পা বেঁধে দিয়ে উপরের দিকে করে বেল্ট দিয়ে একটানা মেরে যেত
সিরিয়ায় যৌনদাসী হিসেবে চরম নির্যাতনের শিকার হওয়া এক বাংলাদেশী মহিলা বিবিসির কাছে বর্ণনা করেছেন, বন্দিদশায় তাকে কী অবর্ণনীয় অত্যাচারের শিকার হতে হয়েছে।
গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ লেবাননে গৃহকর্মীর কাজ দেবার নাম করে যুদ্ধকবলিত সিরিয়ায় পাচার করা হয়েছিল এমন কয়েকজন নারী সম্প্রতি বাংলাদেশে ফিরে এসেছেন।
এমনই একজন বিবিসির সাথে আলাপ কালে বলছিলেন তাদের লেবাননের প্লেনে তোলার নাম করে আসলে সিরিয়ার প্লেনে উঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সিরিয়ায় নামার পরও তারা ভেবেছিলেন লেবাননেই এসেছেন।
ভুল ভাঙে যখন তাদের একটি অফিসঘরে আটকে রেখে চরম অত্যাচার শুরু করা হয়। ওই মহিলা বলছিলেন, ‘দিনের পর দিন মাসের পর আমাদের কিছু খেতে দিত না। শুধু চলত মার, প্রচন্ড মার!’
‘মারের চোটে আমার অনেক সময় প্রস্রাব-পায়খানা পর্যন্ত হয়ে যেত। আর সে কী মার, দুটো পা বেঁধে দিয়ে পা-গুলো উপরের দিকে করে বেল্ট দিয়ে একটানা মেরে যেত।’
‘অত্যাচারের চোটে আমার সর্বস্ব শেষ করে দিয়েছে ওরা। আমার চুল পর্যন্ত কেটে নিয়েছে।’
তিনি জানাচ্ছেন, সিরিয়ার হামা শহরে চার মাসের অবস্থানকালে তাকে অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়। তাকে মূলত যৌনদাসী হিসেবেই ব্যবহার করা হত।
টেলিফোনে কথা বলতে গিয়ে একটা পর্যায়ে ওই মহিলা জানান, তার সৌন্দর্যই আসলে তার কাল হয়েছে – তাকে আরও বেশি বেশি নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে।
‘আপনি তো আমারে দেখেননি, আমি খুব সুন্দর ছিলাম। কিন্তু সেটাই বোধহয় আমার ভাগ্যে এতটা খারাপ বয়ে এনেছে।’
‘কিন্তু বিশ্বাস করুন, গরিবের মেয়ে হলেও আমি কিন্তু সেখানে মান-ইজ্জত বেচে পয়সা কামাতে যাইনি। আমি মেহনত করে পয়সা উপার্জন করতে গিয়েছিলাম।’
‘একটা সময় আত্মহত্যার কথাও ভেবেছিলাম – কিন্তু তাতে তো কোনও সমাধান হবে না। বাচ্চাটাকে তাহলে কে দেখবে, এই ভেবে শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে আসি।’
বিবিসির সাথে আলাপে তিনি আরো বলছিলেন, সেখানে যেসব বাংলাদেশী মেয়েদের নিয়ে যাওয়া হতো, তাদের মধ্যে দেখতে সুন্দর এমন মেয়েদের যৌনকাজে বাধ্য করা হতো। তাকেও তার সৌন্দর্যের জন্যই এ কাজে বেছে নেয়া হয়েছিল।
তিনি আরও বলছিলেন তারা একদল সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটের কবল থেকে কোনওক্রমে পালিয়ে আসতে সক্ষম হলেও এখনও সেখানে ‘অগুনতি বাঙালি মেয়ে’ আছে।
তাদের ওপরও চরম অত্যাচার চলছে, কাউকে টেনে এনে দেওয়ালের সঙ্গে দাঁড় করিয়ে, কাউকে বা হাত-পা বেঁধে নির্যাতন করা হচ্ছে। খেতে দেওয়া হচ্ছে না, সঙ্গে চলছে মারধর।
তাদেরকে যৌনদাসী এবং গৃহকর্মী হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে, এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। আর যাদের বিক্রি করা হয়নি, দালালেরা তাদের বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করাচ্ছে।
নিপীড়নের শিকার মেয়েটি এক পর্যায়ে প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর দেশে মাকে ফোন করে জানানোর পর তার মা’ই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানোর পর, দালালকে চাপ দিলে তাঁকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়।
বাংলাদেশে ফেরার পরও ওই মহিলার কষ্টের শেষ হয়নি। তাঁর স্বামী তাকে ভাত-কাপড় দিতে রাজি নন, ফলে ছোট একটি বাচ্চাকে নিয়ে তিনি পড়েছেন চরম অসহায় অবস্থায়।
তার বয়স্কা মা লোকের বাড়ি বাড়ি কাজ করে কোনও রকমে এখন তার অভাগা মেয়ের মুখে দুটো খাবার তুলে দিচ্ছেন।
সিরিয়ায় যৌনদাসী এবং গৃহকর্মী হিসেবে বাংলাদেশ থেকে যে মেয়েদের পাঠানো হচ্ছে, ঢাকার একটি দৈনিকেই প্রথম এরকম একটি খবর প্রকাশিত হয়।
এরপরই সরকার জানায়, আটকে পড়া মেয়েদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হবে। পুলিশের বিশেষ বাহিনী র্যাব এ বিষয়ে তদন্ত করে নারী পাচারের দুটি মামলা করেছে এবং মোট পনেরজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
ঢাকার দৈনিক প্রথম আলোতে ওই অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটি যিনি করেছেন, সেই রোজিনা ইসলাম জানিয়েছেন যুদ্ধকবলিত সিরিয়ায় বাংলাদেশ থেকে আরো অনেক নারীকে অবৈধভাবে পাচার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে মাত্র তিনজন ফেরত এসেছে।
এদিকে র্যাব বলছে, গত জুনে একজন নির্যাতিতা নারীর মা তাদের কাছে অভিযোগ করার পর তারা এ বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে।
এরপরে তাদের রিক্রুটিং এজেন্ট ও দালালসহ মোট পনেরজনকে গ্রেপ্তার করে। এ নিয়ে দুটি মামলাও দায়ের করা হয়েছে।
র্যাব তিন-এর এর অধিনায়ক খন্দকার গোলাম সারোয়ার বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, গ্রেপ্তার ব্যাক্তিদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সিরিয়ার বিভিন্ন শহরে আটকে পড়া আরো মেয়েদের ফিরিরে আনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য তারা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন।
মি. সারোয়ার আরো বলছিলেন, সিরিয়ার অন্যান্য শহরে আরো মেয়েদের পাচার করা হয়ে থাকতে পারে, যাদের সম্পর্কে এখনো তথ্য জানা যায়নি। র্যাব এখন তাদের সম্পর্কেও তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমও জানিয়েছেন বিষয়টি সম্পর্কে পূর্নাঙ্গ তথ্য জেনে তারা যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন আটকে পড়া মেয়েদের ফিরিয়ে আনতে।
তিনি সেই সঙ্গে এটিও বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যের যেসব দেশে বাংলাদেশের দূতাবাস রয়েছে, সেসব জায়গায় বাংলাদেশী নারী কর্মীরা নির্যাতনের শিকার হলে তাদের সাহায্য দেবার জন্য হটলাইনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেসব জায়গা থেকেও সাহায্য চাইতে পারেন তারা;
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত চলায় এমবাপ্পেকে বিজ্ঞাপন থেকে সরাল রিয়াল
আর্থিক দ্বন্দ্বের মধ্যে পিএসজি ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে আসার পর একেরবিস্তারিত পড়ুন
ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর পদ হারালেন গাজীপুর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি
ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর সাংগঠনিক শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে গাজীপুর জেলা ছাত্রদলেরবিস্তারিত পড়ুন
ঢাকা উত্তর সিটির সাবেক মেয়র আতিকুল গ্রেপ্তার
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামকে রাজধানীরবিস্তারিত পড়ুন