খালেদা জিয়ার ভাষণে জাতির প্রাণশক্তি
পার্টি থেকেই শুরু হোক যাত্রা, কথা-কাজে মিল চাই
শৈশব থেকেই বেগম খালেদা জিয়াকে জানি। সেটি ছিল বাবার রাজনীতির সূত্রে জানা। তবে গত এক যুগ ধরে অনেক কাছে থেকেই জেনেছি সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে। সাংবাদিকতা পেশার সুবাদে গত এক দশকে জিয়া পরিবারের ভেতরে-বাইরের অনেক কিছুই ফলো করতে হয়েছে। বিশেষ করে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, বর্তমান চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের রাজনৈতিক প্রায় সব বক্তৃতা পড়ার সুযোগ হয়েছে আমার। রাজনৈতিক বিটে সাংবাদিকতা, লেখালেখি ও গবেষণা কাজের সূত্রেই সেসব সংগ্রহ করেছি। পড়েছি, বিশ্লেষণ করেছি। সংবাদকর্মী হিসেবে গত প্রায় এক যুগ সভা-সমাবেশ ও সংবাদ সম্মেলনে বর্তমান দুই নেতার বক্তৃতা শুনেছি, লিখেছি।
প্রিয় পাঠক, বিএনপির কাউন্সিল নিয়ে গত দু’দিন আপনারা আমার দু’টি আর্টিকেল পড়েছেন। এতে আমি বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিএনপির কাছে জনপ্রত্যাশা তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলাম। শনিবার বিএনপির কাউন্সিল অধিবেশন হয়ে গেল। সেখানে জনউচ্ছাস ছিল, নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও একটি ভাল অনুষ্ঠান করেছে দলটি।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতো আমারও দৃষ্টি ছিল, এই কাউন্সিলে বিএনপির অর্জন পর্যবেক্ষণ করা। রাজনৈতিক কি পলিসি দলটি ঘোষণা করে। অর্থাৎ চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার ভাষণকেই আমি বেশী গুরুত্ব দিয়েছি। তিনবারের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর সোয়া এক ঘন্টার ভাষণটি আমি তিনবার পড়েছি। বুঝতে চেষ্টা করেছি। খুঁজতে চেষ্টা করেছি, এই ভাষণে নাগরিকদের জন্য তিনি কি খোরাক দিয়েছেন। ক্ষমতাসীনদের মতো নেতাকর্মীদের স্বপ্ন পূরণের ঘোষণা, না-কি সত্যিকার অর্থেই একজন রাষ্ট্রনায়কের ভিশন ঘোষণা করেছেন, তা বিশ্লেষণের চেষ্টা করেছি।
আপনারা জানেন, বেগম খালেদা জিয়া তাঁর রাজনৈতিক ভিশন ২০৩০-এর আংশিক ঘোষণা করেছেন। আমি তাঁর ভাষণ বিশ্লেষণে যাব না। তবে এতটুকু বলবো, এই ভাষণ বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে কার্যকর, সময়োপযোগী এবং গণমুখি। আপনি ১৯৯১ সালের নির্বাচনী ভাষণ কিংবা অন্য যে কোনো ভাষণের প্রসঙ্গ সামনে আনতে পারেন, কিন্তু আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি- এটা বেগম খালেদা জিয়ার জীবনের শ্রেষ্ঠ ভাষণ। এই ভাষণে ক্ষুধার্তদের জন্য খাবারের আশ্বাস, তৃষ্ণার্ত মানুষের জন্য পানীয়, আর রক্তপিপাসুদের সুপথে ফেরার সুযোগ নিশ্চিত করা হয়েছে।
এই ভাষণের জন্য বেগম জিয়াকে জনসাধারণের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। এটি রচনায় যারা তথ্য সংগ্রহ ও সংযোজনে সহযোগিতা করেছেন, তাদের প্রতি আমি সম্মান জানাই। ভাষণে শিক্ষা, সংস্কৃতি, প্রশাসন, বিচার বিভাগ, গণমাধ্যম, পররাষ্ট্রনীতি সহ সব বিষয়েই পজেটিভ ধারার কথা বলা হয়েছে। শেখ মুজিবুর রহমান সহ সব জাতীয় নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি পজেটিভ রাজনৈতিক সংস্কৃতির মানসিকতা দেখিয়েছেন। তাঁর ভাষণে আছে গণমানুষের জীবনমানের কথা। সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার স্বপ্ন।
তবে বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি অনুরোধ, একটি সুন্দর ভাষণেই যেন আপনার কর্তব্য শেষ হয়ে না যায়। ভাল কথা তখনই জনগণের কাছে গ্রহণীয় হবে, যখন সেটি কার্যকরের উদ্যোগ দেখা যাবে। যদিও আপনার কথার অধিকাংশই সরকারে এলে বাস্তবায়ন-যোগ্য। কিন্তু যেগুলো ক্ষমতার বাইরেই করা সম্ভব, সেগুলো বাস্তবায়ন করে দেখান। মানুষ আপনাকে বিশ্বাস করবে। আপনার কথায় আস্থা আনবে।
একটু তেতো লাগলেও এ বিষয়ে আমি বেগম খালেদা জিয়ার ২০১২ সালের ভারত সফরের একটি অভিজ্ঞতার প্রসঙ্গ উল্লেখ করতে চাই। ওই সফরটি বিএনপির রাজনৈতিক ভিত্তিকে দূর্বল করে দিয়েছিল। কোনো প্রকার হোমওয়ার্ক ছাড়াই, অনেকটা অদক্ষ কুটনীতিকদের বুদ্ধিতে বিশেষ একটি ফাঁদে পা দিয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। ওই সফরে একজন সংবাদকর্মী হিসেবে আমিও ছিলাম। সফরের গভীরতা খুঁজতে আমি ঢাকায় ভারতের সাবেক হাইকমিশনার বীনা সিক্রি সহ কিছু থিংক-ট্যাংকের সাক্ষাতকার নিয়েছিলাম। তারা স্পষ্টভাবে বলেছিলেন, ‘বেগম জিয়ার সঙ্গে বৈঠকে আমাদের প্রতিনিধিদের যেসব আলোচনা হয়েছে, সেগুলো আমরা তখন-ই আমলে নেব; যখন দেখবো ঢাকায় ফিরে তিনি রাজনৈতিক মাঠে সেসবের বাস্তবায়ন করবেন।’ অর্থাৎ, বিএনপির সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নির্ধারণে তারা খালেদা জিয়ার বাস্তবের কর্মকেই প্রাধান্য দিয়েছিলেন। যাইহোক, গত ক’বছরে বাংলাদেশের মানুষকে এর মূল্য দিতে হয়েছে। দিচ্ছে। এখন উত্তরণ জরুরী।
এই প্রসঙ্গটির সূত্র ধরেই দল হিসেবে বিএনপি এবং এর চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান, আপনি যে ভিশন ২০৩০ ঘোষণা করেছেন, সেটি আমরা বাস্তবে দেখতে চাই। ‘রাষ্ট্রীয় গণতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠার আগে নাগরিকরা ‘দলীয় গণতন্ত্র’ দেখতে চায়। ‘রাষ্ট্রীয় সুনীতি’ নিশ্চিত
করতে আপনার দক্ষ-শিক্ষিত টিম দেখতে চায়। ‘প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য’ আনার প্রস্তাবকে আমরা স্বাগত জানাই। সেইসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপার্সনের ক্ষমতা যে বাড়ানো হলো, এক্ষেত্রে আপনার জবাব কি? এটা কী বৈপরীত্য হলো না?
আপনার দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ গঠনের প্রস্তাবকে সুস্বাগতম। গুনীদের সমন্বয়ে আপনি সংসদের উচ্চ কক্ষ প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন। আশা করি, আপনি শিগগিরই এই প্রস্তাবটির বিস্তৃত রূপ জনগণকে জানাবেন। এক্ষেত্রে আপনি, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ভারতের সংসদ পর্যালোচনা করে একটি উন্নততর পদ্ধতির রূপায়ন ঘটাতে পারেন। এ ধরণের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প পর্যালোচনায় কেবল দলীয় পদধারী নয়, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গবেষক ও একাডেমিশিয়ানদেরও সহযোগিতা নিন। বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বাস করে, বেগম খালেদা জিয়াকে দিয়ে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ সম্ভব। ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রীত্ব পদ ছেড়ে দিয়ে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক বিল পাশ করার উদাহরণ দেশবাসীর কাছে আছে।
আপনার ২০৩০ ভিশনে একটি উন্নত নৈতিক ভিত্তি সম্পন্ন শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের প্রায় সব দিকগুলো রয়েছে। এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, অধিকতর গুরুত্ব বিবেচনায় প্রস্তাবগুলোর বিস্তারিত পরিকল্পনা আপনি জনগণের সামনে পেশ করুন। গতানুগতিক রাজনৈতিক কর্মসূচির পাশাপাশি প্রতি মাসে আপনি একটি বিষয়ে বিশদ পরিকল্পনা জাতিকে জানান। এজন্য আপনি পৃথক টিম তৈরী করে দিতে পারেন। স্বস্ব বিষয়ে বিশেষজ্ঞের সমন্বয়ে গবেষক, শিক্ষাবিদ, পেশাজীবীদের সমন্বয়ে কমিটি তৈরী করা যেতে পারে। এসব টিম গণমাধ্যমে কথা বলবে না। অভ্যন্তরীণ কাজ করবেন তারা।
এক্ষেত্রে আপনি যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সহ উন্নত দেশগুলোর রাজনৈতিক দলকে অনুসরন করতে পারেন। বিএনপির নতুন যে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হবে, সেখানে সম্পাদকীয় পদ বন্টনে স্বস্ব ক্ষেত্রে দক্ষদের দায়িত্ব দিতে হবে। সম্পাদকীয় পদগুলোকে সক্রিয় করা জরুরী। এরা ছায়া কেবিনেটের আদলে কাজ করবে। ধরুণ, স্বাস্থ্য সম্পাদক প্রতি মাসে দেশের স্বাস্থ্য খাতের একটি রিপোর্ট তৈরী করবেন। স্বাস্থ্য খাতে বিএনপির নীতি কি হবে, সেটি তৈরী করতে যে টিম থাকবে, তাদেরকে নিয়ে মাসিক রিপোর্ট পর্যালোচনা বৈঠক করবেন স্বাস্থ্য সম্পাদক। সরকারের ভুলগুলো ধরিয়ে দেবেন এবং বিএনপির স্বাস্থ্য নীতিতে নতুন নতুন তথ্য-উপাত্ত যোগ করবেন। শিডিউল অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপার্সন জনগণের সামনে স্বাস্থ্যনীতি ঘোষণা করবেন। এভাবে সবগুলো সম্পাদকীয় পদকে সচল করতে সক্ষম হলে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য বাংলাদেশ গড়তে বিএনপির দক্ষতার ওপর মানুষ আস্থা রাখতে পারবে।
এখন দেখার বিষয়, বেগম খালেদা জিয়ার নতুন পথের যাত্রা কেমন হয়। তিনি কী পারবেন ভিশন ২০৩০ বাস্তবায়ন শুরু করতে? নতুন কমিটি দিয়েই এর যাত্রা হতে হবে। কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে আপনি প্রথমে একটি খসড়া তালিকা তৈরী করুন। সম্পাদক ও সহ-সম্পাদকের পদে দায়িত্ব দেয়ার আগে মনোনীতদের সঙ্গে পৃথকভাবে দশ মিনিট করে আলোচনা করুন। ছায়া কেবিনেটের মতো দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম ও ইচ্ছুক নেতাদের আপনি সম্পাদকীয় পদে দায়িত্ব দেন। যারা যোগ্য নন, কিন্তু দলের প্রতি ডেডিকেশন আছে; তাদের উপ-সম্পাদক পদবি দিয়ে দেন।
মহাসচিব পদটিকে সক্রিয় করুন। আপনার সিদ্ধান্তগুলোই মহাসচিবের মাধ্যমে তৃণমূলে বাস্তবায়ন করুন। সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বৃটেনে চিকিৎসাধীন আছেন। বৃটেনের মাটিতে থাকলেও তিনি খুব ভাল নেই। মা, মাটি ও দেশের মানুষের থেকে অনেক দূরে ভাল থাকা যায় না। কাউন্সিলে পার্টির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদের ক্ষমতা বাড়ানোর কথা শুনলাম। এ নিয়ে অনেক নেতা প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হন। বিষয়টি স্পর্শকাতর হলেও আপনার নজর দেয়া খুবই জরুরী। শুধু ক্ষমতা বাড়িয়ে কোনো লাভ নেই, সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে তারেক রহমানের সুসম্পর্ক জরুরী। তাঁর সঙ্গে স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা, যুগ্ম মহাসচিব ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে দলীয় কর্মসূচি ভিত্তিক পারস্পরিক যোগাযোগ স্থাপনের বিষয়টি এখন সময়ের দাবি। কোনো মধ্যস্থতায় নয়, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের সঙ্গে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সরাসরি কথা হতে হবে। সেটি হতে হবে দ্বিপাক্ষিক। উভয় পক্ষই এমন একটি সম্পর্ক বজায় রাখলে বিএনপি অনেক বেশী শক্তিশালী হবে। যদিও কিছু স্বার্থান্বেষী মহল, এই যোগাযোগ স্থাপনের বিরোধী। বাংলাদেশের মানুষের ভবিষ্যতের কথা ভেবে, জাতীয়তাবাদী আদর্শের স্থায়িত্বের কথা বিবেচনায় পার্টির চেয়ারপার্সন হিসেবে এমন একটি উদ্যোগ বেগম খালেদা জিয়াকে নিতেই হবে।
দলে গণতন্ত্র নিশ্চিত করতে ইউনিয়ন-উপজেলা ও জেলা নেতৃত্ব নির্বাচনে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি অনুসরন করা জরুরী। একবার ভুল নেতৃত্ব আসলেও ধারাবাহিকতায় দল অনেক বেশী শক্তিশালী হবে। বিএনপি শক্তিশালী হলে আপনি (বেগম খালেদা জিয়া) শক্তিশালী হবেন। আপনি শক্তিশালী হলে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ শঙ্কামুক্ত হবে। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ শক্তিশালী হলে বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংকটমুক্ত হবে। মানুষ পাবে স্বাভাবিক জীবনের নিশ্চয়তা। স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টিই এখন নাগরিকের সবচেয়ে বড়
চাওয়া। বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে টিকিয়ে রাখতে আপনাকে আরো একটু কষ্ট করতে হবে।
সাত দশকের জীবনে আপনি অনেক কষ্ট সহ্য করেছেন। এজন্য আল্লাহ আপনাকে অনেক দিয়েছেন। জনপ্রিয়তার মাপকাঠিতে আপনার ধারেকাছেও কেউ নেই। জনগণের ভোটে যদি জনপ্রিয়তা বোঝায়, তাহলে আপনি-ই এই ভূখন্ডের এ যাবৎকালের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী। জীবনসায়াহ্নে এসে আপনি একটি ‘নতুন বাংলাদেশ’ গঠনের কথা বলেছেন। নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি, নতুন চেতনা, নতুন উদ্দীপনা। আপনার দলের এক নেতা আপনার নতুন পথকে ক্রিকেটিয় ভাষায় ‘টি-টুয়েন্টি’ ম্যাচের সাথে তুলনা করেছেন। শনিবারের কাউন্সিল অধিবেশনে রাঙামাটি সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মামুনুর রশিদ মামুন আপনার উদ্দেশ্যে বলেন, ‘বিগত দিনে ওয়ানডে খেলেছি। আপনি খেলোয়াড় নির্বাচন করেছিলেন। আমরা ওয়ানডে, টেস্ট খেলেছি। আমরা এখন টি-টোয়েন্টি খেলতে চাই। এই খেলার খেলোয়াড় আপনি নির্বাচন করবেন।’ এই নেতা ‘টি-টুয়েন্টি’ ম্যাচ বলতে যা-ই বোঝাতে চেষ্টা করুন, আপনার (বেগম খালেদা জিয়ার) ভাষণের সঙ্গে সামঞ্জস্য করলে এর অর্থ হবে- ‘কম সময়ে দেশের উন্নয়নে বেশী ও ভাল কিছু করা’।
এই ভাল কিছু করার উদ্যোগ আপনাকে পার্টি থেকেই শুরু করতে হবে। নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের পাশাপাশি আপনি সাবেক ছাত্রনেতাদের সমন্বয়ে আপনার ব্যক্তিগত টিম সমৃদ্ধ করুন। যাদেরকে আপনার টিমে নিবেন, তাদেরকে আপনি সুনির্দিষ্ট কাজ ঠিক করে দিন। অঙ্গদলগুলোকে নতুন করে সাজানোর উদ্যোগ নিন। দুই বছর পর পর নতুন কমিটি নিশ্চিত করুন।
সকল বাধা উপেক্ষা করে আপনি ভিশন ২০৩০ বাস্তবায়ন শুরু করুন। ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার অভিজ্ঞতা বাংলাদেশে যে কারো চেয়ে আপনার অনেক বেশী। একটু সচেতনতা অবলম্বন করুন। আপনার দৃঢ় মনোবল বাংলাদেশ রাষ্ট্র রক্ষার প্রধান অস্ত্র। আপনি-ই এখন জাতির ভরসা। নতুন ভিশন ঘোষণার পর জাতি বিশ্বাস করে আপনি পারবেন। আপনার ভাষণে মানুষ প্রাণশক্তি ফিরে পেয়েছে। গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষ, রাজধানীর নাগরিক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, পেশাজীবীদের মনোবল ফিরে এসেছে। বিলেত, মার্কিন মুল্লুক, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য থেকে আপনার ভাষণের প্রশংসায় ফোন পেয়ে আমাদের মতো ক্ষুদ্র সংবাদকর্মীরাও উজ্জীবিত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গণপ্রতিক্রিয়ায় মানুষের মনোবল ফিরে পাওয়ার প্রতিধ্বনি শোনা গেছে।
সামাজিক বিশৃঙ্খলা নিরসন ও দেশকে সংকটমুক্ত করতে আপনার বিকল্প নেই। দেশনেত্রী, আপনি যে ক্যাপ্টেনের ভুমিকায় আছেন। অন্ধের যষ্ঠি হিসেবে একটি দেশের, একটি জাতির ভবিষ্যতের দায়িত্ব আপনাকে নিতেই হবে। আপনার দুঃখের দিন; পরিবারহীন জীবনের কষ্ট, বাংলাদেশের মানুষ জানে, বোঝে। এজন্যই তো গণতান্ত্রিক সংগ্রামে সহ¯্রাধিক মানুষ জীবন দিতেও দ্বিধা করেনি। আরো অসংখ্য তরুন, যুবক, বৃদ্ধ রক্ত দিয়েছে। পা হারিয়েছে, চোখ হারিয়েছে। আপনার উপর ভরসা করে বহু তরুন এখনও জীবন বাজি রাখতে বদ্ধপরিকর। তাই শক্তহাতে দল গড়ুন। দৃঢ় মনোবলে এগিয়ে যান। অন্ধকারের পেছনে থাকা আলোকে দ্রুত ফিরিয়ে আনতে হবে। রক্তের বদলে রক্ত নয়, জীবনের বিনিময়ে জীবন নয়; নতুন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ হবে ঐক্যের, সাম্যের, সহমর্মিতার, ভ্রাতৃত্ববোধের, সমৃদ্ধির বাংলাদেশ – এই প্রত্যাশা রাখছি।
লেখক: যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত সাংবাদিক ও গবেষক।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ডিএমপি: ৫ আগস্ট পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. সারোয়ার জাহানবিস্তারিত পড়ুন
আমির খসরু: নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “গণতন্ত্রেরবিস্তারিত পড়ুন
নারায়নগঞ্জে কোটা আন্দোলনকারীর উপর আক্রমন
নিজস্ব প্রতিবেদক : নারায়নগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ এলাকায় কোটা আন্দোলনকারী সংগঠকবিস্তারিত পড়ুন