নাজিমুদ্দিনের খুনে ইমরানের সন্দেহের তীর ওলামা লীগের দিকে
গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার বলেছেন, সোহাগী জাহান তনুকে ধর্ষণের পর হত্যার প্রতিবাদে যখন সারাদেশের মানুষ সোচ্চার, তখনই নাজিমুদ্দিন সামাদের হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে আগের খুন-ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হলো।
হত্যাকাণ্ডে ওলামা লীগের প্রতিও সন্দেহের তীর ছুড়ে দেন ইমরান এইচ সরকার।
সিলেটের গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নাজিমুদ্দিন সামাদ হত্যার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) শাহবাগে বিক্ষোভ সমাবেশে এ কথা বলেন তিনি।
বুধবার (৬ এপ্রিল) রাত সাড়ে নয়টায় রাজধানীর সূত্রাপুরে কুপিয়ে এবং গুলি করে হত্যা করা হয় নাজিমকে।
এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টা থেকে তাৎক্ষণিক এই কর্মসূচি পালন করে গণজাগরণ মঞ্চ।
মঞ্চের কর্মী সনাতন উল্লাসের সঞ্চালনায় সমাবেশে সহযোদ্ধার মৃত্যুতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন বক্তারা। একের পর এক হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়ার ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।
সমাবেশে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার বলেন, ‘নাজিমুদ্দিন সামাদ সিলেটে গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। যে স্বপ্ন নিয়ে কিছুদিন আগে ঢাকায় এসেছিলেন, চাপাতির আঘাতে ও পিস্তলের গুলিতে সে স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়েছে। শুধু সামাদই নন, কিছুদিন আগে খুন হয়েছেন মসজিদের মুয়াজ্জিন, ইমাম, মন্দিরের পুরোহিত, গির্জার যাজক। একটির পর একটি ঘটনা ঘটে চলছে।’ ‘সোহাগী জাহান তনুকে ধর্ষণের পর হত্যার প্রতিবাদে যখন সারাদেশের মানুষ সোচ্চার, তখনই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে আগের খুন-ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হলো,’ বলেন ইমরান।’
তিনি বলেন, ‘একের পর এক ঘটনার বিচার না হওয়ায় অপরাধীরা এত বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে, ধর্ষণের বিরুদ্ধে সারাদেশে যখন আন্দোলন চলছে, সেই সময়েও বাসের ভেতরে ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। অপরাধীদের ধরার কোনো চেষ্টা না করে প্রশাসন বক্তব্য বিবৃতি দিয়েই ক্ষান্ত হয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ‘গত বছরেই পাঁচ ব্লগার-লেখক খুন থেকে শুরু করে রিজার্ভ লুট, ধর্ষণ করে হত্যা কোনো ঘটনারই বিচার হয়নি। কুমিল্লায় তনুর ভাইয়ের বন্ধু সোহাগকে অপহরণ করা হলো। প্রতিটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার নাজিমুদ্দিন সামাদকে খুন করা হলো। অপরাধীদের ধরা হচ্ছে না, যারা অপরাধের প্রতিবাদ করছে, তাদেরই খুন করা হচ্ছে।’
প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার কথা উল্লেখ করে ইমরান বলেন, ‘অপরাধ ধামাচাপা দেওয়ার এক নতুন মডেল তৈরি হয়েছে। প্রতিটি খুনের পর বলা হচ্ছে, অপরাধীরা আল্লাহু আকবার স্লোগান দিয়ে পালিয়ে গেছে। একটা সুনির্দিষ্ট গোষ্ঠীর দিকে দেখিয়ে আসল ঘটনা আড়াল করা হচ্ছে। জনগণের মধ্যে বিভেদ তৈরি করা হচ্ছে। ধর্মীয় স্লোগানের কথা তুলে দুটি পক্ষ তৈরি করা হচ্ছে, একপক্ষ আরেক পক্ষকে দোষারোপে ব্যস্ত থাকছে। আর এই ফাঁকে সরকারি লোকজন ব্যস্ত রিজার্ভ লুটে। অপরাধীদের আর বিচার হচ্ছে না।’
‘দেশে যে শাসন চলছে, তা কোনোভাবেই গণমানুষের আকাঙ্ক্ষার শাসন নয়। প্রশাসন যদি দাবি করে থাকে যে, জঙ্গীগোষ্ঠী এই খুন করেছে, তাহলে খুনিদের গ্রেফতার করে তারপর তাদের প্রমাণ করতে হবে কারা জড়িত। অপরাধীদের গ্রেফতারের কোনো চেষ্টা না করে বার বার একই স্ক্রিপ্ট পড়ে পার পেয়ে যাবেন, আমরা তা মেনে নেব না,’ বলেন তিনি।
ইমরান এইচ সরকার বলেন, একটার পর একটা ঘটনা ঘটছে। আর আপনারা এক দিন আনসারুল্লাহ, এক দিন অমুক, এক দিন তমুককে দায়ী করে ফাঁকা বুলি দিচ্ছেন, অপরাধীদের ধরায় কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। তাই আমাদের সন্দেহ জাগে, এই হত্যার পেছনে এমন কেউ আছে। যে কারণে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কালো চশমা পরে আছেন। তাই নাজিমুদ্দিন হত্যার দায় সরকারের উপরেই বর্তায়।
ওলামা লীগের বিরুদ্ধে এবং সবরকম অন্যায়ের প্রতিবাদে সোচ্চার ছিলেন নাজিমুদ্দিন। সে প্রসঙ্গে ইমরান এইচ সরকার বলেন, ‘শুধু ব্লগার-লেখক নয়, নানা ধরনের মানুষ খুন হচ্ছেন। নাজিমুদ্দিন সরকারি দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। তারপরও শুধু অন্যায়ের সঙ্গে আপোস না করায়, ওলামা লীগের বিরুদ্ধে বলায় তাকে খুন হতে হলো। তাই আমাদের সন্দেহ হয়, ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ নাকি ওলামা লীগ!’
আওয়ামী লীগ অন্যদের ধর্ম নিয়ে রাজনীতির বিরোধিতা করে। আমাদের প্রশ্ন, ওলামা লীগ তাহলে কী করছে? ওলামা লীগের বিরুদ্ধে কেন তারা কথা বলেন না? সরকার ধীরে ধীরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে ওলামা লীগের চেতনায় প্রবেশ করছে। নাজিমুদ্দিন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কথা বলতো, তারপরও রিজার্ভ লুট, তনু ধর্ষণ আর হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় তাকে খুন হতে হলো।
আজকে এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে, যারাই যেকোনো অন্যায়ের প্রতিবাদ করছে, তাদেরই টার্গেট করা হচ্ছে, খুন করা হচ্ছে। জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে অপরাধীদের এই সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে রিজার্ভ লুট, ধর্ষণ নয়, অন্যায়ের প্রতিবাদ করাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। যত বাধাই আসুক, আমাদের মাথা উঁচু করে অন্যায়ের প্রতিবাদ করে যেতে হবে, যেমনটা করেছিলেন নাজিমুদ্দিন।
বিভিন্ন অন্যায় ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানান তিনি, ‘একটি ঘটনা ঘটিয়ে আরেকটি ঘটনা ধামচাপা দেওয়া হচ্ছে। নাজিমুদ্দিনকে খুন করে রিজার্ভ লুট, তনু ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডকে চাপা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। এই ধামাচাপার অবসান ঘটাতে হবে। জনগণকে সচেতন থাকতে হবে, কোনোকিছুই ভুলে গেলে চলবে না। আমি সবাইকে আহ্বান জানাই, ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই ধামাচাপার সংস্কৃতির সমূলে বিনাশ করুন।
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন— মারুফ রসূল, সঙ্গীতা ইমাম, বাকি বিল্লাহ, শম্পা বসু, ভাস্কর রাসা প্রমুখ।
বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে গণজাগরণ মঞ্চের মশাল মিছিল শাহবাগ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ঘুরে আবার শাহবাগে ফিরে আসে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
টসে জিতে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ
দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে টসে জিতে স্বাগতিক ওয়েস্টবিস্তারিত পড়ুন
রাস্তা আটকে যমুনা ফিউচার পার্কের ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভ
যমুনা ফিউচার পার্কে মোবাইলের দোকানে চুরির প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভবিস্তারিত পড়ুন
যে ৫ দেশে যাওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশিদের জন্য সতর্কতা
থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, লাওস, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ায় যাওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশি নাগরিকদেরবিস্তারিত পড়ুন