে?
উত্তর : এখন যদি সংক্রমণের কারণে রোগ হয় (যেমন : অনাইকোমাইকোসিস), এ রকম হলে আবার হতে পারে। সোরিয়াসিসের বেলায়ও হতে পারে। এ ক্ষেত্রে আপনাকে রোগটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে যেন এর চাপ আপনার নখের ওপর না পড়ে।
লিভার, ফুসফুস ও কিডনি রোগ—সবকিছুরই প্রভাব নখে রয়েছে। সেটাতে নখের আকৃতিও পরিবর্তন হতে পারে। রংও পরিবর্তন হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ বলি, আপনার যদি ফুসফুসের রোগ হয়, ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস, নিউমোনিয়া হয় তখন নখ হলুদ হয়ে যাবে।
এর পর রয়েছে টেরিস নেইল, নখটি সাদা হয়ে যায়। যারা ক্রনিক লিভার রোগে ভুগছে, যেমন—লিভার সিরোসিস, তাদের ক্ষেত্রে এটি হয়। এর পর রয়েছে হাফ অ্যান্ড হাফ নেইল। একটি অংশ হয়তো সাদাই থাকছে, তবে আরেকটি অংশ বাদামি বা লাল হয়ে যাচ্ছে। যাদের রেনাল ফেইলিউর রয়েছে, তাদের এ সমস্যা হয়। যারা ডায়ালাইসিস করছে অনেক দিন ধরে অথবা কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট করেছে, তাদের এ সমস্যা হয়।
প্রশ্ন : পদ্ধতিগত রোগের কারণে নখের যেসব রোগ হচ্ছে, সেগুলোর জন্য আপনারা কী করেন? আলাদা করে চিকিৎসা দেন? নাকি রোগগুলো নিয়ন্ত্রণে এলে নখ ঠিক হয়ে যাবে?
উত্তর : পদ্ধতিগত চিকিৎসাগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে মেডিসিন বিশেষজ্ঞদের কাছে পাঠিয়ে দিই।
প্রশ্ন : নখের সমস্যা যাতে না হয়, সে ক্ষেত্রে আমাদের কোন কোন বিষয় খেয়াল রাখতে হবে?
উত্তর : আমি আগে বলেছি, নখ হাতের সৌন্দর্য। নখ সুন্দর না হলে হাত অথবা পা দেখতে ভালো লাগে না। নখকে পরিষ্কার রাখতে হবে। নিয়মিত কাটতে হবে। নারকেল বা অলিভ অয়েল দিয়ে নখকে ম্যাসাজ করতে পারেন। এটি পুষ্টি জোগাবে। স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে।
প্রশ্ন : অনেকেই রয়েছেন, যাদের নখ পাতলা হয়ে যায় বা খুব সহজেই ভেঙে যায়। এটি কেন হয় এবং এটি রোধে পরামর্শ কী?
উত্তর : এটা আসলে খাবারের ঘাটতির জন্য হয়। খাবারে যদি বায়োটিন, জিংক বা আয়রনের অভাব থাকে, তখন নখ পাতলা হয়ে যায়। আর আরেকটি হলো অনেক বেশি নেইলপলিশ ব্যবহার করছে, রিমুভার ব্যবহার করছে, গ্লু ব্যবহার করছে—এ কারণেও নখ পাতলা হয়ে যায়।
প্রশ্ন : এই যে এসিটোন কনটেইনিং রিমুভারের কথা বলছিলেন, এটি কি সাধারণ মানুষ বুঝতে পারবে?
উত্তর : আসলে এ ক্ষেত্রে পণ্য পছন্দের ক্ষেত্রে একটু সতর্ক হতে হবে। নখকে আর্দ্র রাখা জরুরি। নখ ভালো রাখতে খাবার-দাবারের বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
মানবদেহে আদার অনেক উপকার
আমাদের দিনে কয়েকবার রঙিন খাবার খাওয়া উচিত, কিন্তু আপনি কিবিস্তারিত পড়ুন
রেড মিট খাওয়ার আগে কিছু পরামর্শ জেনে নিন
কোরবানি ঈদে বেশ কয়েকদিন টানা খাওয়া হয় গরু বা খাসিরবিস্তারিত পড়ুন
জাপান ও ইউরোপে বিরল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ
জাপানে, একটি বিরল “মাংস খাওয়া ব্যাকটেরিয়া” এর কারণে এক রোগবিস্তারিত পড়ুন