নতুন করে চাপে পড়েছে বিএনপি
দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন ও ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিকে ঘিরে নতুন চাপে পড়েছে বিএনপি। তা ছাড়া তিন মাস অতিক্রম হলেও দলটির পুনর্গঠনে কোনো অগ্রগতিও দৃশ্যমান নয়।
সম্প্রতি দুই বিদেশী নাগরিক হত্যায় বিএনপি নেতাদের নাম আলোচনায় আসে। এ ছাড়া দলের একজন ভাইস-চেয়ারম্যানের পদত্যাগ, দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ও স্থায়ী কমিটির এক সদস্যকে কারাগারে পাঠানো, আগে থেকে আরও কয়েকজন শীর্ষনেতার কারাগারে বা আত্মগোপনে থাকা, দলীয়প্রধানের দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থাকা ও দলীয় কর্মসূচি ঘরোয়া পরিবেশে সীমাবদ্ধ থাকা ইত্যাদি কারণে— ক্রমেই চাপে পড়ছে দলটি।
বিএনপি নেতাদের দাবি, মামলা-নির্যাতনের আর গ্রেফতারের ফলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কমিটিগুলো পুনর্গঠন করা সম্ভব হয়নি। ফলে দলের ষষ্ঠ কাউন্সিলের দিন-ক্ষণ ঠিক করা যাচ্ছে না। তবে দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়া থেমে নেই। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেশে ফিরলেই দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যাবে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর জুলুম-নির্যাতন নতুন কোনো ঘটনা নয়। এটা লেগেই আছে। এখন তারা (ক্ষমতাসীনরা) চাইবে আসন্ন স্থানীয় নির্বাচন অপজিশনদের দুর্বল করে, তাদের চাপে রেখে নিজের আয়ত্তে নিতে। এটা অসুস্থ রাজনীতি।’
‘আমি মনে করি, সরকারে যারা আছেন তারা নিষ্ঠাবান হলে সবার জন্য সমান সুযোগ করে দিবেন। কিন্তু সেটা আমরা দেখছি না। আমাদের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে, জামিন দেওয়া হচ্ছে না। নিজেদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্যই এটা করা হচ্ছে।’ যোগ করেন তিনি।
জেনারেল মাহবুব আরও বলেন, ‘বিএনপি পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে সরকার। দলের শীর্ষনেতা থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতা-কর্মী মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করছে। তারা এক সঙ্গে বসে আলাপ-আলোচনা করার সুযোগ পাচ্ছে না। তাহলে কীভাবে কমিটি গঠন করবে। বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার মধ্যেও পুনর্গঠন প্রক্রিয়া চলছে। দলের চেয়ারপারসন দেশে ফিরলেই দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যাবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট আহমদ আজম খান বলেন, ‘৫ জানুয়ারি যেহেতু একতরফা নির্বাচনের দুই বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে। সরকার মনে করছে। ওই দিন বিএনপি হয়ত মাঠে নামবে, সেই আতঙ্কে ভুগছে সরকার। তাই এখন থেকেই ধর-পাকড় শুরু করে দিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সম্প্রতি সারাদেশ থেকে প্রায় ৫০০ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তা ছাড়া দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীকেও জেলে পাঠানো হয়েছে।’
টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির এই সভাপতি আরও বলেন, ‘ইউনিয়ন, পৌর নির্বাচনকে ঘিরে সারাদেশে নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। যাতে তারা প্রার্থী হতে না পারেন। যারা বাইরে থাকবেন তারাও তো কোনো মুভমেন্ট করতে পারবেন না। গ্রেফতার আতঙ্কে থাকবেন। মাঠে নামতে পারবেন না। বিএনপির নেতা-কর্মীদের মাঠ ছাড়া করে তারা নিজেদের মতো করে অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে চায়।’
গত ৯ আগস্ট সারাদেশে বিএনপির ৭৫টি সাংগঠনিক জেলায় কেন্দ্র থেকে চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌরসভা ও উপজেলা পর্যায়ের মেয়াদোত্তীর্ণ সব কমিটি ভেঙ্গে নতুন কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়। ওই পুনর্গঠনের কাজ শেষ হলেই কাউন্সিলের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার কথা। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পুনর্গঠন করতে না পারায় মৌখিকভাবে নভেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়।
দলের নেতা-কর্মীদের দাবি, নাশকতার মামলায় দলটির গুরুত্বপূর্ণ অনেক নেতা এখনো কারাগারে। গ্রেফতার আতঙ্কে আত্মগোপনে আছেন অনেক সিনিয়র নেতা। নাশকতার তিন মামলায় জামিনে থাকা দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে আবারও জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। নতুন করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে। কারাগারে আছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, এম কে আনোয়ার ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। দীর্ঘদিন কারাগারে রয়েছেন দলটির দফতরের দায়িত্বে থাকা দলের যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ সারাদেশে অসংখ্য নেতা-কর্মী।
এদিকে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুল আউয়াল মিন্টু, যুগ্ম-মহাসচিব বরকতউল্লাহ বুলু, ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেলসহ অনেক দায়িত্বশীল ও গুরুত্বপূর্ণ নেতার বিরুদ্ধেই রয়েছে একাধিক মামলা। গ্রেফতার এড়াতে তারা এখনো প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে পারছেন না। আদালতে হাজির হলে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দিতে পারেন এমন আশঙ্কাও রয়েছে। ফলে অনেকটাই আত্মগোপনে রয়েছেন তারা।
সম্প্রতি (২ নভেম্বর) বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া লন্ডনে এক আলোচনা সভায় বলেন, ‘বিএনপির সিনিয়র নেতাদের কারাগারে বন্দী রাখার দুরভিসন্ধি সরকারের রয়েছে। যখন সারাদেশে তৃণমূল পর্যায় থেকে কাউন্সিল করে দলকে পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিয়েছি, তার পরপরই সারাদেশে দলের নেতা-কর্মীদের বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করা হচ্ছে। সরকারের এ ধরনের দমন-নিপীড়ন থেকে দলের বয়োজ্যেষ্ঠ নেতারাও বাদ পড়ছেন না।’
বিএনপির সহ-তথ্য গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক হাবীবুর রহমান হাবীব বলেন, ‘অনেক জেলায় দল পুনর্গঠনের কাজ চলছে। কিন্তু বিএনপি নেতা-কর্মীদের একত্রে বসতেই দিচ্ছে না। কোথায় বসলে নাশকতার অভিযোগ তুলে তাদের আটক করা হচ্ছে। তাহলে আমরা যাব কোথায়?’
কাউন্সিল সম্পর্কে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব দীর্ঘদিন জেলে থাকার পর মুক্তি পেয়ে বিদেশে চিকিৎসা নিয়ে ফিরে আসেন। মাত্র দুই-তিন দিন পার্টি অফিসে বসার সুযোগ পেয়েছেন। ফের তাকে জেলে পাঠানো হয়েছে। দলের একাধিক সিনিয়র নেতা জেলে আছেন। একটা কাউন্সিল করতে গেলে যে প্রস্তুতির প্রয়োজন— সেই কাজটা কারা করবেন? ফলে বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে হয়ত নির্বাচন কমিশনে কাউন্সিলের সময় আবেদন করা হবে।’
‘দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিজের করে নেওয়ার জন্য দলের নেতা-কর্মীদের গণগ্রেফতার শুরু করেছে।’ যোগ করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, টানা দুইবার আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে সক্রিয় কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামতে পারছে না বিএনপি। ফলে দলীয় কর্মকাণ্ড ঘরোয়া পরিবেশে বক্তব্য-বিবৃতিতে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে দলটি।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ফের ২ দিন রিমান্ডে আনিসুল হক
রাজধানীর বাড্ডা থানার স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা আল-আমিন হত্যা মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন
আমির খসরু: নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “গণতন্ত্রেরবিস্তারিত পড়ুন
জামিন পেলেন সাবেক বিচারপতি মানিক
অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের সময় সিলেটের কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত এলাকা থেকেবিস্তারিত পড়ুন