নাজিমের হত্যাকারীরা বন্ধুবেশে আশেপাশেই থাকতো
অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আইন বিভাগের সান্ধ্য কালিন ব্যাচের ছাত্র নাজিম উদ্দিন সামাদের হত্যাকারীরা তার বন্ধুবেশে আশেপাশে থাকতো বলে ধারণা তদন্তকারী কর্মকর্তার। আর প্রত্যাক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, কিলিং মিশনে মাত্র ৪০ সেকেন্ড সময় নেয় হত্যাকারীরা।
গত বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে পুরান ঢাকার ঋষিকেশ দাস লেনে শত শত মানুষের সামনেই লোমহর্ষক এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হলেও সঙ্গে থাকা ‘বন্ধু’ ও ক্লাসমেট সোহেলসহ কেউই এগিয়ে আসেননি।
ছায়াতদন্তকারী কর্মকর্তাদের ধারণা, নাজিমের সঙ্গে বন্ধুবেশে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বা মেসেই অবস্থান করেছিল খুনিদের কেউ। তাদের কেউ কেউ আগে থেকেই পরিচিতও থাকতে পারে। তারা সরাসরি কিলিংয়ে অংশ না নিলেও ঘটনাস্থল কিংবা আশপাশেই ছিল।
পুলিশ বলছে, উপস্থিত জনতা সাহস করে এগিয়ে এলে কিলিং মিশনে থাকা ৫ জনকেই ধরে ফেলা সম্ভব ছিল। এদিকে শুক্রবার সিলেটের বিয়ানীবাজারের টুকাভরাউট গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় সিলেটে গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক ও সিলেট জেলা বঙ্গবন্ধু যুব পরিষদের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন সামাদকে।
এ ঘটনায় মামলা করতে পরিবার রাজি না হওয়ায় পরে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার রাতে মামলা করে পুলিশ। মামলার তদন্তকারী সূত্রাপুর থানার পরিদর্শক তদন্ত সমীর চন্দ্র সূত্রধর শুক্রবার বলেন, নাজিম ঢাকায় নতুন এসেছে।
তার ফেসবুক পাতা পর্যবেক্ষণ করে ধর্মীয় উসকানি দেয়ার মতো কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি যে কারণে উগ্রপন্থীরা তাকে টার্গেট করতে পারে। প্রাথমিকভাবে নাজিমের কয়েক বন্ধুকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তাদের বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। ঘটনাস্থলে প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে কিলিং মিশনে অংশ নেয়া ব্যক্তিদের শারীরিক বর্ণনা ও ঘটনার বিবরণ নেয়া হয়েছে। নাজিমের মোবাইল ফোনের কললিস্ট এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। কললিস্ট পাওয়া গেলে সেখান থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়ার আশা করছেন তিনি।
সমীর চন্দ্র আরও জানান, শিগগিরই তিনি সিলেটে গিয়ে নাজিমের বিষয়ে খোঁজখবর নেবেন। এদিকে এ হত্যার ঘটনায় নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়েছে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, পেন, অ্যামনেস্টিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে রোববার থেকে ক্যাম্পাসে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের ওয়ারী জোনের উপ-কমিশনার সৈয়দ নূরুল হক বলেন, এক মিনিটেরও কম সময়ের মধ্যে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। পূর্ব অভিজ্ঞতা ও পূর্বপরিকল্পনা ছাড়া এভাবে হত্যাকাণ্ড ঘটানো সম্ভব নয়। হত্যার ধরন দেখে মনে হচ্ছে জেএমবি (জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ) ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি) এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
আমরা সবগুলো বিষয় সামনে রেখে তদন্ত অব্যাহত রেখেছি। তিনি আরও বলেন, কিলিং মিশনে ৪-৫ জন যুবক অংশ নেয়।
সূত্রাপুর থানার ওসি তপন চন্দ্র সাহা বলেন, পুলিশের পাশাপাশি ডিবি, র্যাব ও অন্যান্য সংস্থা বিষয়টি তদন্তে সহযোগিতা করছে। তারা নাজিমের বন্ধু সোহেলকেও নজরদারিকে রেখেছেন।
তাকে কোথাও না যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। ঘটনার ছায়াতদন্ত করছে এলিট ফোর্স র্যাব, মহানগর অপরাধ বিভাগ ও গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি), কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটসহ একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। তদন্তকারী একটি সূত্র জানায়, নাজিম হত্যাকাণ্ডের আগে কিলিং মিশনে অংশ নেয়া ব্যক্তিরা নিজেদের মধ্যে প্রযুক্তির সহায়তায় বিশেষ অ্যাপস ব্যবহার করে আলোচনা করে। তারা নাজিমকে অনেকদিন থেকে পর্যবেক্ষণে রাখে।
রাজধানীর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে বসে এ হত্যার পরিকল্পনা করেছিল বলেও ধারণা করা হচ্ছে। প্রযুক্তিগত তদন্তের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজন ৫ জনকে শনাক্ত করার দাবি করেছে সূত্রটি। ওই ৫ জন গোয়েন্দা জালে আছে এবং শিগগিরই তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে বলে সূত্রটি জানায়।
ছায়াতদন্তকারী সংস্থা র্যাব-১০ এর অধিনায়ক অ্যাডিশনাল ডিআইজি জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর বলেন, নাজিম ঢাকায় এসেছে মাত্র তিন মাস আগে। তার উগ্রপন্থীদের টার্গেট হওয়ার বিষয়টি এখনও নিশ্চিত নয়। আমরা বেশ কয়েকটি পয়েন্ট নিয়ে এগোচ্ছি। পাশাপাশি পুলিশও কাজ করছে। আশা করছি রহস্য উন্মোচন করতে পারব।
পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারের সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে দেড়শ’ গজ দূরে ৩৬ ঋষিকেশ দাস লেনের সুবর্ণা টেইলার্সের সামনে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয় নাজিমকে।
এ সময় এসআর হেয়ার ড্রেসার, রাস্তার বিপরীত পাশের হাবিব ফার্মেসি ও মোহনচাঁদ সুইটসের দোকানটিও খোলা ছিল। উপস্থিত ছিল শত শত মানুষ। সুবর্ণা টেইলার্সের কাচের আয়না, সিঁড়িতে এখনও রক্তের দাগ। ওই সময় দোকানে ছিলেন কর্মচারী শ্যামল দাস।
তিনি জানান, এক যুবক আরেক যুবককে সামনে পেয়েই মাথায় চাপাতি দিয়ে একটি কোপ দেয়। এতে ওই যুবক পড়ে যায়। এরপর আরও কয়েকটি কোপ দেয়। দোকান থেকে বেরোতে গেলেই গুলির শব্দ। ভয়ে দোকানেই বসে পড়েন তিনি।
এসআর হেয়ার ড্রেসার সেলুনের কর্মী খোরশেদ আলম জানান, কিছু বুঝে ওঠার আগেই ৩০ থেকে ৪০ সেকেন্ডের মধ্যেই সবকিছু ঘটে গেল। হত্যাকারীদের সবার বয়স ২৫ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। প্রত্যক্ষদর্শী যুবক খোকন জানান, তিনি ঘটনার সময় হাবিব ফার্মেসির সামনে ছিলেন। ৩০-৪০ সেকেন্ডের মধ্যেই খুন করে ধোলাইখালের দিকে চলে যায় খুনিরা। গুলির ভয় দেখানোর কারণে কেউ সামনে এগোতে সাহস পায়নি বলে জানান খোকন।
ঘটনার সময় নাজিমের বন্ধু সোহেল একসঙ্গেই হেঁটে গেণ্ডারিয়ার বাসায় যাচ্ছিলেন। ঘটনার পর গা-ঢাকা দিয়েছিলেন। পরে পুলিশ তাকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। সোহেল জানান, সম্ভবত হেঁটে আসার সময় তাদের কেউ অনুসরণ করছিল। ইকরামপুর মোড়ে যেতেই এক যুবক চাপাতি নিয়ে নাজিম উদ্দিনকে হঠাৎ করেই কোপ দেয়। তিনি বাঁচানোর চেষ্টা করলে ৩-৪ জন তাকে বাধা দেয়।
তাদের একজন অস্ত্র নিয়ে তাড়া করে। এ সময় তিনি আতংকে চলে যান। ঘটনাটি তিনি আরও কয়েক বন্ধুকে মোবাইল ফোনে মেসেজ করে জানান।
ঘটনাস্থলের আশপাশে কোনো সিসি ক্যামেরা ছিল না। তবে সোহরাওয়ার্দী কলেজের সামনের স্বপ্ন ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে একটি সিটি ক্যামেরা রয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা সমীর চন্দ্র সূত্রধর জানান, তারা ফুটেজ সংগ্রহ করে দেখবেন।
তিনি আরও বলেন, একরামপুরের এই মোড় থেকে তিন দিকে যাওয়ার পথ থাকায় দুর্বৃত্তরা ওই স্থানটি বেছে নেয়। নাজিম গেণ্ডারিয়ার রজনী চৌধুরী ঘোষ লেনের যে বাসায় থাকতেন সেখানেও গিয়েছে পুলিশ। জবির আইন বিভাগে অধ্যয়নরত সোহেলও নাজিমের সঙ্গে একই কক্ষে একই বেডে থাকতেন।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
রবিবার যেসব এলাকায় ১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না
গ্যাস পাইপলাইনের মেরামত কাজ ও জরুরি স্থানান্তরের জন্য রবিবার দেশেরবিস্তারিত পড়ুন
জেমিনি চ্যাটবটে যুক্ত হলো মেমোরি, যে সুবিধা পাওয়া যাবে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চ্যাটবট জেমিনিতে নতুন সুবিধা যুক্ত করেছে গুগল।বিস্তারিত পড়ুন
ঢাকা সিটি কলেজে ক্লাস বন্ধ রাখা নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত
ঢাকা কলেজের বাস ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত বুধবার সংঘর্ষেবিস্তারিত পড়ুন