নরসিংদী জেলা পরিষদে ‘মন্ত্রী-এমপির লড়াই’
নরসিংদী জেলা পরিষদ নির্বাচনে ৯৯৩ ভোটারই আছেন এখন ফুরফুরে আমেজে! জেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রার্থীদের কাছে তাঁদের গুরুত্ব এখন আকাশসম। প্রতিদিনই ৯৯৩ জন ভোটারের দরজার কড়া নাড়ছেন প্রার্থীরা।
জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আসাদুজ্জামান। আনারস প্রতীক নিয়ে তিনি নির্বাচন করছেন। তিনি জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক। অন্যদিকে কাপ-পিরিচ প্রতীক নিয়ে একই পদে লড়ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন ভূঞা।
নরসিংদী-৫ (রায়পুরা) আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু আসাদুজ্জামানকে সমর্থন দিয়েছেন। অন্যদিকে আবদুল মতিন ভূঁইয়াকে সমর্থন দিয়েছেন নরসিংদী-১ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম হিরু। ফলে দৃশ্যত জেলা পরিষদ নির্বাচন হলেও এই দুই নেতাকে নিয়ে জোর আলোচনা চলছে।
১৮৮৪ সালে নরসিংদী জেলা পরিষদ প্রতিষ্ঠিত হয়। ৭১টি ইউনিয়ন পরিষদ, ছয়টি পৌরসভা ও ছয়টি উপজেলা পরিষদ নিয়ে নরসিংদীর জেলা পরিষদ গঠিত। এখানে মোট ভোটার ৯৯৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৭৬৩ জন আর নারী ভোটার ২৩০ জন। আগামী ২৮ ডিসেম্বরের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ১৩২ বছর পর প্রথমবারের মতো নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও কাউন্সিলর পেতে যাচ্ছে জেলা পরিষদ। ভোট হবে ১৫টি কেন্দ্রে। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দুজন, ১৫টি সদস্য পদের বিপরীতে ৫৪ জন ও পাঁচটি সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ১৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
দলীয় সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের আগের শাসনামলে রাজিউদ্দিন আহমেদ শুধু মন্ত্রী ছিলেন না, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যও ছিলেন। এই জেলায় তিনি ছাড়া আর কোনো সংসদ সদস্য মন্ত্রিত্ব পাননি। সব মিলিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের একক নিয়ন্ত্রণ ছিল তাঁর হাতে। ওই সময় থেকে আসাদুজ্জামান ছিলেন রাজিউদ্দিনের অনুগত। সাবেক এই মন্ত্রীর অনুগত হওয়ার সুবাদে আসাদুজ্জামানকে জেলা পরিষদের প্রশাসকের পদে বসানো হয়। এবার ক্ষমতায় আসার পর রাজিউদ্দিন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও মন্ত্রিত্ব ও দলের সভাপতিমণ্ডলীর পদ হারান।
এবার জেলার সংসদ সদস্যদের মধ্যে একমাত্র মন্ত্রী হন নজরুল ইসলাম। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদটিও তাঁর হাতে। জেলার নেতৃত্ব নিয়ে ওই দুই নেতার মধ্যে রয়েছে চরম দ্বন্দ্ব। স্থানীয় রাজনীতির এমন হিসাব-নিকাশের মধ্যে জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে আসাদুজ্জামান জেলা আওয়ামী লীগের পছন্দের তালিকায় ছিলেন না। শেষে পর্যন্ত নানা বিবেচনায় কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক আসাদুজ্জামানই দলীয় মনোনয়ন পান। মন্ত্রী নজরুল ইসলাম ও তাঁর পক্ষের নেতাকর্মীরা আসাদুজ্জামানকে মেনে নিতে পারেননি। শেষে জেলা সাধারণ সম্পাদক মতিন ভূইয়াকে প্রার্থী করানো হয়।
জ্যেষ্ঠ ও প্রভাবশালী দুই নেতার অবস্থান স্পষ্ট হওয়ার পর জেলার অন্য সংসদ সদস্যরাও কোনো না কোনো পক্ষভুক্ত হয়ে পড়েন। এর মধ্যে নরসিংদী-৪ (বেলাব-মনোহরদী) আসনের সংসদ সদস্য নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন আওয়ামী লীগের জেলা সাধারণ সম্পাদক মতিন ভূঞার পক্ষ নেন। আবার আসাদুজ্জামানের পক্ষে রয়েছেন নরসিংদী-৩ (শিবপুর) আসনের সাংসদ সিরাজুল ইসলাম মোল্লা। তবে নরসিংদী-২ (পলাশ) আসনের সাংসদ কামরুল আশরাফ খানের অবস্থান এখনো অস্পষ্ট।
আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থী আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমি দলীয় সমর্থন পাওয়া প্রার্থী। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পছন্দের একজন হিসেবে সমর্থন পেয়েছি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর চাওয়া আমলে নেননি মন্ত্রী নজরুল ইসলাম। নিজের স্বার্থে তিনি আমার বিরুদ্ধে দলের সাধারণ সম্পাদককে প্রার্থী করেছেন। এখন ওয়াজ ও মিলাদ মাহফিলের নামে কৌশলে এলাকায় এসে প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন।’ এতে আচরণবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
তবে এই ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মন্ত্রী নজরুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনে জয় পেতে প্রধানমন্ত্রীর নাম ব্যবহার অপকৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজেও চান নির্বাচন হোক। যেহেতু তিনি নির্বাচন চেয়েছেন সেই কারণেই মতিন ভূঞা প্রার্থী থেকে গেছেন। তা না হলে একই দলের দুই প্রার্থী হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আচরণবিধি লঙ্ঘন করার অভিযোগও তিনি অস্বীকার করেন।
বিদ্রোহী প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন ভূঞা নিজেকে বিদ্রোহী প্রার্থী ভাবতে নারাজ। তিনি বলেন, আসাদুজ্জাসান দলীয় সমর্থন পেলেও পরে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। এরপর দলের সবার জন্য নির্বাচন উন্মুক্ত হয়ে যায়।
প্রতিপক্ষ প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে মতিন ভূঞা বলেন, আসাদুজ্জামান প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় বিশেষ একটি উপজেলাবাসী উপকৃত হয়েছে। বিষয়টি স্পষ্ট করে বলেন, বরাদ্দের ৯০ ভাগ ব্যয় করেছেন তিনি রায়পুরা উপজেলায়। কারণ ওই উপজেলার সংসদ সদস্য হলেন রাজিউদ্দিন আহমেদ।
সাবেক মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আসাদুজ্জামান দল ও প্রধানমন্ত্রীর প্রার্থী। আওয়ামী লীগের ত্যাগী ও প্রকৃত নেতাকর্মীরা দলীয় সভানেত্রীর মনোনীত প্রার্থীকে বিজয়ী করতে মাঠে নেমেছেন। সেই কারণে আমি দলের প্রার্থীর সঙ্গে আছি। সেই হিসেবে মতিন ভূঞা দলটির বিদ্রোহী।’ বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নেওয়া নেতাদের বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
নরসিংদীর লটকন দেশের চাহিদা মিটিয়ে এখন রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে
নরসিংদীর শিবপুর উপজেলায় এ বছর ১৬ শতক হেক্টরে লটকন চাষবিস্তারিত পড়ুন
নরসিংদীতে ট্রাক-প্রাইভেট কার সংঘর্ষ, ওসিসহ নিহত ২
নরসিংদীতে ট্রাক ও প্রাইভেট কার মুখোমুখি সংঘর্ষে হাইওয়ে থানার ওসিসহবিস্তারিত পড়ুন
ছাগল নিয়ে ঝগড়ায় ঘুষিতে প্রতিবেশীর মৃত্যু
ছাগল নিয়ে ঝগড়ার এক পর্যায়ে ঘুষিতে এক প্রতিবেশীর মৃত্যু হয়েছে।বিস্তারিত পড়ুন