সোমবার, নভেম্বর ২৫, ২০২৪

আমাদের কণ্ঠস্বর

প্রধান ম্যেনু

ন্যাশনাল ক্রাইম নিউজ পোর্টাল

নাফ নদীর দুই তীরেই রোহিঙ্গাদের কান্না

জাতিসংঘের মতে, বিশ্বের অন্যতম নিপীড়িত এক জনগোষ্ঠী মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের মুসলিম রোহিঙ্গা। দেশটির সেনাবাহিনীর হাতে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশ ছাড়ছেন তারা। দিনের পর দিন খেয়ে না খেয়ে খোলা আকাশের নিচে থাকতে হচ্ছে তাদের। হন্যে হয়ে এদিক-সেদিক ঘুরছেন একটু আশ্রয়ের আশায়। ঢুকে পড়ছেন পার্শ্ববর্তী দেশ বাংলাদেশেও।

নির্যাতিত এই জাতিগোষ্ঠীর খবর জানাতে মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী এলাকা দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে আছেন নিজস্ব প্রতিবেদক শাহেদ শফিক। তার ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ থাকছে পঞ্চম পর্ব।

সুফিয়া বেগম। মিয়ানমারের পোহাখালী গ্রামে কাটিয়েছেন জীবনের ৮০টি বছর। তার ঘরে ৮ সন্তান। সন্তানদের নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল তার। ভেবেছিলেন সন্তানরা সংসারের হাল ধরলে তার সব কষ্ট লাঘব হবে। কিন্তু মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও দেশটির মঘ জাতি সুফিয়া বেগমের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিয়েছি। সংসারের হাল ধরাতো দূরে থাক বরং সন্তানদের মৃত্যু দেখতে হয়েছে তার জীবদ্দশাতে, তার চোখের সামনে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তার সন্তানদেরকে জবাই করে হত্যা করেছে। এই দুঃসহ স্মৃতি কিছুতেই ভুলতে পারছেন না তিনি।

বৃহস্পতিবার ( ০১ নভেম্বর) উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এই প্রতিবেদককে এভাবে বলতে থাকেন পোহাখালী গ্রামে তার দুর্বিষহ কষ্টের কথা। চোখের পানিতে ভেসে যায় সুফিয়া বেগমের মুখ। ভারি হয়ে উঠে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাতাস।

সুফিয়া বেগম বলেন, ‘গুলি মারি মারি পালাদ্দে। গরকানও পুড়ি দিয়েদ্দে। মোর চাওয়ালোগল এগগাও নাই। মারি পালাইদ্দে। ইনছান অইলে বুঝিবি তুই। ও বাজিওগল মুই ক্যান কত্তুম। ক্যান করি গুলি মাইল্লেরে পুত। গলায় চুরি দিলোরে …। ও আল্লাহ মোর পোলাইনোগলরে এইনাদাও। (গুলি মেরে পালাচ্ছে। ঘড়ও পুড়িয়ে দিয়েছে। আমার একটা ছেলেও আর নেই। মেরে ফেলেছে। মানুষ হলে আমার কষ্ট তুই বুঝতি। আমি কি করবো? কেন গুলি করলো ওরা। গলায় ছুরি মারলো।)

কান্নাজড়িত কণ্ঠে সুফিয়া বেগম জানান, গত ৯ নভেম্বর মিয়ানমার সেনাবাহিনী হঠাৎ হেলিকপ্টার দিয়ে পেট্রল ঢেলে গ্রামের সব ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিতে থাকে। আগের দিন গ্রামের স্কুলগুলোতে এসে অবস্থান নেয় সেনারা। এরপর আকাশ এবং স্থলপথে একযোগে অভিযান করে তারা। দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে গ্রামের পর গ্রাম। ভয়ে দিকবিদিক ছুটোছুটি করতে থাকেন নারী-পুরুষ ও শিশুরা। অন্য সবার মতো তিনিও পালানোর চেষ্টা করলে সেনারা তাকে কোমরে লাথি মেরে ফেলে দেয়। এরপর ঘর থেকে ছেলে মোহাম্মদ, রেজোয়ান, মনহা, আইজিদা ও পুত্রবধূ রোকেয়াকে ধরে নিয়ে ধান ক্ষেতে জড়ো করে সেনাবাহিনী। সবার সামনে রোকেয়াকে ধর্ষণ করে সেনারা। পরে তার ছেলেদেরকে চোখ বেঁধে জবাই করে হত্যা করে।

শুধু সুফিয়া বেগম নয়, আমাদের এই প্রতিবেদককে দেখতে পয়ে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা শতশত নির্যাতিত নারী জড়ো হন। বলতে থাকেন তাদের ওপর চালিয়ে যাওয়া রোমহর্ষক সব কাহিনী। নির্যাতনের সে সব দৃশ্য বর্ণনা করতে করতে হাউ মাউ করে কাঁদতে থাকেন তারা।

গত মঙ্গলবার (২৭ নভেম্বর) মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের পোহাখালী থেকে উখিয়ার অস্থায়ী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আসেন রেহানা বেগম। তিনি জানান, চোখের সামনেই জবাই করে হত্যা করা হয় তার স্বামীকে। পরদিন গভীর রাতে চার ভাই জামাল হোসেন, কামাল হোসেন, ফারুক, আবুল হোসেন ও চাচা সৈয়দ হোসেন এবং চাচাতো ভাই আইয়ুব আলীসহ গ্রামের অন্তত দেড়শ জন রোহিঙ্গা একটি ট্রলারে করে নাফ নদীর মাঝ পথে এলে স্পিডবোডে করে এসে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড ট্রলারটি ফুঁটো করে নদীতে ডুবিয়ে দেয়। তার সঙ্গে একটি কন্টেইনার থাকা পানিতে ভাসতে ভাসতে বহুদূর গিয়ে বাংলাদেশের সীমানায় পৌঁছেন। বাকীদের এখন পর্যন্ত আর কোনো খবর পাননি।

মিয়ানমার ও বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকা নাফ নদীর দুই তীরেই চলছে মিয়ানমারের নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের কান্না। তাদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে নদীর দু’পাড়ের আকাশ-বাতাস। থামছে না তাদের কান্না। স্বদেশে অসহনীয় নির্যাতন আর নিপীড়নের শিকার হয়ে বাস্তুহারা এসব রোহিঙ্গারা এখন দিন কাটাচ্ছেন খোলা আকাশের নিচে। জীবন রক্ষায় দেশটির আরাকান প্রদেশ থেকে পালাচ্ছে নিপীড়িত এই জাতি। অবৈধভাবে ঢুকে পড়ছেন বাংলাদেশেও।

স্থানীয় জেলে কিংবা বিজিবি সদস্যদের হাতে পায়ে ধরে কোনো ভাবেই নাফ নদী পার হলেই প্রথমে সেজদায় পড়েন রোহিঙ্গা মুসলিমরা। অন্তত কিছু না হোক, জীবন তো বাঁচবে। বাংলাদেশের জেলে গেলেও শান্তি এই নিপীড়িত জাতির। আমাদের সঙ্গে আলাপকালে এমনটাই জানিয়েছেন তারা।

বৃহস্পতিবার মিয়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকার টেকনাফ, নীলা, দমদমিয়া, হোয়াইক্যং, জাদিমুরা, নয়াপাড়া, খরাংখালী, শাহপরীর দ্বীপ এবং উখিয়ার বালুখালী, নাইক্ষ্যংছড়ির ঘংধুমরসহ বিভিন্ন এলাকা দিয়ে এখনো পালিয়ে আসছেন রোহিঙ্গারা। এসব এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শুধু পড়নের কাপড় ছাড়া কিছুই নেই তাদের সঙ্গে। সীমান্ত পার হয়েই আশ্রয় চান স্বজাতি অন্য রোহিঙ্গাদের কাছে। কেউ কেউ আশ্রয় দেন আবার কেউ কেউ দিতে পারেন না। কারণ ক্যাম্পগুলোতে পা রাখার জায়গা নেই। কানায় কানায় ভর্তি হয়ে গেছে।

রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৯ নভেম্বর থেকে মিয়ানমারের মংন্ডু আরাকান রাজ্যে মগ সেনাদের হত্যা-ধর্ষণ, দমন-পীড়ন নিত্যদিনের কর্মকাণ্ডে পরিণত হয়েছে। গত কয়েক দিনে সীমান্ত এলাকার ঢেকিবনিয়া, কুমিরখালী, শিলখালী, বলিবাজার, পোয়াখালী, নোয়াখালী ও নাগপুরাসহ ৫টি গ্রামে মিয়ানমারের সামরিক জান্তারা তাণ্ডব চালিয়ে ঘরবাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। কেড়ে নেয়া হয়েছে তাদের সহায় সম্বল। তরুণীদের ধরে ধরে ধর্ষণের পর হত্যা করা হচ্ছে। প্রাণে বাঁচাতে হাজারো রোহিঙ্গা নাফ নদী পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আসার চেষ্টা করছেন। এখনো মিয়ানমার সীমান্তের কুমিরখালীর গহীন পাহাড়ে অপেক্ষা করছে হাজার হাজার মানুষ। বুধবার ভোরেও টেকনাফ দমদমিয়া সিমান্ত এলাকা দিয়ে অন্তত ৫ শতাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছেন।

বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত স্থল ও নদীপথ ব্যবহার করে অবৈধভাবে অন্তত অর্ধ লক্ষ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এসব রোহিঙ্গাদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠছে ক্যাম্পগুলোর বাতাস। ঠিক মতো খাবার পাচ্ছেন না। দু’মুঠো ভাতের দেখা পেলেই শিশুদের কান্না থামানো যায় না। খাবারের পরিমাণ মতো এতো কম থাকে যে, শিশুদের খাওয়ালে বড়দের খাওয়ার জন্য কিছু থাকে না। জাগো নিউজ

এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

রবিবার যেসব এলাকায় ১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না

গ্যাস পাইপলাইনের মেরামত কাজ ও জরুরি স্থানান্তরের জন্য রবিবার দেশেরবিস্তারিত পড়ুন

জেমিনি চ্যাটবটে যুক্ত হলো মেমোরি, যে ‍সুবিধা পাওয়া যাবে

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চ্যাটবট জেমিনিতে নতুন সুবিধা যুক্ত করেছে গুগল।বিস্তারিত পড়ুন

ঢাকা সিটি কলেজে ক্লাস বন্ধ রাখা নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত

ঢাকা কলেজের বাস ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত বুধবার সংঘর্ষেবিস্তারিত পড়ুন

  • শাকিব: আমার ক্যারিয়ারের সব বিগ হিট সিনেমা ঈদ ছাড়াই এসেছে
  • এক বছরের মধ্যে নির্বাচন চান ৬১.১% মানুষ, সংস্কার শেষে ৬৫.৯%
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুপক্ষের সংঘর্ষ
  • ডেঙ্গুতে একদিনে আরও ১০ মৃত্যু
  • জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন করার পরামর্শ কমিশনের
  • দেশের সংকটে যে সমাধান দেখছেন তারেক রহমান
  • যে কারণে প্রতিমন্ত্রীর বাড়ির সামনে বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা
  • ‘হেফাজতের আপত্তির মুখে’ নারায়ণগঞ্জে লালন মেলা বন্ধ
  • স্বর্ণের দামে ফের বড় লাফ, এগোচ্ছে নতুন রেকর্ডের দিকে
  • টসে জিতে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ
  • রাস্তা আটকে যমুনা ফিউচার পার্কের ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভ
  • যে ৫ দেশে যাওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশিদের জন্য সতর্কতা