পাহাড়-জঙ্গল ডিঙিয়ে মৃত্যুমুখ থেকে ভাইকে ফেরাল ১১ বছরের দিদি
মৃত্যুর মুখ থেকে ছোট্ট ভাইকে ছিনিয়ে নিয়ে এল নাবালিকা দিদি। এটুকু বললে অবশ্য কিছুই বলা হয় না। ১১ বছরের মালতী অসুস্থ অচেতন ভাই মাইকেলকে কাঁধে নিয়ে পাহাড়ি পথে ছুটল ৮ কিলোমিটার। একদম একা। মারণ রোগে আক্রান্ত মাইকেল। যমদূত আর মালতীর অসম লড়াই শেষে মাইকেল এখন সুস্থ।
ঘটনাস্থল ঝাড়খণ্ডের একেবারে পিছিয়ে পড়া জেলা গোড্ডা। প্রত্যন্ত প্রান্তে পাণ্ডববর্জিত গ্রাম চন্দনা। পাহাড় ডিঙিয়ে, জঙ্গল পেরিয়ে, চড়াই-উতরাই ভেঙে বহু পথ গেলে তবে দোকানবাজার মেলে। সেই চন্দনাতেই প্রবীণ দাদু-ঠাকুমার সংসারে বাস ১১ বছরের মালতী টুডু আর তার বছর পাঁচেকের ভাই মাইকেলের।
বুড়ো দাদু-ঠাকুমা ছাড়া মাথার উপর নেই কেউ। মালতী-মাইকেলের বাবা-মা বেশ কয়েকবছর আগেই মারা গিয়েছেন। দু’জনেরই মৃত্যু হয় সেরিব্রাল ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে। এবার ছোট্ট মাইকেলও সেই একই রোগের কবলে। ভুগছিল অনেকদিন ধরেই। গত সোমবার হঠাৎ অবস্থার অবনতি হয়।
নিস্তেজ হতে হতে মাইকেল প্রায় অচেতন। কাছাকাছি ডাক্তার তো দূরের কথা, কোনও হাতুড়েও নেই। কিন্তু, দ্রুত চিকিৎসা না হলে মাইকেলও ঝরে পড়বে অকালেই। প্রায় নিরন্ন পরিবারের পক্ষে গাড়ি-ঘোড়ার ব্যবস্থা করা তখন প্রায় অসম্ভব। মালতী টুডুর বুড়ো দাদু-ঠাকুমা অসহায় হয়ে প্রহর গুণছেন। মালতী অত তাড়াতাড়ি হাল ছাড়তে রাজি হয়নি। ভাইকে কাঁধে তুলে নিয়ে ছোট্ট মেয়েটা ছুটতে শুরু করল হাসপাতালের পথে। সে ভালমতই জানত, সবচেয়ে কাছের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি কতখানি দূরে। কিন্তু, অদম্য প্রাণশক্তিই হোক বা ভাইয়ের প্রতি অসীম স্নেহ— হতাশ হতে দেয়নি মালতীকে।
রাস্তা পুরোটাই পাহাড়ে পাহাড়ে। পাথুরে পথে চড়াই-উৎরাই প্রচুর। এমন অনেক জায়গা রয়েছে, যেখানে একটু অসাবধান হলেই মৃত্যু নিশ্চিত। সব বিপদ মাড়িয়ে বেপরোয়া দৌড় মালতীর। পথে বার বার হাঁপিয়ে গিয়েছে ১১ বছরের মেয়েটা। ভাইকে কাঁধ থেকে নামিয়ে শুইয়ে দিয়ে সামান্য জিরিয়ে নিয়েছে। তার পর কাঁধে নিয়ে ফের ছুট। দৌড় নিষ্ঠুর পদচারণায় পিছন পিছন এগিয়ে আসা মৃত্যুর বিরুদ্ধে।
প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পৌঁছনোর পর অবশ্য আর চিন্তা করতে হয়নি মালতীকে। এক সমাজসেবী মাইকেলকে গোড্ডা জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। জেলার স্বাস্থ্যকর্তা সি কে শাহী জানালেন, “মাইকেল এখন চিকিৎসাধীন। তবে তার অবস্থা আগের চেয়ে অনেক ভাল। খুব দ্রুত সে সম্পূর্ণ সেরে উঠবে।” ছোট্ট মালতীর খুব প্রশংসা করলেন ডাক্তারবাবু। বললেন, “মেয়েটা খুব বুদ্ধিমতী। ও জানত না সেরিব্রাল ম্যালেরিয়া কী? শুধু বড়দের মাঝেমধ্যে সে বিষয়ে কথা বলতে শুনেছিল। তাতেই মালতী বুঝে নিয়েছিল, অসুস্থ মাইকেলের জন্য তার কী করা উচিত।”
গোড্ডা জেলায় বছরের পর বছর ধরে সেরিব্রাল ম্যালেরিয়া প্রাণ নিচ্ছে বহু মানুষের। প্রশাসনের সে নিয়ে হেলদোল কমই। বাবা-মাকে হারানো মালতী ভাইকে বিস্ময়করভাবে ফিরিয়ে এনেছে জীবনে। কিন্তু, আর কতদিন গোড্ডার মানুষকে চালাতে হবে এই অসম লড়াই? প্রশ্নটা রয়েই যাচ্ছে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত চলায় এমবাপ্পেকে বিজ্ঞাপন থেকে সরাল রিয়াল
আর্থিক দ্বন্দ্বের মধ্যে পিএসজি ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে আসার পর একেরবিস্তারিত পড়ুন
মিয়ানমারে বন্যায় মৃতের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে ২২৬
ঘূর্ণিঝড় ইয়াগির প্রভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণেবিস্তারিত পড়ুন
ইসরাইলি হামলায় আরও ৩৮ ফিলিস্তিনি নিহত
গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি বাহিনীর তান্ডবে প্রাণ গেছে আরও ৩৮বিস্তারিত পড়ুন