নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন ওপেনার হিসেবে তামিম
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রায় সাড়ে আট বছর পেরিয়ে গেছে তামিম ইকবালের। পেছন ফিরে যদি অতীতটা দেখেন, পথের দৈর্ঘ্য নেহাত কম নয়। এ সময়ে তামিমের প্রাপ্তি কী? নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন দেশসেরা ওপেনার হিসেবে, টেস্ট-ওয়ানডেতে হয়েছেন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের মালিক। সব খেলোয়াড়ের পারফরম্যান্সের গ্রাফই ওঠা-নামা করে। কিন্তু তামিমের পারফরম্যান্সের গ্রাফের ওঠা-নামার ধরনটা একটু ভিন্ন। যখন তাঁর ব্যাট হাসে, টানা কয়েক ম্যাচে হাসে। আবার অনেক সময় টানা কয়েক ম্যাচে রান পান না। আউট হন কখনো ভালো বলে, কখনো দুর্ভাগ্যজনকভাবে, কখনো বা উইকেট ছুড়ে আসেন।
এরপরও তামিমের প্রতিভা, যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই। কেবল তাঁর ব্যাটিং স্টাইল, শট খেলার ধরন নয়; পরিসংখ্যানও বলছে এখনো পর্যন্ত তার চেয়ে ভালো ওপেনার বাংলাদেশ দলে আসেনি। তামিমের অভিষেকের পর থেকে বাংলাদেশ এখনো পর্যন্ত খেলেছে মোট ১৬৩ ওয়ানডে। এর মধ্যে তামিম খেলেছে ১৪৯টি। এই ১৪৯ ম্যাচে তামিম ওপেনিং জুটিতে সঙ্গী হিসেবে পেয়েছেন ১২ জন সতীর্থকে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পেয়েছেন ইমরুল কায়েসকে, ৪৫ ওয়ানডে। এরপর ২৫ ম্যাচে তামিমকে সঙ্গ দিয়েছেন জুনায়েদ সিদ্দিকী।
তবে তামিমের সঙ্গে ইনিংস শুরু করায় সবচেয়ে সফল সৌম্য সরকার। তামিমের সঙ্গে ইনিংস শুরু করে মাত্র ৯ ম্যাচেই ৫৮ গড়ে ৪০৯ রান করেছেন সৌম্য। কিন্তু এই অল্প কটি ম্যাচ তামিমের সঙ্গে তুলনীয় হতে পারেন না সৌম্য। তাঁকে পাড়ি দিতে হবে দীর্ঘ পথ।
তামিম ১৪৮ ইনিংসে প্রায় ৩১ গড়ে করেছেন ৪৫২০ রান। অন্যদিকে তামিমের সঙ্গে ইনিংস শুরু করা ১২ ওপেনার ১৪৮ ইনিংসে মাত্র ২৬ গড়ে করেছেন ৩৬৮৩ রান। সৌম্য আসার আগে যেখানে বাকি ওপেনারদের গড় ছিল ২৪। তামিম সেখানে করেছেন ৬ সেঞ্চুরি ও ৩০ ফিফটি। তামিমের সঙ্গে ইনিংস শুরু করা ওপেনাররা করেছেন ৫ সেঞ্চুরি ও ২১ ফিফটি। তবে অভিষেকের পর বাংলাদেশের হয়ে তামিম যে ১৪টি ম্যাচ খেলেননি, সেখানে তাঁর জায়গায় খেলা ওপেনারদের পারফরম্যান্সও ছিল বেশ চমকপ্রদ। ওই ১৪ ম্যাচের ১৩ ইনিংসে ওপেনাররা ৪২ গড়ে করেছেন ৫৪৪ রান।
তামিমের অভিষেকের পর এই সাড়ে আট বছরে বাংলাদেশের চেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছে ৮টি দল। বিশ্বের অন্য দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২৪৬ ওয়ানডে খেলেছে ভারত। তবে এ সময়ে ওপেনারদের নেওয়া সর্বোচ্চ রানের তালিকায় তিনে আছেন তামিম। ওপেনার হিসেবে তামিমের চেয়ে বেশি রান পেয়েছেন কেবল শ্রীলঙ্কার তিলকরত্নে দিলশান (৬৯১১) ও দক্ষিণ আফ্রিকার হাশিম আমলা (৫৭০৩)।
বাংলাদেশের বহু বড় জয়ের অবদান তামিমের। ২০০৯ সালের আগস্টে জিম্বাবুয়ের দেওয়া ৩১৩ রানের লক্ষ্য বাংলাদেশ তাড়া করতে পেরেছিল তামিমের অনবদ্য এক ইনিংসের কারণে। ওই প্রথম বাংলাদেশ ৩০০-এর বেশি রান তাড়া করে জিতল। সেদিন তামিমের ব্যাট থেকে আসা ১৫৪ রানের ইনিংস এখনো বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের পক্ষে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস।
তামিমের খেলা ১৪৯ ওয়ানডের মধ্যে বাংলাদেশ জয় পেয়েছে ৫৯ ম্যাচে, হেরেছে ৮৯টি। হেরে যাওয়া সেই ৮৯ ম্যাচে ২৪.৫ গড়ে রান করেছেন ২১৮২। আর জয় পাওয়া ৫৯ ম্যাচে ৪১ গড়ে করেছেন ২৩৩৮ রান। তামিমের ছয়টি সেঞ্চুরির চারটিতেই বাংলাদেশ পেয়েছে জয়। তামিমের ছয়টি সেঞ্চুরি এসেছে ক্যারিয়ার স্ট্রাইক রেটের চেয়ে বেশি স্ট্রাইক রেটে। এছাড়াও ৩০ ফিফটির ২১টিই এসেছে ক্যারিয়ার স্ট্রাইক রেটের বেশি স্ট্রাইক রেটে। এই পরিসংখ্যানই বলে দেয়, আক্রমণাত্মক খেলেই তামিম বেশি সাফল্য পেয়েছেন।
ক্যারিয়ারে নানা সময়ে সময়ে বাজে পারফরম্যান্সের কারণে সমালোচিত হয়েছেন তামিম। কিন্তু বারবারই সে সব সমালোচনার জবাব দিয়েছেন অসাধারণ কিছু ইনিংস খেলে। তামিমের ক্যারিয়ারের প্রথম ১৭ ম্যাচে মাত্র একটি হাফ-সেঞ্চুরি করেছিলেন। এক অঙ্কের ঘরেই আউট হয়েছিলেন আটবার। কিন্তু এরপরের ৫ ম্যাচে তিন ফিফটি করে নিজের জাত চিনিয়েছিলেন। এরপর নিজের জায়গায় অন্য কাউকে ভাবার সুযোগই দেননি নির্বাচকদের।
২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে যখন তিন ম্যাচে ০, ৪, ০ রানে আউট হন, তখন অনেকেই তামিমকে বাদ দেওয়ার দাবি তুলেছিলেন। তখনকার খোদ বিসিবি প্রেসিডেন্ট আ হ ম মোস্তফা কামালও তামিমকে বাদ দিতে চেয়েছিলেন বলে খবর বেরিয়েছিল। কিন্তু নির্বাচকেরা তামিমকেই রেখেছিলেন। এশিয়া কাপে টানা চার ম্যাচে ফিফটি করে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রানসংগ্রহকারী হয়ে নিজেকে চিনিয়েছিলেন।
২০১৫ বিশ্বকাপে ভালো পারফর্ম করতে না পারায় আবার যখন তামিমের জায়গা নিয়ে প্রশ্ন উঠল, তখন পাকিস্তান সিরিজে তিন ম্যাচে দুই সেঞ্চুরিতে করলেন ৩১২ রান। তামিম ফিরলেন তামিমের মতোই। ভারতের বিপক্ষে শেষ দুই ম্যাচে ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম দুই ম্যাচে আবার রান নেই তামিমের ব্যাটে। শুরু হয়েছে আবারও সমালোচনা!
চট্টগ্রামে নিজের উঠোনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম সিরিজ জয়ের এ ম্যাচে ১৫০তম ওয়ানডে খেলতে নামছেন তামিম। ম্যাচটা স্মরণীয় করে রাখার বিরাট সুযোগ তাঁর সামনে। পারবেন সুযোগটা কাজে লাগাতে?
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
নারী ফুটবল দলের বেতন বকেয়া, দ্রুত সমাধানের আশ্বাস
টানা দ্বিতীয়বার সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেবিস্তারিত পড়ুন
প্রোটিয়াদের রানের পাহাড়, টাইগাররা নামতেই বদলে গেল পিচের ধরন!
চট্টগ্রাম টেস্টে প্রথম ৫ সেশনেরও বেশি সময় ব্যাটিং করেছে দক্ষিণবিস্তারিত পড়ুন
নেপালকে হারিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে স্বাগতিকদের ২-১ গোলে হারিয়ে সাফবিস্তারিত পড়ুন