পার্লামেন্ট ওয়াচ নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় টিআইবির ব্যাখ্যা

দশম জাতীয় সংসদের কার্য্কারিতা সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিবেদন নিয়ে বিভিন্ন মহলের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার পরিপ্রেক্ষিতে নিজেদের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিল ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
গত ২৫ অক্টোবর ‘পার্লামেন্ট ওয়াচ : দশম জাতীয় সংসদ- দ্বিতীয় থেকে ষষ্ঠ অধিবেশন (জুন ২০১৪- জুলাই ২০১৫)’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজামান সংসদ সম্পর্কে বিভিন্ন মন্তব্য করেন। তার এ মন্তব্যে রাজনৈতিক মহলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
ওই প্রতিক্রিয়ার পরিপ্রেক্ষিতে রোববার টিআইবির পরিচালক (আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন) রিজওয়ান-উল-আলম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবির পক্ষে ব্যাখ্যা তুলে ধরা হয়।
ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে- ‘প্রতিবেদন প্রকাশের পর কয়েকজন মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও সরকার জোটের সমর্থক জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ মূলত তিনটি বিষয়ে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকা সম্পর্কে এক প্রশ্নের উত্তরে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. জামান বিরোধীদলের ভূমিকা ‘পুতুল নাচের নাট্যশালা’র মতো মনে হতে পারে বলে মন্তব্য করেন।
এ বিষয়ে টিআইবি মনে করে, যে তথ্য ও বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করে নির্বাহী পরিচালক এ মন্তব্য করেছেন, তার সারমর্ম হচ্ছে- দশম সংসদ গঠনের পর থেকে যে দলটি ‘প্রধান বিরোধী দল’ হিসেবে পরিচিতি গ্রহণ করেছে, তার পক্ষ থেকে একদিকে সরকারের মন্ত্রিসভার অংশ ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে তার শীর্ষনেতার অবস্থান এবং অন্যদিকে বিরোধী দল হিসেবে দ্বিমুখী অবস্থানের কারণে শুরু থেকে আত্মপরিচয়ের সংকটে রয়েছে। এটা কাটিয়ে ওঠার জন্য কোনো বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। এর ফলে প্রতিবেদনের মেয়াদে সংসদে তাদের ভূমিকায় যেমন দ্বিমুখী অবস্থানের প্রতিফলন ঘটেছে, তেমনি দৃশ্যমান হয়েছে স্বনির্ভরতা ও সত্যিকারের বিরোধী দলের প্রত্যাশিত দৃঢ় অবস্থানের ঘাটতি। সুনির্দিষ্ট বিস্তারিত তথ্য টিআইবির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে রয়েছে।
তাছাড়া ‘সংসদে সত্যিকারের বিরোধী দল নেই’ এটি শুধু একটি মন্তব্য নয়, বাস্তব সত্য হিসেবে সর্বজনবিদিত। এটা এমনকি সংসদ অধিবেশনেই সংসদ সদস্য কর্তৃক ব্যক্ত হয়েছে। দ্বিমুখী অবস্থান ও আত্মপরিচয়ের সংকটের প্রতিফলন ঘটেছে কথিত ‘প্রধান বিরোধী দল’ কর্তৃক সংসদে নিজস্ব ভূমিকা নিরূপনে ও তা পালনের ক্ষেত্রে। জাতীয় সংসদের মতো সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি কর্তৃক প্রত্যাশিত ভূমিকা পালনে এ ধরনের দ্বিধা ও দোদুল্যমানভাবে পুতুলসম আচরণ মনে হতে পারে, এরূপ মন্তব্য করে কাউকে আহত করা নির্বাহী পরিচালকের উদ্দেশ্য ছিল না। বরং এ অবস্থার পরিবর্তনের মাধ্যমে দশম জাতীয় সংসদকে অধিকতর কার্যকর করার উপায় অনুসন্ধানের গুরুত্বের প্রতি সকল অংশীজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। এই মন্তব্যটি টিআইবির নির্বাহী পরিচালক উল্লিখিত প্রতিবেদনে উত্থাপিত তথ্য ও বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করে নাগরিক হিসেবে সংবিধান প্রদত্ত অধিকার বলে তার নিজস্ব অভিমত হিসেবে করেছেন। এতে টিআইবির প্রাতিষ্ঠানিক অবস্থানের প্রতিফলন করা হয়েছে, এমন নয়।
একইভাবে ‘বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিতর্কমুক্ত নির্বাচন অপরিহার্য, যা কখন ও কীভাবে হবে তা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দই নির্ধারণ করবেন’, এর ব্যাখ্যায় টিআইবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে- ৫ জানুয়ারি ২০১৪ এর নির্বাচন বিতর্কিত ছিল। এটি সর্বজনবিদিত। সরকারের দায়িত্বপূর্ণ অবস্থানে আসীন সম্মানিতজনের বক্তব্যেও বিভিন্নভাবে তার প্রতিফলন ঘটেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সংসদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নতুন নির্বাচন সমাধান দিতে পারে কি না, এরকম প্রশ্নের উত্তরে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক যা বলেছেন, তার অংশ বিশেষের ওপর ভিত্তি করে কেউ কেউ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বাস্তবে নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘বিতর্কমুক্ত নির্বাচন অবশ্যই সমাধানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। তবে কখন ও কীভাবে উক্ত নির্বাচন হবে তা নির্ধারণ করবেন আমাদের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ।’ এ বক্তব্যকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বা কোনো বিশেষ মহলের সুবিধার্থে মনে করা ভিত্তিহীন।
সর্বশেষ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে অধিষ্ঠিত সম্মানিতজন কর্তৃক টিআইবির কার্যক্রমের অর্থসূত্র সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ ও টিআইবির বিরুদ্ধে আইএসসহ জঙ্গি সম্পৃক্ততা, সংসদের মর্যাদাহানি ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী তৎপরতা নিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়েছে। এর ব্যাখ্যায় টিআইবি বলছে- টিআইবির অর্থায়ন বিষয়ে সরকারের দায়িত্বপূর্ণ অবস্থান থেকে প্রশ্ন উত্থাপন, রাজনৈতিক যোগসাজস ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মর্যাদাহানির অভিযোগ যেমন নতুন কোনো বিষয় নয়, তেমনি ভিত্তিহীন। টিআইবি সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ব্যাতিরেকে একটি পয়সাও তার অর্থায়নের জন্য গ্রহণ বা ব্যয় করতে পারে না। তাছাড়া সংশ্লিষ্ট বিধি-নিয়ম অনুযায়ী টিআইবি তার আয়-ব্যয়ের সব হিসাব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিয়মিত সরবরাহ করে এবং আগ্রহী সবার অবগতির জন্য ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রকাশ করে থাকে। টিআইবি সম্পর্কে আইএস বা অন্য কোনো জঙ্গি ও দলীয় রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার অভিযোগ যে অর্থহীন ও ভিত্তিহীন তা বলারও প্রয়োজন টিআইবি মনে করে না। তবে সরকার বা অন্য কোনো পক্ষ যদি এ ধরনের বিষয়ে অনুসন্ধানে আগ্রহী হন, তাহলে টিআইবি সর্বতোভাবে সহায়তা প্রদানে উদ্যোগী হবে।
এ ছাড়া সংস্থাটির পক্ষ থেকে টিআইবির ওয়েবসাইটে প্রদত্ত পুরো প্রতিবেদনটি পড়ার আহ্বানের পাশাপাশি সংসদের কার্যক্রমকে গতিশীল ও কার্যকর করার জন্য টিআইবির ১২ দফা সুপারিশ বাস্তবায়নের আহ্বান জানানো হয়েছে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

ব্যাংকক থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা
ষষ্ঠ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণ শেষে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদবিস্তারিত পড়ুন

বিশ্বকবির ম্যুরাল থেকে কালি মুছে দিল উপজেলা প্রশাসন
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ম্যুরালে কালি দিয়ে মুখবিস্তারিত পড়ুন

ফখরুল: ইউনূস–মোদির বৈঠক আশার আলো দেখাচ্ছে
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন