নতুন বছর নতুন আ.লীগ নতুন বিএনপি
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হওয়া বিতর্কিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে কেটে গেলো তিন বছর। এই সময়ের মধ্যে দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও দেশের প্রধান বিরোধীদল বিএনপির অবস্থান অনেকটাই বদলেছে।
অংশগ্রহণমূলক সংসদ নির্বাচন চায় আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে পরোক্ষভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি থেকে সরে এসে বিএনপি চায় নির্বাচন সহায়ক সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হবার পর। আর ওই নির্বাচনে বিএনপিসহ সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চেষ্টা চালানো হবে। এ ক্ষেত্রে পরবর্তী নির্বাচন কমিশন অধিকতর গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়েই গঠন করতে চায় সরকার। তবে নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়ে কোনো আপস করবে না আওয়ামী লীগ।
সরকারের কর্তা ব্যক্তিরা বলছেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে সরকারের জনপ্রিয়তা যে পর্যায়ে ছিল, বিগত তিন বছরে তা অনেকখানি বেড়েছে। দেশে এমন ধারণা জন্মেছে যে বর্তমান সরকারের মেয়াদ নির্বিঘ্নে শেষ হবে। বিদেশি শক্তিগুলোও আগাম নির্বাচনের বিষয়ে আর বলছে না। সবারই এখন লক্ষ্য পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করা। এই পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ সরকার মেয়াদ শেষে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিকল্পনা নিয়েই এগোচ্ছে।
সরকারি সূত্র জানায়, যে বিএনপি যেকোনো মূল্যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চায়। কারণ, দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে এই ধারণা হয়েছে যে আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে সরকার হটানো যাবে না। এ ছাড়া জেলা পরিষদ ও জাতীয় সংসদের উপনির্বাচন ছাড়া সব স্থানীয় নির্বাচনেই অংশ নিয়েছে বিএনপি। পরপর দুবার জাতীয় সংসদের নির্বাচনে অংশ না নিলে দলের নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাওয়ার জটিলতা তৈরি হবে।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তিন বছর পূর্তি আজ। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট নির্বাচনে অংশ নেয়নি। ফলে ১৫৪ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাংসদ হয়ে যান। সরকার বিরোধী পক্ষ, এমনকি সরকারের বিভিন্ন মহল ও বিদেশি শক্তিগুলোর মধ্যে আরেকটি নির্বাচনের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা ছিল।
কিন্তু ২০১৫ সালে নির্বাচনের প্রথম বর্ষপূর্তিতে বিএনপিকে মাঠে নামতে দেয়নি সরকার। এরপর টানা তিন মাস জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলন চলে দেশে। দশম সংসদ নির্বাচনের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি শান্তিপূর্ণই ছিল। এবারো সংঘাতের আশঙ্কা কম। সব মিলিয়ে আগাম বা মধ্যবর্তী নির্বাচনের আলোচনাটি রাজনীতি থেকে এখন অনেকটাই হারিয়ে গেছে।
বিএনপি বলছে, দলকে সংগঠিত করে ২০১৭ সালের শেষে বা ২০১৮ সালের শুরু থেকে কিছুটা আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তোলার চেষ্টায় আছে বিএনপি। তবে এই আন্দোলনের মূল লক্ষ্যই যতটা সম্ভব সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে চাপে রেখে সুষ্ঠু নির্বাচন আদায় করা।
তবে বিএনপির পরবর্তী পরিকল্পনা অনেকটাই দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে চলমান মামলার ওপর নির্ভর করছে। যদিও খালেদা জিয়া মামলা নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত নন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন,শেখ হাসিনা নিজেই বলেছিলেন, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার জন্য একটি নির্বাচন করছেন। পরবর্তীকালে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আরেকটি নির্বাচন হবে। এখানেই তো সরকারের বৈধতার প্রশ্ন এসে গেছে। কিন্তু সরকার প্রতিশ্রুতি থেকে সরে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু জনগণ সেই বৈধতার নির্বাচনের প্রতীক্ষায় আছে, প্রত্যাশা করছে। ওই নির্বাচনের মাধ্যমে বৈধ সরকার ও সংসদ হবে।
বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘বিএনপি ১৩ দফা দাবি পেশ করেছে। এর ওপর ভিত্তি করেই নির্বাচনে অংশ নেবে।’ ভবিষ্যতে আন্দোলনের সম্ভাবনা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা ইতিবাচক ও নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি করছি। ১৩ দফা দাবি পেশ করে আলোচনার পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছি। জনগণ যদি দেখে, তাদের ইচ্ছার প্রতিফলন সরকার করছে না, তখন সে এর প্রতিবাদ করবে। বিএনপিও জনগণের পাশে থেকে ভূমিকা পালন করবে।’
সরকারের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে,নির্বাচন কমিশন গঠন,নির্বাচনে বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে আসা এবং রাজনৈতিক পরিবেশ স্বাভাবিক করার বিষয়ে সরকার মাঝেমধ্যেই নমনীয়তা দেখাবে। তবে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের মামলার মতো প্রশাসনিক বিষয়গুলোতে ছাড় দেওয়া হবে না। খালেদা জিয়াকে আইনি লড়াই করার যথেষ্ট সুযোগ দেওয়া হবে। যাতে বিএনপি বলতে না পারে যে সরকার জুলুম করেছে। খালেদা জিয়া আইনি লড়াইয়ে হেরে কারাগারে গেলে বিএনপি ভেঙে যেতে পারে। আর বিএনপি ভাঙলে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আর বাধা থাকছে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, দেশে আওয়ামী-বিরোধী প্রবল একটি শক্তি রয়েছে—এটা মাথায় নিয়ে পরিকল্পনা করছেন তারা। এই আওয়ামী-বিরোধী পক্ষগুলো যাতে এক শিবিরে ভিড়তে না পারে, সেটা নিশ্চিত করার চেষ্টা সরকার ও আওয়ামী লীগের রয়েছে। এ ক্ষেত্রে জামায়াত যদি বিএনপির সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখে, তাহলে তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ বন্ধ রাখা হবে। বিকল্পধারা,এলডিপিসহ অন্য শক্তিগুলোর সঙ্গেও দূরত্ব বাড়াবে না আওয়ামী লীগ।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ফের ২ দিন রিমান্ডে আনিসুল হক
রাজধানীর বাড্ডা থানার স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা আল-আমিন হত্যা মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন
আমির খসরু: নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “গণতন্ত্রেরবিস্তারিত পড়ুন
জামিন পেলেন সাবেক বিচারপতি মানিক
অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের সময় সিলেটের কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত এলাকা থেকেবিস্তারিত পড়ুন