পছন্দের প্রতিষ্ঠানে ভোটকেন্দ্র পেতে আবেদনের হিড়িক
আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে পছন্দের প্রতিষ্ঠানে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করতে বর্তমান ও সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) এবং সম্ভাব্য প্রার্থীদের তদবির চলছে। পছন্দের স্থানে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের জন্য নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয় ও জেলা নির্বাচন অফিসগুলোতে চিঠিও দিয়েছেন অনেকে।
এছাড়া কেউ কেউ খসড়া ভোটকেন্দ্র নিয়ে আপত্তি জানিয়ে বিদ্যমান কেন্দ্র বহাল রাখারও দাবি জানাচ্ছেন। ইসি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্রটি জানায়, ইসি সচিবালয় ও মাঠ পর্যায়ের অফিসগুলোতে প্রায় হাজারখানেক দাবি-আপত্তি জমা পড়েছে। এসব দাবি-আপত্তি নিষ্পত্তি করে ৬ সেপ্টম্বর ভোটকেন্দ্রের তালিকা চূড়ান্ত করবে ইসি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির সহকারী সচিব রৌশন আরা বেগম বলেন, ভোটকেন্দ্র নিয়ে অনেকেই আবেদন করেছেন। এসব আবেদন নিষ্পত্তি করতে মাঠ পর্যায়ে চিঠি দেয়া হয়েছে।
খসড়া ভোটকেন্দ্রের তালিকা অনুযায়ী, ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৪০ হাজার ৬৫৭টি। ভোটকক্ষ (বুথ) ২ লাখ ৯ হাজার ৪১৮টি। চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর ভোটকেন্দ্র ও কক্ষের এ সংখ্যার কিছুটা কমবেশি হতে পারে।
এর আগে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের স্যংখা ছিল ৩৭ হাজার ৭০৭টি ও ভোটকক্ষ ১ লাখ ৮৯ হাজার ৭৮টি। এ হিসাবে এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৯৫০টি ভোটকেন্দ্র ও ২০ হাজার ৩৪০টি ভোটকক্ষ বেড়েছে বলেও ইসি সূত্র জানায়।
সূত্র আরও জানায়, পছন্দের প্রতিষ্ঠানে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করার জন্য অনেকে ইসি আবেদন করেছেন। আবার অনেক এমপি সরাসরি কমিশনে এসে পছন্দের ভোটকেন্দ্রের জন্য তদবিরও করেছেন যা নিষ্পত্তি করতে সংশ্লিষ্ট জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদেরই এসব আবেদন নিষ্পত্তি করতে হবে।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, তাদের মধ্যে অনেকেই স্ব স্ব জেলার ভোটকেন্দ্র নির্ধারণে স্থানীয় প্রভাবশালীদের চাপের মুখে পড়েছেন।
জানা গেছে, লালমনিরহাট পাটগ্রাম উপজেলার একটি ভোটকেন্দ্র পরিবর্তনের জন্য ইসির সচিবকে একটি উপানুষ্ঠানিক পত্র দিয়েছেন লালমনিরহাট-১ আসনের এমপি মো. মোতাহার হোসেন। এতে তিনি ওই উপজেলার বানিয়াডাঙ্গী ভোটকেন্দ্রটি পরিবর্তন করে মধ্য ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থানান্তরে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানান।
এর স্বপক্ষে যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, বানিয়াডাঙ্গী কেন্দ্রটি জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত এলাকায় অবস্থিত। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে এ কেন্দ্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া এ কেন্দ্রের যাতায়াত ব্যবস্থাও ভালো নয় বলেও চিঠিতে উল্লেখ করেন।
এছাড়া ঢাকা-৯ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী মুগদার মান্ডা ইউনিয়নের একটি ভোটকেন্দ্র পরিবর্তনের জন্য অনুরোধ জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) কাছে চিঠি দেন।
নিজ প্যাডে দেয়া ওই চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, মান্ডা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডে অবস্থিত জান্নাতুল ফোরকানিয়া মহিলা মাদ্রাসা ভোটকেন্দ্রটি স্থানান্তর করে আইসিএস পাবলিক স্কুলে স্থাপন করার জন্য এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে আবেদন জানানো হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন এখনো কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। উক্ত কেন্দ্রটির অবকাঠামোগত অবস্থা খুবই নাজুক ও রাস্তাঘাট চলাচলের অনুপযোগী বলে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ফরিদপুর-৪ আসনের দুটি কেন্দ্র বহাল রাখার পক্ষে অবস্থান নিয়ে সিইসিকে চিঠি দিয়েছেন জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য বেগম নিলুফার জাফর উল্লাহ।
চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এলাকায় নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারসহ নানা রকম পাঁয়তারা চলছে। ভাঙ্গা উপজেলার চান্দ্রা ইউনিয়নের সিঙ্গারডাক কেন্দ্রটি নদীর অপর পাড়ে নিয়ে যেতে ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পাঁয়তারায় লিপ্ত। অপরদিকে আজিমনগর ইউনিয়নের কার্নিকান্দা বোড অফিসে আগে ভোটকেন্দ্র ছিল। কিন্তু ২০১৪ সালে এ কেন্দ্রটি এ এস দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়। ফলে দুটি গ্রামের ভোটারদের অনেক পথ পাড়ি দিয়ে যেতে হয়। এমন অবস্থায় আগের দুই প্রতিষ্ঠানে কেন্দ্র বহাল রাখার দাবি জানান তিনি।
এদিকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ভোলা-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম সিইসির কাছে পাঠানো এক চিঠিতে খসড়া ভোটকেন্দ্র নিয়ে আপত্তি জানিয়ে উল্লেখ করেছেন, তার আসনে বেশ কয়েকটি ভোটকেন্দ্র পরিবর্তনের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে, যা বাস্তবায়িত হলে বহু ভোটার কেন্দ্রে যাবার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে এবং নির্বাচনের ব্যাপক কারচুপির সৃষ্টি হবে। চিঠিতে তিনি কয়েকটি ভোটকেন্দ্রের উদাহরণও দেন।
শরীয়তপুর-২ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য কর্নেল (অব.) শওকত আলী, খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শেখ মো. নুরুল হকসহ কয়েকজন চিঠি দিয়েছেন বলেও জানা গেছে।
এছাড়াও ঢাকার ২০টি আসনের ২ হাজার ৮৬৯টি ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ নিয়ে ৩০টির বেশি আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে ঢাকা-৫ আসনের কয়েকটি ভোটকেন্দ্র বাতিল করে নতুনভাবে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের জন্য আবেদন করেন ডেমরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জয়নাল আবেদীন।
এতে তিনি আমুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র বাতিল করে হাজী এম এ গফুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও জামিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসায় নতুন কেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব করেন। একইভাবে বাওয়ানা উচ্চ বিদ্যালয়ের কামারগোপ খলপাড়া (পশ্চিম পার্শ্বের ভবন) ভোটকেন্দ্রটি বাতিল করে কামারগোপ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন কেন্দ্র স্থাপনের দাবি জানান।
ভোটকেন্দ্র পরিবর্তনের বিষয়ে ইসি কর্মকর্তারা জানান, ভোটকেন্দ্র স্থাপন নীতিমালা অনুযায়ী কোনো ভোটকেন্দ্র বাতিল করা যাবে না। তবে কোথাও প্রয়োজন হলে নতুন করে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা করার জন্য আবেদন করা যাবে এমন বিধান রয়েছে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ফের ২ দিন রিমান্ডে আনিসুল হক
রাজধানীর বাড্ডা থানার স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা আল-আমিন হত্যা মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন
আমির খসরু: নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “গণতন্ত্রেরবিস্তারিত পড়ুন
জামিন পেলেন সাবেক বিচারপতি মানিক
অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের সময় সিলেটের কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত এলাকা থেকেবিস্তারিত পড়ুন