পুরুষশূন্য গ্রামে আতঙ্কে নারীরা
মাধবপুর উপজেলায় জোড়া খুনের ঘটনায় খাটুরা গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। গ্রেপ্তার আতঙ্কে তাঁরা এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। বাড়িতে রয়েছে নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা। কোনো পুরুষ মানুষ না থাকায় নারীরা নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে সব সময় আতঙ্ক কাজ করছে। দুই পক্ষের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষে গত বুধবার দু’জন নিহত হওয়ার পর থেকে পুরুষশূন্য হয়ে পড়ে গ্রামটি।
জোড়া খুনের ঘটনায় গত শনিবার পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়। উভয় মামলায় আসামি করা হয়েছে দুই শতাধিক। এরমধ্যে নারীরাও রয়েছে।
সংঘর্ষ চলাকালে ঘটনাস্থলে নিহত রোকেয়া হত্যার ঘটনায় তার মা কুলসুমা বেগম বাদী হয়ে ইউপি সদস্য খলিলুর রহমান ছুট্টো মিয়াকে প্রধান আসামি করে ৭৮ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরো ১৫-১৬ জনের বিরুদ্ধে শনিবার দুপুরে মাধবপুর থানায় মামলা দায়ের করেন।
অপরদিকে, জলিল মিয়া হত্যার ঘটনায় তার বাবা সাজু মিয়া বাদী হয়ে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান বাচ্চু মিয়াকে প্রধান আসামি করে একশ’ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরো ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে মাধবপুর থানায় শনিবার রাত ৮টার দিকে একটি মামলা দায়ের করেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, খাটুরা গ্রামে ফের সংঘর্ষের আশঙ্কায় বিভিন্ন স্থানে পুলিশ অবস্থান করছে। বাড়িঘরে রয়েছে হামলা ও ভাঙচুরের চিত্র। রাত জেগে তারা বাড়ি ঘর পাহারা দিচ্ছেন। লুটপাটেরও অভিযোগ করেছেন বাড়িতে থাকা নারীরা।
ঘটনার পর গ্রেপ্তার আতঙ্কে গ্রাম থেকে পালাতে শুরু করে পুরুষ লোকেরা। এমনকি আহতরাও হাসপাতাল ছেড়ে চলে যায়। নারী ও যুবতি মেয়েরাও গ্রাম ছেড়ে চলে গেছে। গ্রামে শুধু শিশু ও বৃদ্ধ নারীদের দেখা গেছে।
গ্রামটিতে প্রায় ৩ হাজার লোকের বসবাস। ফের সংঘর্ষে আশঙ্কায় গ্রামটিতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, খাটুরা গ্রামের ফজল মিয়ার সঙ্গে একই গ্রামের ইউপি সদস্য খলিলুর রহমান ছুট্টো মিয়ার লোকজনদের মধ্যে দীর্ঘদিন যাবৎ গ্রাম্য আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিরোধ চলে আসছিল। এ নিয়ে কয়েকবার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। গত রবিবারের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে প্রায় ৫০জন আহত হয়। এর জের ধরে বুধবার রাত ৭ টার দিকে উভয় পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। সংষর্ষ চলাকালে অস্ত্রের আঘাতে ওই গ্রামের রহিছ আলীর মেয়ে রোকেয়া বেগম (২০), একই গ্রামের সাজু মিয়ার ছেলে মো. জলিল মিয়া (৩০)নিহত হন।
ঘটনার রাতেই হবিগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার (সদর) মাকসুদুর রহমান মনির এবং পরদিন পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এর পর মাধবপুর থানার পুলিশ গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বিপুলসংখ্যক দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করে।
মাধবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোল্লা মো. মুনির হোসেন জানান, খুনের ঘটনায় দুটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ১৩ জন নারীকে আটক করা হয়েছে। তাদেরকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
বানিয়াচং উপজেলায় দু’পক্ষের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে, ৩ জনে মৃত্যু
হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রেবিস্তারিত পড়ুন
হবিগঞ্জে ট্রাক-প্রাইভেটকার সংঘর্ষে ৫ জন নিহত
হবিগঞ্জের মাধবপুরের হরিতলা বাদশা গেইট এলাকায় ট্রাক ও প্রাইভেটকার সংঘর্ষেবিস্তারিত পড়ুন
‘ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে’ গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যা
হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে ‘ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে’ এক গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যা করাবিস্তারিত পড়ুন