নিজামীর রিভিউতে ঝুঁলে আছে জামায়াতের পুনর্গঠন!
দীর্ঘদিন পর দলের আমির নির্বাচনের জন্য মাঠপর্যায়ে কাজ শুরু করেছে মানবতাবিরোধী মামলায় বিপর্যস্ত জামায়াতে ইসলামী। বিশেষ করে দলের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর দল পুনর্গঠনের তোড়জোড় শুরু হয়। দলের আমির নির্বাচনের জন্য প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে তিনজনের ‘আমির প্যানেল’ও। তবে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃতুদণ্ড পাওয়া বর্তমান আমির মতিউর রহমান নিজামীর রিভিউ আবেদনের ফল দেখতে চায় জামায়াত।
মতিউর রহমান নিজামী ২০০১ সালে গোলাম আযমের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার পর গ্রেপ্তারের আগে পর্যন্ত আরো তিনবার আমির নির্বাচিত হন। ২০১০ সালে গ্রেপ্তারের পর কেটে গেছে আরও পাঁচ বছর। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও পরিস্থিতির কারণে আমির পদে নতুন কাউকে নির্বাচন করেনি দলটি।
একই কথা প্রযোজ্য সেক্রেটারি জেনারেলের ক্ষেত্রেও। ২০১০ সালেই গ্রেপ্তার হওয়া সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডের রায় হওয়ার পর আপিল ও রিভিউ শেষে ইতিমধ্যে তা কার্যকর হয়েছে।
আর ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলেও ফাঁসির রায় বহাল থাকার পর রিভিউ আবেদন করেন মতিউর রহমান নিজামী। এর শুনানি এখনো শুরু হয়নি। মূলত এ কারণেই ঝুলে আছে জামায়াতের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন বা দল পুনর্গঠনের চূড়ান্ত কাজ।
দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের শীর্ষস্থানীয় অনেক নেতা কারাগারে আটক হওয়ার পর থেকে জামায়াতে চলছে নেতৃত্ব সংকট। দীর্ঘদিন ধরে শীর্ষ নেতারা কারাগারে আটক থাকলেও মামলায় ইতিবাচক রায়ের আশায় এত দিন নেতৃত্ব নির্বাচন নিয়ে ভাবেননি দলের নেতারা। কিন্তু একে একে তিন নেতার ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর নতুন নেতৃত্বের জন্য সক্রিয় হন তারা। এখন নিজামীর রিভিউ নিষ্পত্তির দিকে তাকিয়ে আছেন তারা।
দলসূত্রে জানা গেছে, নিজামী খালাস পেলে বা মৃত্যুদণ্ড রদ হলে আমির পদে তিনিই হয়তো বহাল থাকবেন। আর তা না হলে নতুন আমির নির্বাচনের পাশাপাশি শীর্ষ অনেক পদে আসবে নতুন মুখ। এতে প্রবীণদের চেয়ে তরুণ নেতারা অগ্রাধিকার পাবেন। বিশেষ করে যাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মতো অভিযোগ নেই, এমন নেতাদের সামনে আনতে চায় জামায়াত।
জামায়াতের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, আমির নির্বাচনসহ দল পুনর্গঠনের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে মাঠপর্যায়ে কাজ শুরু হয়েছে। নিজামীর রিভিউ আবেদনের ফল যা-ই হোক, এরপর দল পুনর্গঠনের পুরো প্রক্রিয়া সামনে নিয়ে আসা হবে।
প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়েছিল, ফেব্রুয়ারির মধ্যে নিজামীর রিভিউ আবেদনের নিষ্পত্তি হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে মার্চের মধ্যে পুনর্গঠন কাজটি শেষ হবে। কিন্তু নিজামীর পাশাপাশি আপিল আবেদন রয়েছে জামায়াতের কর্মপরিষদের সদস্য মীর কাশেম আলী এবং সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলামের। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া এই দুজনের আপিল শুনানির তালিকায় নিজামীর আগে রয়েছে। ফলে দল পুনর্গঠনের প্রক্রিয়াও পিছিয়ে যাচ্ছে।
২০১০ সাল থেকে একের পর এক গ্রেপ্তার হন জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম, নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, নায়েবে আমির এ কে এম ইউসুফ, মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুস সুবহান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, আব্দুল কাদের মোল্লা, এ টি এম আজহারুল ইসলাম ও কর্মপরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলী।
তাদের মধ্যে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, কামারুজ্জামান ও কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। বিচার চলাকালে মারা গেছেন এ কে এম ইউসুফ। আর চূড়ান্ত রায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড পাওয়া গোলাম আযম কারাগারে মারা গেছেন। আমৃত্যু সাজা ভোগ করছেন সাঈদী।
জামায়াতের সূত্র জানায়, এই ১০ নেতার মধ্যে গোলাম আযম ছাড়া বাকি নয়জন জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের সদস্য। শীর্ষ নয় নেতা মানবতাবিরোধী অপরাধে বিচারের মুখোমুখি হওয়ার পর নেতৃত্ব সংকট কাটাতে ২০১০ থেকে ২০১৪ সালে তিন দফা জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের সদস্যসংখ্যা বাড়িয়ে ১৫ থেকে ২৩ করা হয়।
জামায়াতের গঠনতন্ত্র মতে, সারা দেশের রুকনদের ভোটে তিন বছরের জন্য দলের আমির নির্বাচিত হন। তিনি পরে সেক্রেটারি জেনালেরসহ অন্যান্য পদে নেতা মনোনীত করেন।
দীর্ঘদিন ধরে দলের আমির, সেক্রেটারি জেনারেলসহ অধিকাংশ শীর্ষ নেতা কারাগারে থাকায় গঠনতন্ত্রেও পরিবর্তন আনে জামায়াত। ‘আমিরে জামায়াত’ সম্পর্কিত গঠনতন্ত্রের ১৫ নম্বর ধারায় (ঘ) উপধারা যুক্ত করে ভারপ্রাপ্ত আমিরের মেয়াদ অনির্দিষ্টকাল করা হয়েছে। তাতে বলা আছে, ‘কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের বিবেচনায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আমিরে জামায়াতের নির্বাচন অনুষ্ঠান যদি কিছুতেই সম্ভব না হয়, তা হইলে কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ কর্তৃক নিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত আমির কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার অনুমোদন সাপেক্ষে স্বীয় পদে বহাল থাকিবেন।’
ফলে আমিরের অনুপস্থিতিতে দুই মেয়াদ ধরে ভারপ্রাপ্ত আমিরের দায়িত্ব পালন করছেন মকবুল আহমাদ। আর সেক্রেটারি জেনারেলের ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় সেটি খালি রয়েছে। এই পদেও দুই মেয়াদ ধরে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে কাজ করছেন ডা. শফিকুর রহমান।
২০-দলীয় জোটে জামায়াতের ঘনিষ্ঠ একাধিক শরিকদলের নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে এত দিন ধরে যে ধারাবাহিকতা চলে আসছে, তাতে দলের বন্দি নেতাদের মুক্তির বিষয়ে জামায়াত হতাশ। তাই নেতৃত্ব সংকট থেকে উত্তরণে দল পুনর্গঠনের দিকে মনোযোগ দিয়েছে তারা।
ওই নেতারা আরও জানান, দলের নতুন আমির হিসেবে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ, সিনিয়র নায়েবে আমির অধ্যক্ষ মজিবুর রহমান ও বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমানের নাম শোনা যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে শফিকুর রহমান এগিয়ে আছেন বলেও জানান তারা।
অন্যদিকে সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে নির্বাহী পরিষদের তিন সদস্য- প্রচার সম্পাদক অধ্যাপক তাসনিম আলম, ঢাকা মহানগর আমির রফিকুল ইসলাম খান ও সাবেক এমপি মিয়া গোলাম পরোয়ারের নাম আলোচনায় আছে। তবে দলের ভেতর জোরালোভাবে শোনা যাচ্ছে তাসনিম আলমের নাম।
জামায়াতের দক্ষিণাঞ্চলের একটি জেলার আমির নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “অনেকের নাম আলোচনায় আছে। তবে বয়সে যারা তরুণ, বিশেষ করে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ নেই এমন নেতাদের সামনে আনার পক্ষে বেশির ভাগ নেতাকর্মী। সেভাবেই কাজ চলছে।”
দল পুনর্গঠনসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে জানতে জামায়াতের কেন্দ্রীয় একাধিক নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও বেশির ভাগ নেতার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ড. ইউনূসের মন্তব্য দেশের মানুষের জন্য অপমানজনক : আইনমন্ত্রী
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, কর ফাঁকি দেওয়ার মামলাকে পৃথিবীর বিভিন্নবিস্তারিত পড়ুন
ময়মনসিংহে ওসি-এসপি’র বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তি স্বাক্ষর
সরকারি দায়-দায়িত্ব ও কর্মকান্ডে স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা বৃদ্ধি, সম্পদের যথাযথবিস্তারিত পড়ুন
ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় জনগণের সাথে রায়েছে বিচার বিভাগ
দেশের মানুষের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বিচার বিভাগ জনগণের সঙ্গে আছেবিস্তারিত পড়ুন