নরসিংদীর শিবপুর উপজেলায় চরম হুমকির মুখে মানুষের জীবন !
নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় চলছে অবৈধ বালু উত্তোলন। এতে দেবে যাচ্ছে অনেক ঘরবাড়ি। অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের যোগসাজশে এই বালু উত্তোলন চলছে।
অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে উপজেলার দুলালপুর, মাছিমপুরসহ তিন ইউনিয়নের প্রায় ১০টি এলাকার মানুষ। এরই মধ্যে ভূগর্ভে দেবে গেছে মির্জাকান্দি ইউনিয়নের ঋষিপাড়া ও দুলালপুরের কমবেশি আটটি বাড়ি। বিলীন হয়ে গেছে বিস্তীর্ণ এলাকার গাছপালা ও কয়েক একর ফসলি জমি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পুলিশ ও স্থানীয় নেতাদের হাত করে রাতের অন্ধকারে চলছে বালু উত্তোলন। অবৈধ ব্যবসায় ফুলেফেঁপে উঠছেন স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ দলটির নেতাকর্মীরা। উপজেলা প্রশাসন বালু উত্তোলন বন্ধের নির্দেশ দিলেও তা মানছে না এই স্বার্থান্বেষী মহল।
স্থানীয় কয়েকজন অভিযোগ করেন, বালু উত্তোলনের টাকা দিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ অফিসের ভাড়া মেটানো হচ্ছে। তবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করেছেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হারুন আর রশিদ বলেন, ‘বালু উত্তোলনের টাকা দিয়ে আওয়ামী লীগ অফিসের ভাড়া দেওয়া হয়, এটা ডাহা মিথ্যা। আওয়ামী লীগের সুনাম নষ্ট করার জন্য ষড়যন্ত্রকারীরা এসব কথা বলছে।’
‘এ এলাকায় বালু উত্তোলন আমরা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দিয়েছি। তবে রাতের অন্ধকারে যদি কেউ বালু বিক্রির চেষ্টা করে, তাহলে এলাকার স্বার্থে পুলিশ নিয়ে আমরা অবশ্যই বিচারের ব্যবস্থা করব।’
বালু উত্তোলন থেকে আর্থিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম রাখিল বলেন, ‘এখানে কোনো বালু উত্তোলনই হয় না। তাই আর্থিক সুবিধা নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। এটা রাজনৈতিক শত্রুদের বক্তব্য বলে আমি মনে করি।’
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, শিবপুর উপজেলার দুলালপুর ইউনিয়নের চরুবুদ্ধি এলাকায় আবাদি জমি থেকে বালু উত্তোলনের পর বিক্রি করেন রফিকুল ইসলাম সুরুজ। কোনো ধরনের অনুমোদন ছাড়াই তিনি অবৈধভাবে এই বালু উত্তোলন করে আসছেন।
সুরুজ শ্যালো ইঞ্জিনচালিত বোমা মেশিন দিয়ে মাটির অনেক গভীর থেকে মোটা বালু উত্তোলন করেন। ফলে সেখানে গভীর পুকুরের সৃষ্টি হয়। এতে বাড়িঘর দেবে গিয়ে এলাকার সাধারণ মানুষ বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
বালু উত্তোলনের ফলে সম্প্রতি লাল মিয়া ও মোতালিবের বাড়ির প্রায় ৯ শতাংশ জায়গা দেবে যায়। সে সময় আতঙ্কে বাড়িঘর ছেড়ে বের হয়ে আসেন স্থানীয় লোকজন। বাড়ি দেবে যাওয়ার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত এসব ব্যক্তি।
ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির মালিক লাল মিয়া বলেন, বালুদস্যু সুরুজকে বারবার বালু তুলতে নিষেধ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, বালু তুললে বাড়ি দেবে যাবে। কিন্তু সে কোনো কথাই শোনেনি। সুরুজ মিয়ার বালু তোলার কারণেই বাড়ি দেবে গেছে।
ক্ষতিগ্রস্ত অপর বাড়ির মালিক মোতালিব মিয়া বলেন, ৩০০ বছরের বেশি সময় ধরে তাঁরা বাড়িতে বসবাস করছেন। সুরুজ বালু তোলার ফলে এর আগে সাতটি বাড়ি দেবে যায়। কিন্তু তার ভয়ে কেউ কিছু বলতে সাহস পায় না।
মোতালিব আরো বলেন, অবৈধভাবে বালু তোলার কারণে নিজের ভিটেমাটি ছেড়ে চলে যেতে হবে, এমনটা মানা যায় না। তাই প্রশাসনের কাছে তাঁর অনুরোধ, এর যেন একটা ব্যবস্থা নেয়।
শিবপুর উপজেলার চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম মৃধা বলেন, ব্যাপকভাবে বালু উত্তোলনের ফলে দুলালপুর, মাছিমপুর ও পার্শ্ববর্তী চরসিন্দুর এলাকা দেবে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সে কারণে ইউএনওর নেতৃত্বে বালু উত্তোলন পুরোপুরি বন্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু কিছু স্বার্থবাজ রাজনৈতিক নেতা ও অসৎ পুলিশের প্রশ্রয়ে নতুন উদ্যমে বালু উত্তোলন শুরু হয়। এ বিপর্যয় থেকে শিবপুরবাসীকে রক্ষা করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে।
এদিকে, ‘বালুদস্যু’ সুরুজ মিয়ার সঙ্গে মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে তাঁর মুঠোফোনটি রিসিভ হয়নি।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত চলায় এমবাপ্পেকে বিজ্ঞাপন থেকে সরাল রিয়াল
আর্থিক দ্বন্দ্বের মধ্যে পিএসজি ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে আসার পর একেরবিস্তারিত পড়ুন
ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর পদ হারালেন গাজীপুর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি
ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর সাংগঠনিক শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে গাজীপুর জেলা ছাত্রদলেরবিস্তারিত পড়ুন
ঢাকা উত্তর সিটির সাবেক মেয়র আতিকুল গ্রেপ্তার
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামকে রাজধানীরবিস্তারিত পড়ুন