পথশিশুদের নিয়ে ভয়াবহ বাণিজ্য
রাজধানীর পরিবাগে পথশিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিয়ে সুনাম কুড়ানো শিশু স্কুলটি নিয়ে এখন শুরু হয়েছে বাণিজ্য। বেশ কয়েকটি ফান্ডের টাকা নিয়ে দেখা দিয়েছে মতবিরোধ। আর এই সুযোগে ‘হাসি মুখ’ নাম দিয়ে শিশু স্কুলটি নিজের কব্জায় নিয়েছেন নূসরাত একা নামের এক প্রভাবশালীর নারী। অভিযোগ উঠেছে সরকার দলীয় মন্ত্রী-এমপি ও ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে শিশু স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতাকে বের করে দিয়েছেন তিনি। নিজের অনুদানে শিশু স্কুল ‘হাসি মুখ’ চলছে বলে নূসরত একা দাবি করলেও এতো টাকা কোন উৎস থেকে আসছে এটা নিয়ে দেখা দিয়েছে সন্দেহ। পথশিশুদের এই স্কুল ‘প্রথম সূর্য’ নামে যাত্রা শুরু করলেও কেন এখন তার নাম পরিবর্তন করে ‘হাসি মুখ’ রাখা হয়েছে এটা নিয়ে নানা অভিযোগ উঠেছে।
স্কুলটির সংশ্লিষ্ট একটি ঘনিষ্ট সূত্র বলছে, এই স্কুল পরিচালনা নিয়ে দীর্ঘদিন ঝামেলা করে আসছিলেন নূসরাতএকা। স্কুলটি পরিচালনার জন্য গঠিত ভলেন্টিয়ার (স্বেচ্ছাসেবক) কমিটিতে আসার জন্যও নানা কৌশল নিয়েছিলেন। এরই অংশ হিসেবে এখন স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির সহায়তায় এক বছর আগে নিজেই এর নিয়ন্ত্রণ নেয়। পরে নাম পরিবর্তন করে হাসি মুখ রাখেন। এরপর প্রথম সূর্য স্কুলের অনুদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নানা অভিযোগ দিতে থাকেন। পরে বাধ্য হয়ে প্রথম সূর্য স্কুল থেকে সরে আসেন প্রতিষ্ঠাতা নাসির উদ্দিন বিশ্বাস রুবেল।
জানতে চাইলে রুবেল বলেন, “পথশিশুদের জন্য আমরা ‘প্রথম সূর্য’ প্রতিষ্ঠা করি। এটার পিছনে জাপানি এবং বাংলাদেশি একটি প্রতিষ্ঠানের অবদান রয়েছে। তাদের প্রত্যক্ষ অনুদানেই এটি চলতো। হঠাৎ করে ২০১৪ সালের অক্টোবর-নভেম্বর মাসে নূসরাতএকা আমাদের স্কুলে সহায়তা দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। বিজয় দিবসে স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে খাবার বিতরণ করেন। এরপর উনি স্কুলটি নিজের হাতে নিতে ভলেন্টিয়ারদের সাথে নিজের হাতে নেওয়ার অপকৌশল শুরু করেন।”
পথশিশুদের নিয়ে ‘প্রথম সূর্য’ থেকে ‘হাসি মুখ’ নাম পরিবর্তন এবং এটা নিয়ে দ্বন্দ্বের বিষয়ে অনুসন্ধানে জানা গেছে, শিশুদের মাঝে বিনা পয়সায় শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিয়ে প্রথম সূর্য বেশ সুনাম অর্জন করে। প্রথম সূর্য নিয়ে একাধিক সংবাদ প্রকাশ পেয়েছে। এটার ওপর তথ্যচিত্র তৈরি করেছে এটিএন নিউজ। এছাড়া বিটিভিতে তিন সিরিজের নিউজ, ডেইলি স্টার, কালেরকণ্ঠ, প্রথম আলো এবং ইত্তেফাকসহ গোটা দশেক পত্রিকায় বিশেষ সংবাদ বের হয়েছে। প্রথম সূর্য স্কুলটির নামে একটি অনুদান মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় বরাদ্দ দিয়েছে বলেও জানা গেছে। একই সাথে জাপানি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘তাগুচি কন্সট্রাকশন কোম্পানি’ এই পথশিশুদের নিরাপদে শিক্ষা ও বসবাস নিশ্চিত করতে একটি সেফ হোম পরিচালনা করার অনুদানও দিয়েছে।
বিষয়টি সত্য জানিয়ে নাসির উদ্দিন বিশ্বাস রুবেল বলেন, ‘প্রথম সূর্য স্কুলে অনুদানের পাশাপাশি জাপানি অনুদানে উত্তরায় একটি সেন্টার হোম চলছে। এখন সেখানে ২৩ জন শিশু রয়েছে। এই অনুদান নিয়ে বছর খানেক আগে একটি কমিটি করার প্রস্তাব আসে। এরপর ওই কমিটির স্থায়ী সদস্য হতে চাপ দেন বর্তমানে ‘হাসি মুখ’ নামে চলমান স্কুলটির বেশ কয়েকজন ভলেন্টিয়ার। যারা এখন নূসরাতএকার সাথে কাজ করছে। সে সময় প্রথম সূর্য স্কুলের চেয়ারম্যান ওয়াহিদা শিরীন পপি এর বিরোধিতা করেন। পরে তারা ক্ষেপে গিয়ে একার সঙ্গে মিলে প্রথম সূর্য স্কুলের দখল নেয়।”
এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে নিজেকে ‘হাসি মুখ’ পথশিশু স্কুলে একজন ডোনার বলে পরিচয় দেন নূসরাতএকা। তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করে বিডি টোয়েন্টিফোর লাইভ ডটকমকে জানান, এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ ভুল। রুবেল স্কুলের ভলেন্টিয়ারদের সাথে খারাপ ব্যবহার করায় সে নিজে থেকেই এখান থেকে সরে পড়েছেন। সৎ কাজের জন্য এ স্কুলের পিছনে আমি নিজে প্রতিমাসে ৪০ হাজার টাকা দিই।”
এসময় প্রতিষ্ঠানের তথ্য দেওয়ার কথা বলে এই প্রতিবেদককে একাকী সাক্ষাৎ করার জন্য প্রলোভন দেখান নূসরাতএকা। আর বিষয়টি নিয়ে আরো ভালো করে জানার জন্য নিজের চাচা সাহাবুদ্দিন চুন্নু নামে এক ব্যক্তির সাথে বসে আলোচনা করার আহ্বান জানান তিনি। একই সাথে এটা নিয়ে নিউজ না করার জন্য অনুরোধ করেন। ”
শিশুস্কুল নিয়ে গোপন এই বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর ‘প্রথম সূর্য’র যাত্রাকালীন ভলেন্টিয়ারদের নানাভাবে হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন নূসরাতএকা বলেও অভিযোগ উঠেছে। এমনকি মোবাইলে শাহবাগ থানার ‘ওসি’র পরিচয় দিয়ে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। ভলেন্টিয়ার রোকসানা সুমি বলেন, “একা আপু এক ব্যক্তিকে ফোন ধরিয়ে দিয়ে তার সাথে কথা বলতে বলে। উনি নিজেকে শাহবাগ থানার ওসি পরিচয় দিয়ে বলে- এই বিষয়টি জানানোর জন্য তোমার পানিশমেন্ট হবে। তুমি ঢাকা শহরে থাকতে পারবে না।”
পরে আমি শাহবাগ থানায় যোগাযোগ করলে তারা বিষয়টি অস্বীকার করেন বলেও জানান সুমি। এই সংবাদ সংগ্রহ করার পর এই প্রতিবেদককে ফোন দেন অনলাইন পত্রিকা রূপসী বাংলা ডটকমের সিইও হুমায়ূন আহমেদ। তিনি পথশিশু স্কুল ‘হাসি মুখ’ নিয়ে নানা তথ্য তুলে ধরে বলেন, “আপনাদের কাছে যেসব তথ্য গিয়েছে একটাও সত্য নয়। এখানে কোন ধরনের কোন ধরনের ফান্ডিং আসে না। যাবতীয় ফান্ডিং নূসরাত একা আপু একা করেন। আর প্রথম সূর্য নামে কোন স্কুলের নাম আমি জানি না।” বিডি টুয়েন্টিফোর লাইভ
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
রবিবার যেসব এলাকায় ১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না
গ্যাস পাইপলাইনের মেরামত কাজ ও জরুরি স্থানান্তরের জন্য রবিবার দেশেরবিস্তারিত পড়ুন
জেমিনি চ্যাটবটে যুক্ত হলো মেমোরি, যে সুবিধা পাওয়া যাবে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চ্যাটবট জেমিনিতে নতুন সুবিধা যুক্ত করেছে গুগল।বিস্তারিত পড়ুন
ঢাকা সিটি কলেজে ক্লাস বন্ধ রাখা নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত
ঢাকা কলেজের বাস ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত বুধবার সংঘর্ষেবিস্তারিত পড়ুন