নিহত আ’লীগ নেতার সই জাল করে ১৩ লাখ টাকা তুললেন বড় ভাই!
গত বছরের ২৪ এপ্রিল নিজের ব্যবসায়িক চেম্বারেই খুন হয়েছিলেন রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের নেতা জিয়াউল হক টুকু। তিনি ঠিকাদারী ব্যবসা করতেন।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের সরঞ্জাম শাখার একটি কাজের বিল পেতেন টুকু। চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি সেই বিল বাবদ ১৩ লাখ ৫২ হাজার ৯৯০ টাকা পাস হয়। কিন্তু নিহত টুকুর সই জাল করে ওই টাকা তুলে নেয়া হয়েছে।
মেঘনা ব্যাংকের রাজশাহী শাখায় টুকুর মালিকানাধীন মেসার্স প্রমিনেন্ট কনস্ট্রাকশনের নামে ভুয়া অ্যাকাউন্ট করে টাকা তুলে নেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে গত ২ এপ্রিল টুকুর স্ত্রী নুরুন্নাহার রেলওয়ের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংকের রাজশাহী শাখার নির্বাহী পরিচালক, রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার ও মেঘনা ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগে বলা হয়েছে, টুকু নিহত হওয়ার পর গত বছরের ৬ জুন আদালতের মাধ্যমে তিনি ওয়ারিশ হিসেবে তার ব্যবসা দেখা শোনার দায়িত্ব পান। কিন্তু গত ২৩ ফেব্রুয়ারি টুকুর প্রতিষ্ঠানের নামে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের সরঞ্জাম শাখার অধীনে একটি টেন্ডারের ১৩ লাখ ৫২ হাজার ৯৯০ টাকার একটি বিল পাস হয় যার বই নং ১০৬০২৬, চেক নং ৫৩০১২৭৬। কিন্তু ওই চেকটি নুরুন্নাহারকে দেয়া হয়নি।
মেসার্স প্রমিনেন্ট কন্সট্রাকশনের নামে চেকটি মৃত টুকুর সই দিয়ে সরাঞ্জম শাখা থেকে তুলে নেয়া হয়েছে। এরপর মেঘনা ব্যাংকে ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ভুয়া হিসাব খুলে টাকা তুলে নেয়া হয় বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
নুরুন্নাহার জানান, ওয়ারিশ হিসেবে মেসার্স প্রমিনেন্ট কন্সট্রাকশনের ব্যবসা পরিচালনার আদালতের আদেশ পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের সরঞ্জাম শাখায় জমা দেয়া হয়। সে আদেশের বলে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের সরাঞ্জাম শাখা থেকে ব্যবসায়িক কাগজপত্রে সই করার জন্য অনুমতি দিয়ে গত বছরের ১২ জুন তাকে চিঠি দেয়া হয়। কিন্তু ওই বিলের চেক তার প্রতিষ্ঠানের নামে করা হলেও মৃত টুকুর সই নিয়ে অন্যজনকে দেয়া হয়েছে।
তার অভিযোগ, এ জালিয়াতির সঙ্গে রেলওয়ের সরঞ্জাম শাখা ও মেঘনা ব্যাংকের কর্মকর্তারাও জড়িত রয়েছেন। কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়াই মেঘনা ব্যাংকের কর্মকর্তারা তার প্রতিষ্ঠানের নামে হিসাব খোলার সুযোগ দিয়ে টাকা উত্তোলনের পর তা ক্লোজ করে দিয়েছে।
নুরুন্নাহার আরও জানান, চেক জালিয়াতির অভিযোগ দেয়ার পর থেকে তিনি হুমকির মধ্যে রয়েছেন। অভিযোগ তুলে নেয়ার জন্য বিভিন্নভাবে তাকে হুমকি দেয়া হচ্ছে। গত ৪ এপ্রিল বিষয়টি লিখিতভাবে পুলিশকে জানানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের উপ-অর্থ উপদেষ্টা শ্যামলী রানী দাস জানান, মৃত জিয়াউল হক টুকুর স্ত্রীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিষয়টি তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। তিনি সেই কমিটির প্রধান। তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ নিয়ে কিছুই বলা যাবে না।
মেঘনা ব্যাংকের রাজশাহী শাখার ব্যবস্থাপক হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘আমি ১৯ এপ্রিল এ শাখায় যোগদান করেছি। শুক্রবার বিষয়টি শোনার পর খোঁজ-খবর নিয়েছি। প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র দাখিল করে ব্যাংকের নিয়মের মধ্যেই জিয়াউল হক টুকুর বড় ভাই আজমুল হক সাচ্চু ওই হিসেব খুলেছিলেন যেখানে ১৩ লাখ ৫২ হাজার ৯৯০ টাকার চেক জমা দেয়া হয়েছিল। পরে সে টাকা তিনি তুলে নিয়েছেন।’
বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্যও জানেন বলে দাবি করেন এই ব্যাংক কর্মকর্তা।
জানতে চাইলে টুকুর ভাই আজমুল হক সাচ্চু বলেন, এটি পারিবারিক বিষয়। টুকুর কাছ থেকে সুজন নামে এক ব্যক্তি ১৩ লাখ টাকা পেতেন। কিন্তু টুকুর স্ত্রী সে টাকা দিতে অস্বীকার করে। এজন্য পরিবারের সদস্যেদের সিদ্ধান্তে টাকা তুলে সুজনকে দেয়া হয়েছে।
কিন্তু সুজনের পরিচয় ও ফোন নম্বর চাইলে এ ব্যাপারে সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ করেন সাচ্চু।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার ইফতে খায়ের আলম জানান, নুরুন্নাহারের অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি: জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আল্টিমেটাম
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বিগত ভর্তি পরীক্ষাগুলোতে জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধেবিস্তারিত পড়ুন
সংঘর্ষের ঘটনায় রাবি কর্তৃপক্ষের মামলা, গ্রেপ্তার ১
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা দায়ের করেছেবিস্তারিত পড়ুন
স্থানীয়দের সঙ্গে রাবি শিক্ষার্থীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, আহত ২০
বাসের সিটে বসাকে কেন্দ্র করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীদের সঙ্গেবিস্তারিত পড়ুন