নারীদের উন্নয়নের কথা বলে দু’কোটি টাকা নিয়ে উধাও
সেলাই প্রশিক্ষণসহ আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ, দারিদ্র দুরিকরণে লক্ষে নারীদের উন্নয়নের কথা বলে হতদরিদ্র মহিলাদের কাছ থেকে প্রায় দুই কোটি টাকা নিয়ে রাতের আধারে পালিয়েছেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সাংবাদিক সংস্থার “নারী উন্নয়ন প্রকল্প”। আর প্রশিক্ষণার্থীদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন নারী ট্রেইনারগন।
এ ঘটনায় হাতীবান্ধা ও আদিতমারী থানায় পৃথকপৃথক ভাবে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন রুমা বেগম ও আদুরী বেগম নামের দুইজন ভুক্তভোগি ট্রেইনার।
জানা গেছে, মার্চ মাসে হাতীবান্ধা উপজেলার দইখাওয়া মোড়ের প্যাদেং মোড় এলাকায় সুকুমার রায়ের বাসা এবং গত বছরের ৭ ডিসেম্বর মাসে আদিতমারী উপজেলার ফায়ার সার্ভিস অফিস সংলগ্ন জনৈক নুর মোহাম্মদ এর বাসা এবং ভাড়া নিয়ে অফিস খুলেন,
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সাংবাদিক সংস্থার “নারী উন্নয়ন প্রকল্প” নামের একটি সংগঠন।
সাইন বোর্ডে ও বিভিন্ন ফরমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত (রেজি নং S-10272-2009)।
প্রধান কার্যালয়: ৫০ডি, ইনার সার্কুলার ভি,আই,পি রোর্ড, নয়া পল্টন (৫ম তলা) ঢাকা-১০০০। ইমেইল: [email protected], ওয়েব: www.ihrjs.net হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
কার্যক্রম শুরুর পূর্বে প্রকল্পের সমন্বয়কারী এস আলম স্বাক্ষরিত কার্যক্রমের অবগতি করণ প্রসংগে লালমনিরহ্টা জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি পত্র প্রেরণ করেন।
যার অনুলিপি চেয়ারম্যান আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সাংবাদিক সংস্থা ঢাকা, লালমনিরহাট পুলিশ সুপার, ইউএনও, সমাজ সেবা অফিসার ও অফিসার ইনচার্জ কালীগঞ্জ ও আদিতমারীকে সদয় অবগতির জন্য প্রেরণ করা হলেও হাতীবান্ধায় তা করা হয়নি।
চিঠিতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সাংবাদিক সংস্থা একটি অরাজনৈকিত, অলাভজনক, স্বেচ্ছাসেবী, মানব কল্যাণমূলক বেসরকারী প্রতিষ্ঠান। নারী উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় অশিক্ষিত অর্ধশিক্ষিত ও সুবিধা বঞ্চিত মানব গোষ্ঠীকে দক্ষ মানব সম্পদ হিসেবে গড়ে তুলে তাদের দারিদ্র বিমোচন, কর্মসংস্থান ও স্বাবলম্বীতা অর্জনের লক্ষ্যে প্রশিক্ষণমূলক কার্যক্রম লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা ও আদিতমারী উপজেলায় শুরু করা হচ্ছে। এ ধরনের একটি চিঠি প্রশাসনকে দিয়ে তারা কার্যক্রম শুরু করেন প্রতিষ্ঠানটি।
এদিকে প্রতারক চক্রটি ৫ প্রকার হস্তশিল্পের কাজ শেখানোর কথা বলে ৩৫ জন মেয়েকে তাদের কার্যক্রমের ট্রেইনার হিসেবে নিয়োগ দেন। প্রতিজন ট্রেইনারের আওতায় ১৫টি দল গঠন করা হয়। প্রতিটি দলে কমপক্ষে ৩০ জন করে সদস্য ভর্তি করা হয়। প্রত্যেক সদস্যদের ভর্তির জন্য এক হাজার ৪শ ৩০ টাকা টাকা করে নেয়া হয়। আর প্রশিক্ষণ শেষে তাদেরকে একটি করে সেলাই মেশিন কিস্তিতে প্রদান করা হবে মর্মে নারী উন্নয়ন প্রকল্প শুধু আদিতমারীতে প্রায় আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে গত বুধবার (১০ মে) অফিসে তালাবদ্ধ করে রাতের অন্ধকারে পালিয়ে যায়। পরদিন ট্রেইনাররা অফিসে গিয়ে তালাবদ্ধ দেখতে পেলে ঘটনাটি ফাঁস হয়ে যায়।
হাতীবান্ধা উপজেলার নারী উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ করা ট্রেইনার কাছ থেকে নিয়েছে, পুর্বসিন্দুর্নার আফরোজা খাতুন (২৪) এর ৪টি দলে ৭৪জন সদস্যের ৯৫০০০ টাকা। সিঙ্গিমারী রোমানা আক্তার (২৩) এর ৫টি দলে ৮৩ জন সদস্যের ৭০ হাজার টাকার। ফেন্সি খাতুন (২২) এর ৪টি দলে ৫০ জন সদস্যের ২৩ হাজার টাকা।
আসমাউল হোসনা চাঁদনী (২২)এর ৪টি দলে ৯৮ জন সদস্যের ৯৬ হাজার টাকা।
রুমা খাতুন (২৪) এর ৫টি দলে ৯৫ জন সদস্যের ১লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। আবু সাইদ (২২)এর ৫টি দলে ৬০জন সদস্যের ২৫ হাজার টাকা। নুর নাহার (১৯)এর ৪টি দলে ৬৫ জন সদস্যের ৪০ হাজার টাকা। পুর্ব বেজ গ্রামের উর্মিলা রানী (২২) এর ৪টি দলে ৬৩ জন সদস্যের ৬০ হাজার টাকা। আল্পনা রানী (২৩)এর ৩টি দলে ৫১ জন সদস্যের ৭১ হাজার টাকা। হরিপ্রিয়া (১৯)এর ৩টি দলে ৪৭ জন সদস্যের ৫০ হাজার টাকা। দৈখাওয়া এলাকার জামিলা খাতুন (১৮)এর ২টি দলের ৩৩ জন সদস্যের ১৩ হাজার টাকা। ঘুন্টি এলারকার আনোয়ারা বেগম (২৩)এর ৪টি দলের ৬০ জন সদস্যের ৩৫ হাজার টাকা।
কাকিনার মেয়া হাতীবান্ধার সিন্দুর্নায় কাজ করেন শেখ মাহবুবা হাসান মৌ (২০)এর ৬টি দলে ৭২ জন সদস্যের ৩০ হাজার টাকা। কালীগঞ্জ এর মেয়ে হাতীবান্ধার পুর্ব বেজগ্রামে কাজ করেন মুক্তা রানী (২০)এর ৫টি দলের ১০০ জন সদস্যের ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকাসহ সর্বমোট ১০ লক্ষাধিক টাকা।
ঐ ১৪ জন ট্রেইনার জানান, আমরা সকলেই মিলে ১০ লক্ষাধিক টাকা সদস্যের কাছ থেকে সংগ্রহ করে অফিসে জমা দিলে, রাতারাতি পালিয়েছে ওরা, আর বিপদে পড়েছি আমরা। আমরা একন ভয়ে বাড়িতে থাকতে পারছি না।
একই কথা বলেন, আদিতমারী উপজেলার নারী উন্নয়ন প্রকল্পের ট্রেইনার হিসেবে কাজ করা পারভীন আক্তার, সুলতানা, আদরী ও রেজিয়া খাতুন।
তারা জানান, প্রকল্প সমন্বয়কারী এস আলমের কথা মত গ্রামের গরীব মানুষের প্রশিক্ষণের কথা বলে প্রত্যেকের কাছ থেকে এক হাজার ৪শ ৩০টাকা করে নিয়ে অফিসে জমা দেয়া হয়েছে। আমাদের বিপদে ফেলে তারা টাকা নিয়ে তারা রাতারাতি পালিয়েছে যায়।
হাতীবান্ধা উপজেলা চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেন বাচ্চু জানান, “নারী উন্নয়ন প্রকল্প” নামের ওই প্রতারক সংগঠনটি কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা ও আদিতমারী উপজেলায় কোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছে বলে ভুক্তভোগীদের নিকট থেকে জানতে পেরেছি।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সাংবাদিক সংস্থার রংপুর অঞ্চলের প্রকল্প সমন্বয়কারী এস আলম এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি টাকা আত্মসাতের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমরা কিছু সমস্যার কারনে কয়েকদিন হতে অফিসে যেতে পারছি না। তবে আমরা অবশ্যই তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিব। তবে নিউজ না করার জন্য তিনি প্রতিনিধিকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সাংবাদিক সংস্থার কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান এস,এম নজরুল ইসলাম কালীগঞ্জের তাদের অফিস থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, ইতিমধ্যে এবিষয়ে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য রংপুর অঞ্চলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আর সংস্থার নামে কেউ দুর্নীতি করলে তাকে ছাড় দেওয়া হবেনা।
হাতীবান্ধা থানার অফিসার ইনচার্জ রেজাউল করিম ও আদিতমারী থানার ওসি হরেশ্বর রায় অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, পুলিশ ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তারা।
হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ এনামুল কবির ও আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আসাদুজ্জামান এর সাথে কথা হলে তারা বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য ইতিমধ্যে সমাজ সেবা অফিসারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
রবিবার যেসব এলাকায় ১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না
গ্যাস পাইপলাইনের মেরামত কাজ ও জরুরি স্থানান্তরের জন্য রবিবার দেশেরবিস্তারিত পড়ুন
জেমিনি চ্যাটবটে যুক্ত হলো মেমোরি, যে সুবিধা পাওয়া যাবে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চ্যাটবট জেমিনিতে নতুন সুবিধা যুক্ত করেছে গুগল।বিস্তারিত পড়ুন
ঢাকা সিটি কলেজে ক্লাস বন্ধ রাখা নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত
ঢাকা কলেজের বাস ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত বুধবার সংঘর্ষেবিস্তারিত পড়ুন