নারী উত্ত্যক্তকরণ বাড়ছে যে কারণে
রাস্তাঘাটে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করলেই অপরাধীরা প্রেমিক থেকে লাঞ্ছনাকারী, নির্যাতনকারী, এমনকি ঘাতকে পরিণত হচ্ছে। ফলে স্কুল-কলেজে পাঠানোর বদলে অনেক অভিভাবক বাধ্য হচ্ছেন মেয়েদের বাল্যবিয়ে দিতে। তার পরও রেহাই মিলছে না, হামলার শিকার হচ্ছে ভুক্তভোগী ও তার অভিভাবকরা। অপরাধীরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আসছে না।
পথে-ঘাটে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে, এমনকি বাড়ি পর্যন্ত এসে ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত ও যৌন হয়রানি করার ঘটনায় ক্ষুব্ধ মানুষ সামাজিক গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন স্থানে ক্ষোভ জানাচ্ছে। তথ্য মতে, চলতি বছরের প্রথম আট মাসে উত্ত্যক্ত হতে হয়েছে রিশার মতো আরও ৩১ মেয়ে শিশুকে। দেশের ৪৯ শতাংশ ছাত্রীই কোনো না কোনো সময় সাইবার উত্ত্যক্তকরণের শিকার।
মানবাধিকার কর্মী ও আন্দোলনকারীরা বলছেন, শুধু ন্যায়বিচারের মধ্য দিয়েই সম্ভব এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসা। বিচারহীনতার সংস্কৃতিই উত্ত্যক্ত করাকে উৎসাহিত করছে বলে মনে করছেন তারা।
সর্বশেষ রিশা হত্যার ঘটনায় শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেছে। পুলিশ অভিযুক্ত অপরাধীকে গ্রেফতার করে প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পেরেছে। কিন্তু জনমনে প্রশ্ন দানা বাঁধছে, শুধু গ্রেফতারেই কি বিচার গুটিয়ে যাবে?
সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান :বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম আট মাসে উত্ত্যক্ত হতে হয়েছে ৩১ মেয়ে শিশুকে। আর শ্লীলতাহানি এবং যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে ১৬ মেয়ে শিশু। বখাটেদের প্রেম ও বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে প্রতিবাদ জানানোর কারণে হামলা, মারধর ও লাঞ্ছনার শিকার হয়েছে ২০ মেয়ে শিশু। যাদের মধ্যে অনেকেই হুমকিতে বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। আগের বছর ২০১৫ সালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াতকালে উত্ত্যক্ত করা হয়েছে ৬১ মেয়ে শিশুকে। লাঞ্ছিত হয়েছে অন্তত আটটি মেয়ে শিশু। আর বখাটেদের প্রতিহত করতে গিয়ে হামলায় আহত হয়েছেন ১০ অভিভাবক।
তথ্য অনুযায়ী, গত এক দশকে দেশে উত্ত্যক্ত করার ঘটনা মহামারীর রূপ নেয়। বখাটেদের হাতে লাঞ্ছিত হয়ে আত্মহত্যা করে অসংখ্য তরুণী। ২০১০ সালে রেকর্ডসংখ্যক উত্ত্যক্তকরণের ঘটনা ঘটে। ওই বছর উত্ত্যক্ত করার ঘটনায় আত্মহত্যা করে ২৬ তরুণী। আর উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ জানানোয় খুন হয় ১০ পুরুষ ও দুই নারী। এ ছাড়া বখাটেদের হাতে লাঞ্ছিত হন ১৬৬ নারী_ প্রতিবাদ করতে গিয়ে লাঞ্ছিত হন ৭৭ পুরুষ। এসব ঘটনার প্রতিবাদে তখন দেশজুড়ে আন্দোলনও শুরু হয়। উত্ত্যক্তকরণ বন্ধে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতও কাজ শুরু করে। তারপরও বন্ধ হয়নি উত্ত্যক্ত করার ঘটনা।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘উত্ত্যক্তকরণ প্রতিরোধের বড় শিক্ষা আসবে পরিবার থেকে। পরিবারগুলো সচেতন হলে এবং সন্তানদের মেয়েদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে গড়ে তুললে উত্ত্যক্তকরণের মতো ঘৃণ্য ঘটনা ঘটত না।’
বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, ‘বিচারহীনতার কারণেই উত্ত্যক্তকরণ থামছে না। আমরা একের পর এক ঘটনা দেখি। কিন্তু ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি হতে দেখি না। ন্যায়বিচার না হওয়ায় মেয়েরা রাস্তায় নামতে পারে না। জড়িতদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করেই শুধু উত্ত্যক্তকরণের মতো ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।’
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপকবিস্তারিত পড়ুন
দুই দফা কমার পর ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম
টানা দুই দফা কমার পর দেশের বাজারে ফের স্বর্ণের দামবিস্তারিত পড়ুন
চট্টগ্রামে দুর্ঘটনার কবলে হাসনাত-সারজিসের বহরের গাড়ি
আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের কবর জিয়ারত শেষে ফেরার পথে সড়কবিস্তারিত পড়ুন