নীরবতা ভাঙলেন মাশরাফী

ছাত্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এরপর দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। নড়াইলে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এবং জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায় মাশরাফী বিন মোর্ত্তাজার বাড়ি।
বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের কাছে তার জনপ্রিয়তা ছিল আকাশচুম্বী। কিন্তু কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে ছাত্রদের পাশে মাশরাফিকে দাঁড়াতে না দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে ছাত্র সমাজ।
অনেকেরই ধারণা তিনি আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হওয়ায় এ নিয়ে কোনো কথাই বলেননি। তাইতো কিংবদন্তি এই ক্রিকেটারকে দেশের মানুষ ভালোভাবে নেননি।
ব্যাপারটি অনেকটা সেরককমই; আওয়ামী লীগ সরকারের সংসদ সদস্য হিসেবে হাত পা বাঁধা ছিল মাশরাফীর। ইচ্ছা থাকলেও ছাত্রদের পাশে দাঁড়াতে পারেননি তিনি। তবে এতদিন চুপ থাকলেও অবশেসে নীরবতা ভেঙেছেন মাশরাফী। ইউটিউবার নট আউট নোমানের সঙ্গে সাম্প্রতিক বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন মাশরাফি। মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি বলে দুঃখ প্রকাশ করেছেন তিনি।
মাশরাফী হতাশ কণ্ঠে বলেন, “এই কষ্ট হয়তো আজীবন থাকবে। দেশের একটা ক্রাইসিস মুহূর্তে পাশে থাকতে পারিনি, কিছু করতে পারিনি, এটা আমাকে সব সময়ই ভোগাবে, পোড়াবে। সব সময়ই থেকে যাবে। সব সময় সব কথা বলা যায় না। কিছু জিনিস হয়তো বলার ব্যাপারও নয়। এত দিন চুপ ছিলাম। আজকে কিছু বলছি। কিছু হয়তো সামনে বলব। জীবনে অনেক কিছু হবে। তবে এই কষ্টটা রয়ে যাবে। যত কিছুই হোক, এটা কখনও যাবে না। নিজের ওপর সেই হতাশা সব সময়ই থাকবে।”
চুপ থাকার কারণ হিসেবে মাশরাফী বলেছেন, “এখন আসলে এসব কথার উত্তর বা ব্যাখ্যা দেওয়ার অর্থ নেই। যদি সরাসরি বলি, তাহলে অবশ্যই আমি পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছি অনেক মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে। কথা যদি বলতেই হতো তখন… কোটা সংস্কারের আন্দোলন অবশ্যই যৌক্তিক ছিল। আমার নিজের কাছেও মনে হচ্ছিল, এটা হয়ে যাবে। তবে সবাই যখন চাচ্ছিল যে আমি কিছু একটা বলি বা স্ট্যাটাস দেই (ফেসবুকে)… ততক্ষণে আসলে সবকিছু এত দ্রুত হচ্ছিল… ভাবছিলাম যে আমি যদি কিছু লিখি বা মন্তব্য করি, সেটার সম্ভাব্য পরিণতি কী হতে পারে… অনেক কিছু ভাবছিলাম আর কী… সব মিলিয়ে কিছু লেখা হয়নি।”
চুপ থাকলেও ভেতরে ভেতরে কিছু করার চেষ্টা করেছিলেন বলে দাবি করলেন দেশের সেরা এই অধিনায়ক, “আমি কিছু করার চেষ্টা করিনি, তা নয়। আমি শুধু কিছু লেখার ভাবনায় থাকতে চাইনি। চেয়েছিলাম ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলতে, আলোচনার মাধ্যমে কিছু করা যায় কি না। সেই শুরুর দিকেই চেষ্টা করেছি। কারণ তাদের দাবি আমার কাছে যৌক্তিক মনে হয়েছে। কিন্তু সেটাও করতে পারিনি। সব মিলিয়ে অবশ্যই ব্যর্থ হয়েছি।”
কেন ব্যর্থ হলেন তার কারণ ব্যাখা করে মাশরাফী বলেন, “দেখুন, আমি ছোট থেকে ক্রিকেট খেলেছি, একসময় জাতীয় দলে এসেছি, পরে অধিনায়ক হয়েছি। অধিনায়ক থাকার সময় দল যখন হেরেছে বা খারাপ করেছে, সেটার দায় আমাকে নিতে হয়েছে। আমি সব সময়ই নিয়েছি। আপনারা যদি মনে করতে পারেন, ম্যাচ হারলে অধিনায়ক হিসেবে আমি দায় নিয়েছি। কিন্তু রাজনীতির আঙিনা তো ভিন্ন।”
মাশরাফী আরও বলেন, “রাজনীতির মাঠে আমি আমার দলের অধিনায়ক নই। সহ-অধিনায়ক নই। এমনকি, বড় কেউও নই। মাত্র কয়েক বছর হলো শুরু করেছি রাজনীতি। আমি আমার জায়গা থেকেই চেষ্টা করেছি। যতটুকু সাধ্য ছিল, চেষ্টা করেছি যেন ছাত্রদের সঙ্গে আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি করতে পারি। কিন্তু সুযোগটা না পেলে তো কিছু করার থাকে না। হয়তো দলের উপদেষ্টামণ্ডলীতে থাকলে বা সে রকম কেউ হলে দায়িত্ব পেতাম। তারপরও সাধ্যমতো করেছি, কিন্তু সুযোগটা আমি পাইনি।”
তবে কাউকে দোষারোপ করতে চান না মাশরাফী, “তারপরও কাউকে দোষ দেবো না। দায় আমারই। বিশেষ করে, মানুষের যে আবেগ-ভালোবাসার জায়গা ছিল, ক্রিকেটার মাশরাফীর প্রতি যে দাবি ছিল, সেটা পূরণ করতে পারিনি এবং সেই দায় মাথা পেতেই নিচ্ছি। আমি ব্যর্থ হয়েছি এবং সেটা আমাকে সেই শুরু থেকেই পোড়াচ্ছে। রাজনীতিবিদ হিসেবে, আমি কিছু করার চেষ্টা করেছি। পারিনি।”
দলের বাইরে গিয়ে কিছু করতে হলে পদত্যাগ করা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না উল্লেখ করে মাশরাফি বলেছেন, “দলের বাইরে গিয়ে কিছু করতে হলে আমাকে পদত্যাগ করতে হতো। সেটা যদি করতাম, তাহলে এখন নিশ্চয়ই আমার অনেক প্রশংসা হতো। কিন্তু প্রতিটি সময়ের বাস্তবতা আলাদা থাকে। ওই সময় যদি পদত্যাগ করতাম, তাহলে আরও বড় কিছু হয় কি না বা পরিস্থিতি আরও খারাপ হয় কি না, এ রকম অনেক কিছু ভাবতে হয়েছে। আমি যদি সেই ভাবনাগুলো সব তুলে ধরি, সেটারও পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি থাকবে। কিন্তু সম্ভাব্য পরিণতি বা অনেক দিক ভাবতে হয়েছে আমাকে।”
সাবেক অধিনায়ক ও সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, “নড়াইলের মানুষের কাছেও আমার দায়বদ্ধতার ব্যাপার ছিল। নড়াইল-২ আসনের মানুষের অনেক আশা আমাকে ঘিরে। তাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, নড়াইলকে একটা জায়গায় পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করবো। সেই মানুষগুলোর কাছে কী জবাব দেবো? এ রকম নানা কিছু ভাবতে হয়েছে। অনেকেই আমাকে তখন বলেছেন, ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে একটি স্ট্যাটাস দিলেও দেশের মানুষ খুশি হবে। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে, একজন সংসদ সদস্য হিসেবে আমার দায়িত্বটা আরও বেশি। আমি যদি ছাত্রদের কাছে যেতে পারতাম, তাহলে হয়তো এটা সমাধান করা বা কিছু করার সুযোগ থাকতো। ছাত্ররা যদি আমার আহ্বানে সাড়া না দিত বা আমাকে গুরুত্ব না দিত, সেটা ভিন্ন ব্যাপার। কিন্তু নিজের কাছে অন্তত পরিষ্কার থাকতে পারতাম যে, কিছু করার উদ্যোগ নিয়েছি। সেটা চেষ্টা করেও পারিনি। আগেই বলেছি, ব্যর্থ হয়েছি এবং দায় নিচ্ছি।”
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

দেশের কয়েকটি অঞ্চলে ঝোড়ো হাওয়াসহ বজ্রবৃষ্টির শঙ্কা, নদীবন্দরে সতর্কতা
দেশের সাতটি অঞ্চলের ওপর দিয়ে ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি ও বজ্রবৃষ্টিবিস্তারিত পড়ুন

শিবির সভাপতি: অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই বিপ্লবকে ধারণ করতে পারেনি
ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেছেন, “অন্তর্বর্তী সরকার পুরোপুরি ব্যর্থবিস্তারিত পড়ুন

মহাকাশে কতগুলো স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হয়েছে, শীর্ষে কোন দেশ?
এখন পর্যন্ত পৃথিবীর কক্ষপথে মোট ৩০ হাজারের বেশি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণবিস্তারিত পড়ুন