পিলখানা হত্যার বিচার শেষ হচ্ছে এ মাসেই
বাংলাদেশের ইতিহাসে নির্মম ট্র্যাজেডি পিলখানা হত্যা মামলার বিচার চলতি মাসেই শেষ হতে পারে। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এই মামলার সকল যুক্তিতর্ক শেষ করার জন্য উভয় পক্ষের আইনজীবীদের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের এই নির্দেশ দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জাহিদ সারোয়ার কাজল জানান, আসামি পক্ষের আইনজীবীদের আইনগত যুক্তি উপস্থাপন শেষ পর্যায়ে। সোমবার অ্যাটর্নি জেনারেল সমাপনী বক্তব্য দেবেন। তার বক্তব্যের মধ্য দিয়েই এই মামলার শুনানি শেষ হবে। শুনানি শেষে হাইকোর্ট রায়ের জন্য দিন ধার্য করে দিতে পারেন।
কাজল আরো বলেন, এই মামলা আরো দ্রুত নিষ্পত্তি হতে পারত। কিন্তু আসামি পক্ষের আইনজীবীদের সময়ক্ষেপণ ও আদালতে গড় হাজির থাকার কারণে অনেক সময় পূর্ণ কার্যদিবস শুনানি করা যায়নি।
২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহে ৫৭ জন সেনাকর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যা করা হয়। নৃশংস এই ঘটনার পর পরিবর্তন করা হয় এই বাহিনীর নাম। সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী বাংলাদেশ রাইফেলস(বিডিআর) এর নাম বিলুপ্ত করে নামকরণ হয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। পরিবর্তন করা হয় পোশাক ও লোগো। সেই কলঙ্কময় অধ্যায়ের সাড়ে সাত বছর অতিবাহিত হয়েছে।
এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ওই বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি লালবাগ থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে পৃথক দুটি মামলা করা হয়। পরবর্তীকালে মামলা দুটি স্থানান্তর হয় নিউমার্কেট থানায়। হত্যা মামলায় মোট আসামি ছিল ৮৫০ জন। ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ড. মো. আখতারুজ্জামান এই হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন।
পিলখানা হত্যা মামলায় বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানির জন্য ২০১৫ সালে বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করা হয়। বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চে ওই বছরের জানুয়ারি মাসে ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়। বেঞ্চের অপর দুই সদস্য হলেন, বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার। ইতোমধ্যে ৩৫৬ কার্যদিবসব্যাপী ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে ৩৫ হাজার পৃষ্ঠার পেপারবুক পাঠ করা হয়েছে ১২৪ কার্যদিবস। বাকি ২৩২ কার্যদিবস রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষ যুক্তি উপস্থাপন করেছেন।
আইনজীবীরা জানান, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৫২ জন আসামির ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শেষ হওয়ার পর যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত ১৬০ আসামির আপিল শুনানি শেষ হয়েছে। এরপর শেষ হয়েছে বিচারিক আদালতে ৬৯ আসামির খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে সরকারের করা আপিলের শুনানি। রাষ্ট্রপক্ষ এই ৬৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড চেয়ে হাইকোর্টে আপিল করে।
এ প্রসঙ্গে আসামি পক্ষের অন্যতম আইনজীবী এম আমিনুল ইসলাম বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামি পক্ষ সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেছে। আদালত আসামিপক্ষের আইনজীবীদের উপস্থাপিত যুক্তিতর্ক লিখিতভাবে আদালতে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট জাহিদ সারোয়ার কাজল আরো বলেন এই মামলা আরো দ্রুত নিষ্পত্তি হতে পারত। কিন্তু আসামি পক্ষের আইনজীবীদের সময়ক্ষেপণ ও আদালতে গড় হাজির থাকার কারণে অনেক সময় পূর্ণ কার্যদিবস শুনানি করা যায়নি।
বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার পর ২০০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি হত্যার অভিযোগে এবং অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করা হয়। সিআইডি কর্মকর্তা আবদুল কাহার আকন্দ মামলাটি তদন্ত করেন। দুই শ’ কর্মকর্তার সহযোগিতায় দীর্ঘ ৫০০ দিন তদন্ত করেন তিনি। তদন্ত শেষে ২০১০ সালের ১২ জুলাই হত্যা এবং অস্ত্র-বিস্ফোরক আইনে দুটি চার্জশিট আদালতে দাখিল করা হয়। চার্জশিটভুক্ত আসামি রয়েছে ৮৫০ জন। এর মধ্যে বিডিআর’র পোশাকধারী ৭৮৫, বিডিআর’র সিভিল ৪২, বেসামরিক ২২ ও আনসার একজন। সাক্ষ্যগ্রহণ ও শুনানি শেষে ২০১৩ সালর ১৩ নভেম্বর ১৫২ জনকে ফাঁসি, ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন, তিন থেকে ১৪ বছর মেয়াদে ২৫৬ জনসহ মোট ৫৬৮ জনকে দণ্ড প্রদান করেন আদালত। খালাস প্রদান করা হয় ২৭৮ জনকে।
তবে এই মামলা চলাকালীন ৯ জন আসামির মৃত্যু হয়। এরমধ্যে রায়ের আগে ২০১০ সালের ২৯ জুলাই ডিএডি আবদুর রহিম, একই বছরের ৫ আগস্ট হাবিলদার রফিকুল ইসলাম, ২০১১ সালের ১৫ মে হাবিলদার মতিউর রহমান ও ২০১৩ সালের ২৪ মে হাবিলদার ফরহাদ হোসেনের মৃত্যু হয়। রায় ঘোষণার পর ২০১৩ সালের ২ ডিসেম্বর খালাসপ্রাপ্ত নায়েক সুবেদার আবদুল মতিন মিয়া, ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ডিএডি মির্জা হাবিবুর রহমান, একই বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রাপ্ত সিপাহী শফিকুল ইসলাম, ৭ অক্টোবর ১০ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত নায়েক সুবেদার শহিদুল ইসলাম, ২৭ অক্টোবর ল্যান্স নায়েক খালাসপ্রাপ্ত আশরাফুল ইসলাম, গত বছেরর ৩ মার্চ খালাসপ্রাপ্ত হাবিলদার মাহতাব উদ্দিন, ৩ মে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা ও সাবেক এমপি নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু, ১৮ আগস্ট সাত বছরের সাজাপ্রাপ্ত সুবেদার মেজর আবদুল কাইয়ূম, গত ৯ জানুয়ারি খালাসপ্রাপ্ত এনসিই শ্রী সানু চন্দ্র মারা যান।
এদিকে একই ঘটনায় বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা মামলার কার্যক্রমও শেষ হয়নি। বিদ্রোহের ঘটনা তদন্ত করে ২০১০ সালের ২৭ জুলাই বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা মামলায় ৫৩৬ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহার আকন্দ। বিচারিক কাজ শেষে হত্যা মামলার রায় দেন কেন্দ্রীয় কারাগার সংলগ্ন মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ড. মো. আখতারুজ্জামানের বিচারিক আদালত। বিস্ফোরক মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম একই আদালতে চলমান রয়েছে।
২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআর সদরদপ্তরে এই নৃশংস ঘটনার জন্ম হয়। বিডিআর সদস্যরা পিলখানায় সদরদপ্তরে বিডিআর থেকে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের কর্তৃত্বের অবসান, রেশন ও বেতনবৈষম্য দূর করাসহ বেশকিছু দাবিতে সশস্ত্র বিদ্রোহ করে। বিডিআরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ঊর্ধ্বতন ৫৭ কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যা করে বিডিআরর সদস্যরা। জিম্মি করে রাখা হয় অনেককে। মুহুর্মুহু গুলির শব্দে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে রাজধানীবাসী। জিম্মি অবস্থায় ফোনে অনেকেই বাঁচার আকুতি জানিয়েছেন, সাহায্য চেয়েছেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি তাদের। রক্তে ভেসে যায় পিলখানা। ওই দিন মধ্যরাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
বিদ্রোহীদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করলে বিডিআর এর সদস্যদের একাংশ আত্মসমর্পণ করে। পরদিন ২৬ ফেব্রুয়ারি সকালে দেশের বিভিন্ন বিডিআর ক্যাম্পে উত্তেজনা দেখা দেয়। ওইদিন জাতির উদ্দেশে ভাষণে বিডিআরের দাবি দাওয়া মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। ওই দিন সন্ধ্যায় বিদ্রোহী বিডিআর সদস্যরা তাদের অস্ত্র জমা দেন। এরপর গণমাধ্যমের বদৌলতে একসঙ্গে এতো সেনা কর্মকর্তাদের লাশ দেখে দেশে-বিদেশে তোলপাড় শুরু হয়। লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ে নিহতের স্বজনসহ দেশের সাধারণ মানুষ।
উৎসঃ পূর্বপশ্চিম
https://youtu.be/Zz1TDx1LRy0
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত চলায় এমবাপ্পেকে বিজ্ঞাপন থেকে সরাল রিয়াল
আর্থিক দ্বন্দ্বের মধ্যে পিএসজি ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে আসার পর একেরবিস্তারিত পড়ুন
মিয়ানমারে বন্যায় মৃতের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে ২২৬
ঘূর্ণিঝড় ইয়াগির প্রভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণেবিস্তারিত পড়ুন
ইসরাইলি হামলায় আরও ৩৮ ফিলিস্তিনি নিহত
গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি বাহিনীর তান্ডবে প্রাণ গেছে আরও ৩৮বিস্তারিত পড়ুন