পাঠ্যবইয়ে আবু সাঈদের মৃত্যুর তারিখে ভুল, প্রতিবাদে মানববন্ধন
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন যখন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছিল, সেই সময় গত বছরের ১৬ জুলাই দুপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্ক মোড়ে গুলিবিদ্ধ হন আবু সাঈদ। ২৫ বছর বয়সী আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন।
১৬ জুলাই শিক্ষার্থীদের মিছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্কের মোড়ে এলে তিনি ছিলেন সবার আগে। একপর্যায়ে পুলিশ গুলি ছুড়তে শুরু করলেও সাঈদ দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে থাকেন। তার এক হাতে ছিল লাঠি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে নিরস্ত্র আবু সাঈদের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে সারাদেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সোচ্চার হাজারো মানুষ। গতিশীল হয় কোটা সংস্কার আন্দোলন। আর পুলিশের বন্দুকের সামনে আবু সাইদের দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়ানোর ছবিটি হয়ে ওঠে আন্দোলনকারীদের অনুপ্রেরণা। ওই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের প্রায় ১৬ বছরের শাসনের অবসান ঘটে।
এদিকে, এ বছর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের নতুন পাঠ্যবইয়ে নানাভাবে উঠে এসেছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের কথা। গল্প-কবিতা, সংকলন এবং ছবি ও গ্রাফিতির মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের বিষয়বস্তু।
নবম-দশম শ্রেণির “ইংলিশ ফর টুডে” বইয়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে লেখা “গ্রাফিতি” নামে একটি অধ্যায় যুক্ত হয়েছে। এর শুরুতে রাজধানীর মেট্রোরেলের পিলারে আঁকা “হামাক বেটাক মারলু কেনে?” শীর্ষক একটি প্রতিবাদী লেখা যুক্ত রয়েছে। এর পরের পৃষ্ঠায় এই গণ-অভ্যুত্থানে শহিদ আবু সাঈদের কথা রয়েছে। বইয়ে পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদের নিহত হওয়ার তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ১৭ জুলাই। প্রকৃতপক্ষে এটি হবে ১৬ জুলাই।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে এই ভুলের কথা স্বীকার করেছেন। তারা দ্রুতই এ বিষয়ে সংশোধনী দেবেন বলে জানিয়েছেন।
এদিকে আবু সাঈদের হত্যাকাণ্ডের তারিখ পরিবর্তনসহ নতুন পাঠ্যপুস্তকে ইতিহাস বিকৃতির প্রতিবাদে রংপুরে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার (৬ জানুয়ারি) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে শিক্ষার্থীরা এ প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেন।
সমাবেশ থেকে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে পাঠ্যপুস্তকে আবু সাঈদের মৃত্যুর তারিখসহ অন্যান্য বিষয় সংশোধন করার দাবি তোলা হয়। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয় সমাবেশ থেকে।
সমাবেশে বক্তব্য দেন রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী শামসুর রহমান সুমন, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী রহমত আলী প্রমুখ।
তারা বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানের প্রতীক শহিদ আবু সাঈদকে নিয়ে এনসিটিবির যে কুচক্রীরা ষড়যন্ত্রে জড়িত তাদের আইনের আওতায় না আনলে ছাত্র-জনতা তা মেনে নেবে না। তারা ইচ্ছাকৃতভাবে আবু সাঈদকে বিতর্কিত করার জন্য এ কাজ করেছে।”
শিক্ষার্থীরা আরও অভিযোগ করেন, “আবু সাঈদ গত বছরের ১৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে পুলিশের গুলির বিপরীতে বুক উঁচিয়ে দাঁড়ান। ভয় না পেয়ে তিনি সেখানে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকেন। এরপরেই পুলিশ তাকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে। অথচ এবারের নতুন পাঠ্যপুস্তকে তার শহিদ হওয়ার তারিখ ১৭ জুলাই উল্লেখ করা হয়েছে। যা বর্তমান প্রজন্মের কাছে ভুল বার্তা পৌঁছাবে।”
এছাড়াও আবু সাঈদ সম্পর্কে বিকৃত তথ্য দেওয়া হয়েছে বলে সমাবেশে অভিযোগ তোলা হয়।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
বিসিএসে চিকিৎসকদের বয়স বাড়াতে আল্টিমেটাম
বিসিএস পরীক্ষার আবেদনে চিকিৎসকদের বয়স বৃদ্ধির দাবিতে সরকারকে এক সপ্তাহেরবিস্তারিত পড়ুন
ছাত্রশিবিরের উপস্থিতিতে অসন্তোষ, ‘জাতীয় সংলাপ’ বর্জন ছাত্রদলের
“জাতীয় রাজনীতির সংস্কার: প্রসঙ্গ ডাকসু, জাকসু, চাকসু, রাকসু” শীর্ষক জাতীয়বিস্তারিত পড়ুন
৪৩তম বিসিএসে বাদ পড়াদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সভায় বসছে মন্ত্রণালয়
৪৩তম বিসিএস পরীক্ষায় নির্বাচিতদের মধ্যে চূড়ান্ত প্রজ্ঞাপনে বাদ পড়া ২২৭বিস্তারিত পড়ুন