নোয়াখালীর দুই শিশু সন্তানের জননীকে বাথরুমে নিয়ে গলাকেটে হত্যা !!
গত মঙ্গলবার সকাল আনুমানিক ১০টা। নিজের দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে বাসায় অবস্থান করছিলেন রোজিনা আক্তার মিতু (২৭)। এরই মধ্যে কলিংবেল বেজে ওঠে। বড় মেয়ে ৭ বছরের মিনহা দরজা খুলে দেয়। ওই সময় রোজিনা বাথরুম থেকে বের হন। দরজা খুলে দেয়ার পর বাসায় ঢুকে ঘাতক শাকিল (৩০)। কিছু বুঝে ওঠার আগেই টেনেহিঁচড়ে রোজিনাকে বাথরুমে নিয়ে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। মিনহা ও তার ছোট বোন তাবহা আলমের সামনেই ঘটে এ নৃশংস ঘটনা।
যাওয়ার সময় ঘাতক শাসিয়ে যায় মিনহাকে বলে, কাউকে কিছু বললে তাকে মেরে ফেলবে। এরপর ঘাতক বেরিয়ে গেলে মেয়েদের চিৎকারে ছুটে আসেন প্রতিবেশীরা। পুলিশ ১২টার দিকে এসে রোজিনার রক্তাক্ত গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে। নিহত রোজিনার মেয়ে মিনহা এমনটাই জানিয়েছে পুলিশ ও স্বজনদের।
পুলিশ বলছে, আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত বিষয়ের জের ধরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে। রোজিনার পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, এ ব্যাপারে আগেই একটি সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন তিনি। রোজিনার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী জেলার কবিরহাট উপজেলার ইন্দ্রপুর গ্রামে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লাশের ময়নাতদন্তের পর গতকাল গ্রামের বাড়িতে নিয়ে দাফন করা হয়।
মঙ্গলবার ১২টার দিকে কাফরুল থানার ইব্রাহিমপুর এলাকার ৮৩৯ নম্বর বাসার নিচতলায় খুন হন রোজিনা। দুই সন্তানকে নিয়ে তিনি ওই বাসায় ভাড়া থাকতেন। এ ব্যাপারে নিহতের ভাই ফিরোজ আলম ভূঁইয়া বাদী হয়ে আহমেদ শরীফ শাকিলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন।
রোজিনার স্বামী রফিকুল আলম চৌধুরী দীর্ঘদিন থেকেই সৌদি আরব থাকেন। সৌদি থেকে ফিরে ৯ বছর আগে তিনি পারিবারিকভাবে বিয়ে করেন রোজিনাকে। তাদের বড় মেয়ের জন্মের পর আবারো সৌদি আরব চলে যান। এরই মধ্যে একবার ছুটিতে দেশে ফেরেন। ওই সময় জন্ম নেয় ছোট মেয়ে। এরপর আবারো চলে যান তিনি। বর্তমান সেখানেই অবস্থান করছেন।
বিয়ের পর রোজিনা একই জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরফকিরা গ্রামে থাকতেন। সন্তানদের লেখাপড়ার কথা বিবেচনা করে দুই বছর আগে তিনি ঢাকায় এসে বসবাস শুরু করেন। যে বাসায় খুন হয়েছেন সেই বাসায় তিনি একমাস আগে উঠেছেন বলে তার ভাই আবুল কাশেম জানান।
তিনি বলেন, তাদের ধারণা টাকা-পয়সা সংক্রান্ত বিষয়ের জের ধরে তাকে হত্যা করা হয়েছে। রফিকুলের ভাগ্নে শাকিল বিভিন্ন সময় রোজিনার মোবাইল ফোন থেকে টাকা কৌশলে আত্মসাৎ করতো বলে তারা জানতে পেরেছেন। এ ব্যাপারে তার বোন একটি সাধারণ ডায়েরিও করেছিল।
রোজিনার ভাই ফিরোজ জানান, শাকিল মাঝে মাঝে রোজিনার বাসায়ও যাওয়া-আসা করতো। রোজিনার স্বামী রফিকুল ইসলাম তার ভাগিনা শাকিলের কাছেও টাকা পাঠাতো। ওই টাকা অনেক সময় আত্মসাৎ করতো সে। এ নিয়েও কিছুদিন ধরে রোজিনা ও শাকিলের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিলো। এ দ্বন্দের জের ধরে তাকে হত্যা করা হতে পারে বলে দাবি করেন তিনি।
নিহতের সুরতহাল প্রতিবেদনে কাফরুল থানার এসআই হাফিজ রোজিনার গলা থেকে ঘাড় পর্যন্ত গভীরভাবে কাটা হয়েছে বলে জানান। থুঁতনি ও কানের পেছনেও কাটা দাগ রয়েছে। দুই পায়ের হাঁটুর পেছনে ও হাতের কব্জির ওপরে কাটা চিহ্ন রয়েছে।
এসআই হাফিজ জানান, রোজিনার বড় মেয়ে মিনহার বর্ণনা থেকে জানা যায়, সকালের দিকে কলিংবেলের শব্দ শুনে সে দরজা খুলে দিলে শাকিল বাসায় প্রবেশ করে। ওই সময় তার মা বাথরুম থেকে বের হয়েছিলেন। পরে টেনে হিঁচড়ে শাকিল তাকে আবারো বাথরুমে নিয়ে গিয়ে ধারালো চাকু দিয়ে তার মাকে হত্যা করে। দুই সন্তানের সামনেই তাকে হত্যা করা হয়। হত্যার পর সে পালিয়ে যায়। যাওয়ার আগে মিনহাকে শাসিয়ে যায় যেন, এ কথা কাউকে না বলে। বললে মেরে ফেলারও হুমকি দেয় শাকিল।
এসআই হাফিজ আরো জানান, তাদের ধারণা টাকা-পয়সা সংক্রান্ত বিষয়ের জের ধরেই নৃশংস এ হত্যাকাণ্ড। তদন্তের ক্ষেত্রে এ বিষয়টিকেই অধিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। আর কোনো কারণ রয়েছে কিনা সেসব বিষয়ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি জানান, ঘটনার পর থেকে আসামি আহমেদ শরীফ শাকিল পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তার করতে পুলিশ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
নোয়াখালীতে অস্ত্র ঠেকিয়ে কিশোরীকে অপহরণের অভিযোগ
নোয়াখালীর সদর উপজেলায় অস্ত্র ঠেকিয়ে সতের বছর বয়সী এক কিশোরীকেবিস্তারিত পড়ুন
ভিক্ষুকে সয়লাভ নোয়াখালীর শহর
নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদী এখন ভিক্ষুকের শহরে পরিণত হয়েছে। যদিওবিস্তারিত পড়ুন
নোয়াখালীতে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষ
পেট্রলবোমা হামলার মামলায় দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাবিস্তারিত পড়ুন