নিজের ভাগ্য গড়ার চিন্তা কখনও করিনি: সংসদে প্রধানমন্ত্রী
দেশ ও দেশের জনগণের জন্য যে কোন ত্যাগ স্বীকারে নিজের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ক্ষমতা আমার কাছে ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য নয়।মানুষের কল্যাণের জন্য যেকোনও অবস্থা মোকাবিলা করতে প্রস্তুত।আমি রাষ্ট্রপতির মেয়ে ছিলোম,মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে ছিলাম, নিজেও ৩ বারের প্রধানমন্ত্রী। নিজের ভাগ্য কী করে গড়ব সেই চিন্তা কখনও করিনি।
বুধবার জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ফজিলাতুন নেসা বাপ্পির সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তরের প্রথম ৩০ মিনিট প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত ছিলো।
তিনি ও তার বোন শেখ রেহানার সন্তানেরা কখনও এটা—সেটা চেয়ে বিরক্ত করেন না মন্তব্য করে প্রশ্নোত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়েছি। আমি ও আমার বোনের ৫টি ছেলে মেয়ে, তাদেরকে একটা কথা বলে দিয়েছি। লেখাপড়া শিখেছো, ওইটুকুই তোমাদের সম্পদ। তারাও প্রতিটি কাজে আমাদের সহায়তা করছে। কখনও বিরক্ত করে না, এই ব্যবসা দিতে হবে, সেই ব্যবসা দিতে হবে। এটা করতে হবে, ওটা করতে হবে। এই ধরনের বিরক্ত কখনোই তারা করেনি। বরং আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশ, অটিজমের জন্য কাজ করা। দলের ডাটা সেন্টারটাকে গড়ে তোলা। দেশের উন্নয়নমূলক অনেক কাজেই তারা সাহায্য করছে। ছোট বোনের মেয়ে টিউলিপ এই নিয়ে দুবার লন্ডনে এমপি নির্বাচিত হয়েছে।
ক্ষমতাকে মানুষকে সেবা করার সুযোগ উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, সেবক হিসেবে দেশের মানুষের সেবা করার সুযোগটা পাচ্ছি। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে বার বার নির্বাচিত করে দেশের মানুষকে সেবা করার সুযোগ করে দিচ্ছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার নেতৃত্বে মানুষ যখন শান্তির মুখ দেখতে শুরু করেছে, দেশের সম্ভাবনার স্বর্ণ দুয়ার খুলে গেছে ঠিক তখনই জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। আমি ও আমার ছোট বোন একদিনেই নিঃস্ব রিক্ত হয়ে যাই। এই শোক ও ব্যথা সহ্য করা যায় না। তবে এই শোক ও আঘাত আমি ও আমার বোনের ভেতরে শক্তি যুগিয়েছে।মানুষের ভালোবাসার পরশ থেকে শক্তি পেয়েছি। মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নপূরণকে জীবনের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছি।
বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বিদেশে থাকার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ৫টি বছর রিফুজি (শরণার্থী) হিসেবে বিদেশের মাটিতে আমাদের থাকতে হয়েছে। রিফুজি হিসেবে অন্য দেশে থাকা এটা যে কতটা বেদনাদায়ক ও কষ্টকর আমরা তা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছি।
তিনি বলেন, একটি বৈরী পরিবেশে আমি দেশে ফিরে আসি। আমার চলার পথ কখনোই কুসুমাস্তীর্ণ ছিলো না। অনেক ঘাত-প্রতিঘাত, চড়াই উৎরাই ও বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে আমাকে এগুতে হয়েছিল।সত্য ও সততার পথে থাকলে যে কোনও বাধাই অতিক্রম করা যায়। দেশের মানুষের জন্য কিছু করতে হবে, তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করতেই হবে—এই অদম্য আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আমি যাত্রা শুরু করি। বারবার মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েছি, ভয় পাইনি। একটা আত্মবিশ্বাস ছিল, আমি তো কোনও অন্যায় করিনি। এদেশের মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। নিশ্চয়ই আল্লাহ আমাকে সাহায্য করবে। দেশের মানুষও নিশ্চয় বুঝতে পারবে।
এর আগে ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পির প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন,আওয়ামী লীগ সরকার উন্নয়নের মহাসড়কে অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য জনগণকে এগিয়ে চলার শক্তি যোগাচ্ছে। উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় লাল সবুজের নিশানা নিয়ে আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আজকের ১৬ কোটি জনগণের আস্থা ও সমর্থনের প্রতীকে পরিণত হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় নিশ্চিতভাবে বাংলাদেশ ২০৪১ সালের আগেই উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশে পরিণত হবে। আত্মসম্মানবোধ নিয়ে আমাদেরকে বায়ান্নো ও একাত্তরে অর্জিত গৌরবের পথ ধরে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। জনগণকে সরকারের কাজে সম্পৃক্ত করে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতায় সরকার বদ্ধপরিকর।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজীর প্রশ্নের জবাবে চীন হতে সাবমেরিন কেনার তথ্য জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চীন হতে সাবমেরিন ক্রয় বাংলাদেশের একটি জাতীয় স্বার্থকেন্দ্রিক একটি সিদ্ধান্ত এবং এর ফলে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বহির্বিশ্বে কোনও নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে না বলে বিশ্বাস করি।
সরকার দলের মাহফুজুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা জানান, সরকারের গৃহীত পদক্ষেপে দেশে আইনশৃঙ্খলার যথেষ্ট উন্নয়ন ঘটেছে এবং দেশের জনগণ সুফল পেতে শুরু করেছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে এবং অনুকরণীয় দৃষ্টিান্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডসহ উদ্ভুত সমস্যা মোকাবিলার লক্ষ্যে পুলিশের আলাদা উপযোগী ইউনিট গঠন করার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে বলেও তিনি জানান।
এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকার বিভিন্ন দেশের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে যে সব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তাতে বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক, শান্তিপ্রিয়, প্রগতিশীল এবং দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হয়েছে। এ লক্ষ্যে আমাদের সমন্বিত কার্যক্রম আগামি দিনগুলোতে অব্যাহত থাকবে। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সম্মান, ভাবমূর্তি ও অবস্থান আরও উন্নত ও সুদৃঢ় হবে।
আয়েন উদ্দিনের প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, বর্তমান সরকারের দুই মেয়াদে (১৫ জুন পর্যন্ত) বাংলাদেশ থেকে মোট ৪৬ লাখ ৭৯ হাজার ২২৯ জন কর্মী বিদেশে গেছেন।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
জাবি ছাত্রদলের পুনর্মিলনীতে দুই গ্রুপের বাগ্বিতণ্ডা, ককটেল উদ্ধার
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ছাত্রদলের সাবেক-বর্তমান নেতাকর্মীদের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে দুই গ্রুপেরবিস্তারিত পড়ুন
ফখরুল: ফ্যাসিবাদের ফেরার সম্ভাবনা বাড়ছে
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ফ্যাসিবাদ পরাজিত হলেওবিস্তারিত পড়ুন
বিচারপতিকে ডিম ছোড়ার ঘটনায় প্রধান বিচারপতির উদ্বেগ
হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালকে আদালত কক্ষে ডিম ছোঁড়ারবিস্তারিত পড়ুন