পাহাড়ের আদিবাসীদের প্রাচীনতম ‘জুম চাষ’
এ্যাপোলো চাকমা, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধিঃ- বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত পার্বত্য চট্টগ্রামে দশ ভাষাভাষি এগারটি আদিবাসী সম্প্রদায়ের বসবাস। এ অঞ্চলে বসবাসরত আদিবাসীদের জীবন-প্রণালী, ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বৈচিত্রময়। এসব জনগোষ্ঠীদের ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ভিন্ন হলেও জীবন-প্রণালী ও জীবিকা একই সূত্রে গাঁথা। জুম চাষ ( ঢালু পাহাড়ের বন- জঙ্গল কেটে আগুনে পুড়িয়ে চাষযোগ্য করা হয়) এখানকার আদিবাসীদের প্রধান ও সনাতনী জীবিকার উৎস।
বিশেষত, জীবনধারণের তাগিদে পেশাগত চাষাবাদ হিসেবে পাহাড়ের আদিবাসীরা যুগ যুগ ধরে জুম চাষ করে আসছে। ভাষাগত ভিন্নতা হেতু জুমকে বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়।
যেমন: চাকমা ও তঞ্চঙ্গা ভাষায় ‘জুম’ ত্রিপুরা ভাষায় ‘হু’ মারমা ভাষায় ‘ইয়া’ ম্রো ভাষায় উয়া’ বম, পাংখোয়া ও লুসাই ভাষায় লাউ’ চাক
ভাষায় ইকপ্রা’ খেয়াং ভাষায় লউ’ এবং খুমী ভাষায় ল’। জুম চাষ পদ্ধতিতে সাধারণত ধান ও বিভিন্ন ধরণের ফল-মূল, শাক-সবজি এবং তুলা চাষ করা হয়।
তুলা চাষের জন্য বৃটিশ শাসনামলে এই অঞ্চলের নাম ছিল কার্পাস মহল। বর্তমানে এসবের সাথে যুক্ত হয়েছে হলুদ, আদা ও ঝাড়ু ফুল। অধিকন্তু, সচেতন জুম চাষীরা বিভিন্ন ফলজ ও বনজ বাগান করছে।
জুম চাষ পদ্ধতি: জুম চাষের জন্য সর্বপ্রথমে স্থান নির্বাচন করা হয়। নির্বাচিত স্থানের উপর মালিকানার প্রমাণস্বরুপ বাঁশের দ্বারা তৈরি বিশেষ চিহ্ন
স্থাপন করা হয়। এটা অন্য জুম চাষীদের সংকেত দেয় যে, এই স্থানটি ইতিমধ্যে কারো দ্বারা মনোনীত হয়েছে, তাই জুম চাষের জন্য অন্য স্থান বেছে নিতে হবে। স্থান নির্বাচন করার কয়েকদিন পর শুরু হয় জুম কাটার। জুম কাটা শেষ হলে একমাস রোদে শুকানোর পর আগুনে পোড়ানো হয়। জুম পোড়ানো উৎকৃষ্ট সময় চৈত্র মাস।
জুম পোড়ানোর পর সমস্ত আগাছা পরিস্কার করে বৈশাখ মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হয় বীজ বপন। বীজ বপনের পর তিনবার আগাছা পরিস্কার করতে হয়। এভাবে একটি পূর্ণাঙ্গ জুম গড়ে উঠে। সেই জুমের মাধ্যমে গড়ে উঠে আদিবাসীদের জীবন ও জীবিকা।
যখন জুমের ধান চারাগুলো সবুজ হয়ে সৌন্দর্য বিকশিত করবে, বইবে মৃদু মৃদু বাতাস তখন চাষীদের মনের গহীনে লুকিয়ে থাকা সমস্ত উৎকন্টা, দুঃখ-কষ্ট যেন নিমেষে বিলীন হয়ে যায়।
জুমের প্রচলিত নিয়ম: জুম চাষকে কেন্দ্র করে প্রত্যেক আদিবাসীদের মধ্যে কতকগুলো প্রচলিত নিয়ম ও বিধি-বিধান রয়েছে।
জাতিগতভাবে ভাষা, সংস্কৃতি ও বিশ্বাসে কিছুটা পার্থক্য থাকলেও জুমের প্রচলিত নিয়মে আংশিক মিল রয়েছে।
যেমন: ১) জুমের কুপ্রভাব থেকে
মুক্তির উপায়,
২) জুমভূমির উর্বরতা আনয়ন,
৩) জুম থেকে অপদেবতা তাড়ানো
ইত্যাদি।
জুম চাষীদের সামাজিক বন্ধন:
পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতা জুম চাষীদের সামাজিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করেছে। বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসা জুমিয়ারা একত্রিত হয়ে রচিত করে
একটি সমাজব্যবস্থা। সুখে-দুঃখে, আপদে-বিপদে একে অপরের পাশে দাঁড়িয়ে জুমিয়ারা নিজেদের মধ্যে আন্তরিকতার ভিত্তি স্থাপন করে।
বিশেষত, জুমের জন্য বন-জঙ্গল কাটা, বীজ বপন ও ধান কাটার সময় সহযোগিতা করতে দ্বিধাবোধ করে না। বলা যায়, জুম চাষের মাধ্যমে তাদের সকল চাওয়া-পাওয়া, আশা-আঙ্খাকা, সুখ-দুঃখ ও স্বপ্ন রচিত হয়।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
খাগড়াছড়িতে সাংবাদিককে পেটালেন যুবলীগ নেতা
খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলায় নুর নবী অন্তর নামে স্থানীয় এক সাংবাদিককেবিস্তারিত পড়ুন
উপজাতি গৃহবধূকে পাহাড়ের নিচে গলা কেটে হত্যা
খাগড়াছড়ির গুইমারা দুর্গম এলাকায় পাহাড়ের নিচ থেকে মহিনী ত্রিপুরা (৩৫)বিস্তারিত পড়ুন
খাগড়াছড়িতে প্রেমে ব্যর্থ হয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে কলেজ ছাত্রীর আত্মহত্যা
প্রেমে ব্যর্থ হয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আরিফা বেগম নামে একবিস্তারিত পড়ুন