পর্ণোগ্রাফিতে আসক্ত ১২ থেকে ১৭ বছরে কিশোর-কিশোরী
ইন্টারনেটের কল্যাণে ভাল মন্দ সববিষয়েই জানা, দেখা ও শোনা এখন বলতে গেলে হাতের মুঠোয়। হ্যা মুঠোফোনে ইন্টারনেটে এখন খবর থেকে শুরু করে চলচ্চিত্র, ভিডিও ক্লিপ সবই দেখছে মানুষ। এর সাথে সাথে কিছু মন্দ জিনিষ অপসংস্কৃতির ধারাতেই চলে আসছে মানুষের নজরে। ফলে এধরনের মন্দ অভ্যাসে অনেকে আসক্ত হয়ে পড়ছেন। কিশোর কিশোরী থেকে শুরু করে বয়স্করাও আসক্ত হচ্ছে এধরনের বিভিন্ন ক্ষতিকর অভ্যাসে যার একটি হচ্ছে পর্ণোগ্রাফি। পর্ণোগ্রাফির ছোবলে নৈতিকতার অবক্ষয় যেমন হচ্ছে, নারী নির্যাতন বাড়ছে, দম্পতিদের মধ্যে বিশ্বাস ভঙ্গের কারণসহ নানা ধরনের সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।
অথচ প্রতিবছর পর্ণোগ্রাফি তৈরি করে ৫৭ বিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নিচ্ছে এধরনের নীলছবির নির্মাতারা। খ্রিস্টিয়া নেট সার্ভেতে দেখা গেছে ৫০ ভাগ খ্রিস্টান পুরুষ ও ২০ ভাগ নারী পর্ণোগ্রাফিতে আসক্ত। বাংলাদেশেও শহর থেকে শুরু করে গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে এ কুঅভ্যাস। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাকাডেমি অব মেটরিমনিয়াল ল’ইয়ারস’এর এক জরিপে বলা হয়েছে, ৬৮ ভাগ নারী কিংবা পুরুষ যারা ইন্টারনেটে নতুন সঙ্গী খোঁজেন তাদের ৫৬ ভাগ নেটে এক পর্যায়ে পর্ণোগ্রাফিতে আসক্ত হয়ে পড়েন।
ইন্টারনেট ফিল্টার রিভিউয়ের আরেক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে প্রতি তিন জনের মধ্যে একজন নারী পর্ণোগ্রাফিতে আসক্ত। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল কোয়ালিশন ফর দি প্রটেকশন অব চিলড্রেন অ্যান্ড ফ্যামিলিস’এর এক হিসেবে দেখা গেছে ৩৫ বছরের কম বয়স এমন যারা যৌনতায় অত্যধিক আসক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছেন তাদের মধ্যে ৪০ ভাগ হচ্ছেন নারী। এরা এক সময় পর্ণোগ্রাফিতে মারাত্মকভাবে আসক্ত ছিলেন।
ইন্টারনেট ফিল্টার রিভিউ ডটকম বলছে, পর্ণোগ্রাফি দেখছে এমন দর্শকের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে যাদের বয়স ১২ থেকে ১৭ বছর। এমনকি ১১ বছরের শিশুরাও পর্ণোগ্রাফির ছোবলে আক্রান্ত হচ্ছে। এধরনের পরিস্থিতিকে ভীতিকর হিসেবেই দেখছেন সামাজিক বিজ্ঞানীরা।
বাইবেলে বলা হয়েছে, নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখ এবং সজাগ থাক। কারণ তোমার শত্রু শয়তান চারপাশে ওঁত পেতে আছে কাউকে না কাউকে গ্রাস করার জন্যে। (পিটার ৫:৮) এমন অনেকে আছেন যারা বলেন, পর্ণোগ্রাফিতে ক্ষতির কিছু নেই। কিন্তু যারা পর্ণোগ্রাফিতে অভিনয় করেছেন এক সময় তাদের বক্তব্য শুনলেই বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যাবে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে পর্ণোগ্রাফিতে অভিনয় করেছেন এমন কলাকুশলীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি।
সামাজিক বিজ্ঞানীরা ছাড়াও ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের পক্ষ থেকে পর্ণোগ্রাফিকে সরাসরি পাপ বলেই অভিহিত করা হচ্ছে। এজন্যে অনেকে ধর্মীয় ব্যক্তিত্বকে মৌলবাদি বলে তিরস্কার করতেও ছাড়ছেন না।
পর্ণোগ্রাফি প্রথমত আপনার জীবনে বিশ্বাসকে ভঙ্গ করে দেয়। বিয়ে জীবনটা বিশ্বাসের ভিত্তিতেই তৈরি হয়। যখন কোন স্বামী পর্নো ভিডিও দেখে তা তার স্ত্রী পছন্দ করেন না। স্বামীর এই পর্ণো দর্শনকে তিনি অপছন্দ করেন কারণ কোনো স্বামী বা স্ত্রী চাইবেন না তার সঙ্গী অন্য কারো প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ুক। পর্ণোগ্রাফি সে দরজাই খুলে দেয়। পর্ণোগ্রাফির প্রভাবে স্বামী অন্য নারীর প্রতি দুর্বল হয়ে সম্পর্কে জড়িয়ে পরে তখন পুরুষটি বুঝতে পারে না সে সঠিক পথে না বিপথে আছে। এক সময় এটি বিবাহিত জীবনে অবিশ্বস্ততার জন্ম দেয় এবং এধরনের বিপদজনক অবস্থা কোনো নারীর জীবনেও ঘটতে পারে কিংবা ঘটছে।
পর্ণোগ্রাফি দেখার পর আপনার মনে তুলনা তৈরি করা একধরনের বিধ্বংসী পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। নিজের ও নিজের সঙ্গীর সঙ্গে পর্ণোগ্রাফিতে অভিনয় যারা করছেন সেই সব নারী ও পুরুষের সঙ্গে নিজেদের তুলনা এক পর্যায়ে অন্য কারো প্রতি আসক্ত করতে বাধ্য করে। এভাবেই পর্ণোগ্রাফি দেখে যে কেউ তার সঙ্গীর প্রতি অকৃতজ্ঞ হয়ে উঠতে পারে। অথচ আপনার উচিত সঙ্গীর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা।
তৃতীয়ত পর্ণোগ্রাফি আপনার আত্মসম্মান বোধ নষ্ট করে। নগ্ন অবস্থায় জীবন সঙ্গীকে তার আত্মবিশ্বাস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে সহজেই দুটি বিষয়ের পার্থক্য আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন।
পর্ণোগ্রাফি অপ্রাকৃতিক ও অপ্রত্যাশিত সমস্যা তৈরি করে। পর্ণোর কোন বাস্তব ভিত্তি নেই। এটি একটি মুভি ও এই কারণে অভিনেতা ও অভিনেত্রীদের টাকা পরিশোধ করতে হয়। তাদেরকে বিকৃতভাবে ও অনিচ্ছিকৃতভাবে কম বয়সীদের মাদকাসক্ত করে অস্বাভাবিকভাবে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যার কোনো বাস্তব ও সুস্থ ভিত্তি নেই। এ জন্য অনেকে পর্নোগ্রাফি দেখার পর তা নিজেদের যৌন জীবনে প্রয়োগ করতে যেয়ে সংসার জীবনে অশান্তি ডেকে আনেন। এর ফলে বিকৃত যৌনতায় নারী ও পুরুষ আবেগ ও শারীরিক যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন এমন উদাহরণও রয়েছে।
প্রথম দিকে পর্ণোগ্রাফির প্রতি তীব্র আকর্ষণ থাকলেও তা ধীরে ধীরে অন্তরঙ্গতা বিনষ্ট করে। পর্নোগ্রাফিতে একজন স্ত্রী বা স্বামী আসক্ত হয়ে যাওয়ার পর অন্যজনকে অবিশ্বাস করতে শুরু করে এমন ধরনের সমস্যাও হতে পারে। কিছু বিষয় গোপন থাকে বা গোপন রাখার চেষ্টায় দুজনের মধ্যে অন্তরঙ্গতা হ্রাস পায়। কারণ নারী বা পুরুষের মধ্যে একান্তই কিছু গোপনীয় ব্যাপার থাকলে তা প্রকাশ বা অপ্রকাশে একধরনের সমস্যা সৃষ্টি করে যা পারস্পরিক আস্থাকে নষ্ট করে। পর্ণোগ্রাফি এ সমস্যাকে উস্কে দিতে যথেষ্ট ভূমিকা নেয়।
পর্ণোগ্রাফি এক ধরনের অনুভূতি তৈরি করে যা কার্যত অশ্লীল। একটি পর্যায়ে তা অপমান ও লজ্জা বয়ে আনে। কারণ পর্ণোগ্রাফি আপনার যৌনাচরণে বিকৃত পরিবর্তন এনে দেয়। অনেকে প্রলুব্ধ করে পর্নো ছবি দেখতে। কারণ তাদের যুক্তি পর্নো ছবি দেখলে হতাশা ও ভয় দূর হয়। আদতে তা অভাগা করে তোলে। কারণ আপনার স্বাভাবিক যৌনতা পর্ণোগ্রাফি দেখার মাধ্যমে আপনাকে ছেড়ে চলে যায়। আপনি এমন সব আচরণে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন যা সহসা টের না পেলেও যখন ক্ষতিগ্রস্ত হন তখন আর করার কিছুই থাকে না। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়তি বিড়ম্বনা।
পর্ণো একধরনের আসক্তি যা আপনাকে কখনো তৃপ্ত করতে পারে না। গবেষণায় দেখা গেছে পর্ণো মস্তিষ্কে তাৎক্ষণিক উম্মাদনা তৈরি করে বলে এক ধরনের বিকৃত আনন্দ পাওয়া যায় যা কোকেনের চেয়েও বেশি আসক্ত করে তোলে। পর্ণোর আসক্তি মাদকের চেয়েও শক্তিশালী।
পর্ণো সব সময় আপনার যৌন চাহিদাকে অসন্তুষ্ট করে রাখে। এতে মন হয়ে পড়ে অশান্ত ও অতৃপ্ত। মন নিত্যনতুন বিকৃতি খুঁজতে থাকে পর্ণোগ্রাফি থেকে আরেক পর্ণোগ্রাফিতে। নেশা যেমন মানুষকে পূর্ণতৃপ্তি দিতে পারে না। পর্ণোর নেশাও তেমন এক ভিন্নধর্মী তির্যক আবেশ সৃষ্টি করে। মাদকে আসক্ত আর পর্ণে আসক্ত এই দুয়ের মধ্যে পার্থক্য হলো পর্ণে আসক্তরা নিত্যনতুন ভিন্ন দৃশ্য দেখতে চায় আর মাদকাসক্তরা একই মাদক বার বার নিতে চায়।
যৌনতার ভিন্ন চিত্র দেখাই পর্ণো ও নেশাগ্রস্তদের মধ্যে পার্থক্য টেনে দেয়। পর্ণের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তা আপনাকে লোভাতুর করে তোলে। লোভাতুর মন কখনই পরিতৃপ্ত হতে পারে না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, গলফ খেলোয়াড় টাইগার উডসের কথা। তিনি সুপার মডেলকে বিয়ে করেও অন্য নারীতে আসক্ত হয়ে পড়েন। অথচ তার সম্পদের পরিমাণ ৬’শ মিলিয়ন ডলার। পর্ণোগ্রাফি তার জীবনে সত্যি এক ভয়ঙ্কর দুশ্চিন্তা এনে দেয়। পর্ণোগ্রাফি প্রচ-ভাবে যৌনতায় বৈচিত্র বা পার্থক্য খুঁজতে প্রলুব্ধ করে যার আদতে কোনো শেষ নেই। কারণ প্রতিটি মানুষ একে অন্যের থেকে রং কিংবা শারীরিক বৈশিষ্ট্যে ভিন্ন। এভাবে আপনার পরিবার যদি পর্ণের ছোবলে ভেঙ্গে যায় তাহলে ব্রোকেন ফ্যামিলির সবচেয়ে বড় ক্ষতি বহন করতে হয় পরিবারটির ছেলেমেয়েদের।
পর্ণোগ্রাফি এভাবেই আপনাকে ধীরে ধীরে বিপথগামী করে। একের পর এক পর্ণো দেখেও মনে কোনো তৃপ্তি বা সন্তুষ্টি না আসায় আচরণ ধীরে ধীরে নষ্টামির দিকে যায়। পর্ণে আক্রান্ত হয়ে শিশুরাও এই বিপথগামীদের রোষানলে পড়ার খবরও গণমাধ্যমে পাওয়া যায়। অতিরিক্ত পর্ণো ছবি দেখে মন বিকৃত হয়ে কোমলমতি শিশুরা বিপথে যায়। বিপথে যেয়েই সে ক্ষান্ত হয় না, একটি পর্যায়ে সে অন্যকেও প্রলুব্ধ করে পর্ণো দেখতে এবং একধরনের প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে ওঠে সে। যা রীতিমত অসুস্থতার পর্যায়ে পড়ে।
টেড বান্ডি নামে এক শিশু হত্যাকারীর মৃত্যুদ- হবার পর তাকে জিজ্ঞেস করা হয় কেন সে ১২ বছরের একটি মেয়েকে হত্যা করেছিল। জবাবে টেড জানায়, পর্ণোগ্রাফিতে আসক্ত হবার পর তার মন ক্রমশঃ রুক্ষ হয়ে ওঠে এবং ১৩ বছর বয়স থেকে সে পর্ণোগ্রাফি দেখতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিল বলে অকপটে স্বীকার করে।
সামাজিক বিজ্ঞানীরা বলছেন, আমরা এমন এক সমাজে বাস করছি যেখানে মিডিয়াতেও আংশিক কিংবা আরো কিছুটা পর্ণোগ্রাফির বিচরণ বা অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু বৈবাহিক জীবন যদি সুন্দর ও পবিত্র রাখতে চান তাহলে সেখানে পর্ণোগ্রাফির কোনো স্থান নেই। আর পর্ণোগ্রাফিতে আসক্ত হয়ে পড়লে অবশ্যই আপনার মানসিক চিকিৎসার প্রয়োজন যা নিতে আপনার কখনই ইতস্তত করা উচিত নয়। কারণ পর্ণোগ্রাফি দেখার স্বাধীনতা আপনার থাকলেও এই স্বাধীনতা যদি আপনার জীবনকে বিষময় করে তোলে তাহলে এ স্বাধীনতার জন্যে আপনাকে আগ্রাসীমূলক জবাবদিহিতার জন্যে তৈরি থাকতে হবে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত চলায় এমবাপ্পেকে বিজ্ঞাপন থেকে সরাল রিয়াল
আর্থিক দ্বন্দ্বের মধ্যে পিএসজি ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে আসার পর একেরবিস্তারিত পড়ুন
ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর পদ হারালেন গাজীপুর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি
ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর সাংগঠনিক শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে গাজীপুর জেলা ছাত্রদলেরবিস্তারিত পড়ুন
ঢাকা উত্তর সিটির সাবেক মেয়র আতিকুল গ্রেপ্তার
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামকে রাজধানীরবিস্তারিত পড়ুন