নোয়াখালীতে স্বাধীন দেশের পতাকা উড়েছিল এই দিনে

আজ ৭ ডিসেম্বর নোয়াখালী মুক্ত দিবস। মুক্তিসেনারা এইদিন জেলা শহরের পিটিআইতে রাজাকারদের প্রধান ঘাঁটির পতন ঘটিয়ে নোয়াখালীর মাটিতে উড়িয়েছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের বিজয় পতাকা।
২৫ মার্চের পর মুক্তিযোদ্ধারা এক মাসেরও বেশি সময় ধরে নোয়াখালীকে মুক্ত রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন। এরপর প্রতি পদে পদে বাঁধা পেয়ে বহুকষ্টে পাকিস্তানি সেনারা ২৩ এপ্রিল নোয়াখালী দখলে নেয়। দখলদার বাহিনী জেলা শহরের শ্রীপুর, সদরের রামহরিতালুক, গুপ্তাংক, বেগমগঞ্জের কুরিপাড়া, পোড়াবাড়ি গোপালপুর ও আমিশাপাড়ায় নির্বিচারে হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়।
এসময় হায়নাদাররা গুলি ও পুড়িয়ে হত্যা করে দেড় শতাধিক নারী-পুরুষ ও শিশুকে। গান পাউডার দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
এসময় দেশের অভ্যন্তরে ও ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আবার অস্ত্র হাতে মাঠে নামে মুক্তিযোদ্ধারা। কোম্পনিগঞ্জের বামনী, তালমাহমুদের হাট, ১২ নং স্লুইস গেইট, সদরের ওদারহাট, করমবক্স, বেগমগঞ্জের ফেনাকাটা পুল, রাজগঞ্জ, বগাদিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা।
নোয়াখালীকে হানাদার মুক্ত করার লক্ষ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রস্তুতি যখন প্রায় চূড়ান্ত, ঠিক তখনই ৬ ডিসেম্বর গভীর রাতে মাইজদী পিটিআই ও বেগমগঞ্জ টেকনিক্যাল হাইস্কুল ক্যাম্প ছেড়ে কুমিল্লা সেনানিবাসের উদ্দেশ্যে পালিয়ে যেতে থাকে পাকিস্তানি মিলিটারিরা ও মিলিশিয়ারা।
এসময় বেগমগঞ্জ-লাকসাম সড়কের বগাদিয়া ব্রিজ অতিক্রম করতেই সুবেদার লুৎফুর রহমান ও শামসুল হকের নেতৃত্বাধীন মুক্তি বাহিনীর হামলায় অসংখ্য মিলিটারি সদস্য ও মিলিশিয়া নিহত হয়।
মুক্ত দিবসের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধা মো. হানিফ, মোজাম্মেল হক মিলন, এনাম আহমেদ, মো. কামাল উদ্দিন জানান, ৭ ডিসেম্বর ভোররাত থেকে মুক্তিযোদ্ধারা নোয়াখালীকে শত্রুমুক্ত করার চূড়ান্ত অপারেশন শুরু করেন। সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যে সকল মুক্তিযোদ্ধারা একযোগে চতুর্দিক থেকে আক্রমণ চালিয়ে বেগমগঞ্জ চৌরাস্তা সংলগ্ন টেকনিক্যাল হাইস্কুলটি রাজাকার মুক্ত করে।
একই দিন জেলা শহরের মাইজদি কোর্ট স্টেশন, জিলা স্কুল, দত্তেরহাট নাহার মঞ্জিল মুক্ত করেন অকুতভয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা। তারপর পাকআর্মি ও রাজাকারদের প্রধান ঘাঁটি মাইজদি পিটিআই ভোর থেকে মুক্তিযোদ্ধারা চতুর্দিক ঘিরে ফেলে।
মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান টের পেয়ে পিটিআই ক্যাম্পের ভেতরে অবস্থানরত রাজাকাররা এলোপাথাড়ি গুলি বর্ষণ করতে থাকে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে পার্শ্ববর্তী সরকারি আবাসিক এলাকার এক ব্যক্তি মারা যান। পাল্টা গুলি চালায় মুক্তিযোদ্ধারাও। গুলির শব্দে কেঁপে উঠে পুরো শহর।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে অন্ধকার নেমে আসার সাথে সাথে ক্যাম্প ছেড়ে পালাতে থাকে রাজাকাররা। বিপরীত দিক থেকে গুলি বন্ধ হলে মুক্তিযোদ্ধারা ক্যাম্পের ভেতরে গিয়ে দেখতে পান সেখানে ১০-১২ জন রাজাকারের মরদেহ পড়ে আছে। আরো কয়েকজন রাজাকার ধরা পড়ে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে। এভাবে ৭ ডিসেম্বর মুক্ত হয় নোয়াখালী জেলা
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

নোয়াখালীতে অস্ত্র ঠেকিয়ে কিশোরীকে অপহরণের অভিযোগ
নোয়াখালীর সদর উপজেলায় অস্ত্র ঠেকিয়ে সতের বছর বয়সী এক কিশোরীকেবিস্তারিত পড়ুন

ভিক্ষুকে সয়লাভ নোয়াখালীর শহর
নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদী এখন ভিক্ষুকের শহরে পরিণত হয়েছে। যদিওবিস্তারিত পড়ুন

নোয়াখালীতে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষ
পেট্রলবোমা হামলার মামলায় দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাবিস্তারিত পড়ুন