রাজধানীর কল্যাণপুরের জাহাজবাড়িতে নিহত ৯ জঙ্গির ছবি প্রকাশ করেছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। অপারেশন ‘স্টর্ম টোয়েন্টি সিক্স’ এ নিহত ব্যক্তিরা জঙ্গি কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে কিছু রাজনৈতিক নেতারা। এ ঘটনার পরে পুলিশের পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে স্টাটাস দেয়া হয়। এরপরই গুলশানের ঘটনার মত কল্যাণপুরের জঙ্গিদেরও হাস্যোজ্জ্বল ছবি প্রকাশ করলো আইন শৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনীর সদস্যরা।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কল্যাণপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত ৯ জঙ্গির কালো পাঞ্জাবি পরা, মাথায় লাল রঙের পাগড়ি লাগানো হাস্যোজ্জ্বল ছবি প্রকাশ করে।

গত মঙ্গলবার ভোরে জাহাজ বাড়িতে ৯ জঙ্গি নিহত হওয়ার পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে কেউ কউ মন্তব্য করেন এরা আসলে জঙ্গি কিনা। আর বিএনপি নেতা হান্নান শাহ নিহত ব্যক্তিরা জঙ্গি কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন।

আলোচনা সমালোচনার পরে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ইউনিটের অতিরিক্ত কমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম ফেইসবুকে অভিযান নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন।

এতে তিনি বলেন, কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানকালে সন্ত্রাসীদের গ্রেনেড নিক্ষেপে পুলিশের ৪ কর্মকর্তার মৃত্যু, আহত ৪২ কর্মকর্তা। তিন জঙ্গি গ্রেপ্তার হলেও বাকিরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে!”

দুঃখিত, বন্ধু, এ রকম একটা খবর যদি আপনি আশা করে থাকেন তাহলে আমরা আপনার প্রত্যাশা পূরণ করতে পারিনি! প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায় আপনি যদি কষ্ট পেয়ে থাকেন, আমরা সত্যিই দুঃখিত!

“নাম-ঠিকানা না জেনে জঙ্গি বলছেন কিভাবে?” “জঙ্গিরা এ রকম পাঞ্জাবি, কেডস পরে ঘুমাতে গিয়েছিল কেন?” “৪টি পিস্তল দিয়ে কিভাবে সারারাত মুহূর্মুহূ গুলি চালানো সম্ভব?” “কেন তাদের জীবিত ধরা গেল না?” এ রকম অনেক যৌক্তিক প্রশ্ন কারো মনে আসতেই পারে।

আমি যদি বলি আপনি বুঝে ও না বোঝার ভান করছেন আপনি খ-াবেন কি করে? গোটা সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে আলোচনা হচ্ছে যে প্রতিবশিরা বলছে, ঐ বাসার লোকেরা সারারাতই কথিত জিহাদের স্বপক্ষে শ্লোগান দিয়েছে, তাদের রুমে কথিত আইএসের পতাকা পাওয়া গেছে। প্রচুর সংখ্যক উগ্রবাদী বইপুস্তক পাওয়া গেছে। তারপরও এরা জঙ্গি কিনা তা বোঝার জন্য কি রিসার্চের প্রয়োজন আছে?

আনুমানিক রাত একটার কাছাকাছি পুলিশের প্রথম দলটি বাসাটিতে নক করে এবং প্রথম দফা সংঘর্ষের পরে প্রায় সারারাত বিল্ডিংটা কর্ডন করে রাখা হয়। চূড়ান্ত অভিযান শুরু হয় ভোর ৫.৫০ এর দিকে। এতদীর্ঘ সময় তারা ঘুমিয়ে ছিল কিনা, এই পোষাক পরার সময় পেয়েছিল কিনা তা বোঝার জন্য বুদ্ধিজীবী হওয়ার প্রয়োজন আছে কিনা দয়া করে ভেবে দেখবেন কি?

সারারাত মুহূর্মুহূ গোলাগুলি হয়েছে এ রকম কোনো তথ্য আমার জানা নাই। আমি যতটুকু জানি, যখনই পুলিশ বাসাটিতে ঢুকতে চেষ্টা করেছে ততবারই গুলি চালানো হয়েছে। চূড়ান্ত অভিযান হয়েছে একঘণ্টার কাছাকাছি। ঐ সময়েই মূলত চূড়ান্ত গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। আমার বিশ্বাস এ তথ্য আপনার অজানা নয়। তাহলে কেন এ রকম প্রশ্ন তুলছেন? পুলিশের সাফল্য মানতে পারছেন না তাইতো!

আপনি তো সবজান্তা অথচ আপনি এই ধরনের অপারেশন গুলোর ইতিহাস জানেন না। দেশে এবং দেশের বাইরে কোথায় এই ধরনের অপারেশনে কতজন জীবিত গ্রেপ্তার হয়েছে জানালে বাধিত হবো।

আসলে, পুলিশের কেউ মারা যায়নি কিংবা কেউ গুরুতর আহত হয়নি। এতেই তো আপনার যতো আপত্তি তাই না, বন্ধু!

এই স্ট্যাটাস দেয়ার পরপরই ছবি প্রকাশ করল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। তবে এই ছবি প্রকাশের ব্যাপারে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টার কিছু জানে না। এবং কোন সংস্থা এই জঙ্গিদের হাস্যোজ্জ্বল ছবি প্রকাশ করেছে তাও তাদের জানা নেই।

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার অতিরিক্ত উপকমিশনার মুহাম্মদ ইউসুফ আলী বলেন, এই ছবি আমরা প্রকাশ করিনি। এবং কারা এই ছবি প্রকাশ করেছে তাও আমাদের জানা নেই।