‘নিরাপত্তার নামে প্রাণের উৎসবকে মেরে ফেলা হচ্ছে’

বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখে নিরাপত্তা শঙ্কার চেয়েও বড় হয়ে উঠেছে পুলিশি হয়রানির আশঙ্কা। নিরাপত্তার অজুহাতে বর্ণিল এই উৎসবের দিনটিকে বিকাল ৫টার পর থেকে নিষেধাজ্ঞার চাদরে জড়ানোর কঠোর সমালোচনা করেছেন সংস্কৃতি কর্মী ও মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।
তাদের মতে পুলিশ নিজের ব্যর্থতা-অযোগ্যতা ঢাকতেই কড়াকড়ি আরোপের তর্জন-গর্জন করছে। এতে লাভ হচ্ছে বাংলা-বাঙালির শত্রু ধর্মান্ধ-জঙ্গি গোষ্ঠীর। পুলিশি প্রহরায় পহেলা বৈশাখে সর্বস্তরের বাঙালি স্বতঃস্ফুর্ততা নিয়ে নববর্ষের আনন্দে কতটুকু মাততে পারবে তা নিয়েও উদ্বিগ্ন তারা।
গত বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অপ্রীতিকর ঘটনার পর এবারের বৈশাখ ঘিরে ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর তৎপরতা দেখা যাচ্ছে রাজপথে, সামাজিক মাধ্যমে। এ অবস্থায় গতবারের ব্যর্থতা ঢেকে বিতর্কমুক্ত থাকতে বাড়তি নিরাপত্তা এবং ৫ টার পর বৈশাখী আয়োজনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পুলিশ।
পহেলা বৈশাখে ‘পুলিশি নিরাপত্তা’র নামে জনগণকে, বাঙালিকে শৃঙ্খলিত করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন মুক্তিযোদ্ধা ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু।
তিনি বলেন,‘ ৫টার পর উন্মুক্ত জায়গায় বৈশাখ উদযাপনে পুলিশি নিষেধাজ্ঞা কাম্য নয়। উৎসব চলবে উৎসবের মতো। সারাদিন নিরাপত্তা দিতে পারলে ৫টার পরও দায়িত্ব পালনে সমস্যা থাকার কথা না। নিরাপত্তা ঝুঁকি সৃষ্টিকারী সাম্প্রদায়িক জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো জনগণকে শৃঙ্খলিত করা হচ্ছে। নিরাপত্তার নামে প্রাণের উৎসবকে মেরে ফেলা হচ্ছে। পহেলা বৈশাখই বাঙালির জাতীয় উৎসব,বাকী সব উৎসবই যেখানে ধর্মভিত্তিক’।
মঙ্গল শোভাযাত্রায় মুখে মুখোশ পড়তে মানা এবং শোভাযাত্রা ঘিরে পুলিশি বলয় আর খবরদারির আশঙ্কা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদের প্রাক্তন শিক্ষার্থী সুব্রত শুভ্র। নতুন-পুরোনোদের অংশগ্রহণেই আয়োজিত হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা।
চারুকলার আর সবার মতো এখন ব্যস্ত সময় পাড় করছেন শুভ্র। কাজের ফাঁকে তিনি বলেন, ‘যতোই নিরাপত্তা দেয়া হোক অঘটন ঠেকানোর জন্য দরকার সদিচ্ছা। অথচ তাদের সদিচ্ছা নিয়ে জনমনে জমা সন্দেহ দূর না করে তারা নিরাপত্তার কথা ঢাক-ঢোল পিটিয়ে প্রচার করছে।
এটা অবশ্যই ব্যর্থতা ঢাকার চেষ্টা। বিক্ষিপ্ত-বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটতেই পারে। এই সুযোগে নিরাপত্তার নামে উৎসবের স্বতঃস্ফুর্ততা নষ্ট করা হচ্ছে’।
গত ৩ এপ্রিল সচিবালয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন ঘোষণা দেন এবার পহেলা বৈশাখে নগরীর উন্মুক্ত জায়গায় বিকাল ৫টার পর বৈশাখী আয়োজন করতে দেয়া হবে না।
আজ সোমবার বৈশাখের নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়ে পুলিশের সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কথারই প্রতিধ্বনি করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।
ডিএমপি কমিশনার জানান, ঢাবি এলাকায় প্রবেশের জন্য বেশ কয়েকটি গেইট বানানো হবে। প্রত্যেকটি গেইটে চেকিং থাকবে। ফুটপাতে বা রাস্তায় কোনো হকার বসতে পারবে না। উদ্যানের ভেতরে থাকবে কিছু হকার। যেন তাদের কাছ থেকে সবাই সবকিছু কিনতে পারে। টিএসসি-রমনা পর্যন্ত ৯টি ওয়াচ টাওয়ার থাকবে।
পুরো এলাকা সিসিটিভির আওতায় থাকবে। কন্ট্রোলরুম থেকে সিসিটিভি মনিটর করা হবে। পকেটমার-ছিনতাইকারী প্রতিরোধে পোশাকে ও সাদা পোশাকে পুলিশ থাকবে। ইভটিজিং যেন না হয় সেজন্যও বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় মঙ্গল শোভাযাত্রার চারপাশে পুলিশ লাইনিং থাকবে। আয়োজকরা কেউই মুখোশ পরবে না। শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীরাও মুখোশ পরতে পারবে না।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

ব্যাংকক থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা
ষষ্ঠ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণ শেষে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদবিস্তারিত পড়ুন

বিশ্বকবির ম্যুরাল থেকে কালি মুছে দিল উপজেলা প্রশাসন
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ম্যুরালে কালি দিয়ে মুখবিস্তারিত পড়ুন

ফখরুল: ইউনূস–মোদির বৈঠক আশার আলো দেখাচ্ছে
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন