পুলিশকে নূর হোসেনের শুভেচ্ছা!

নারায়ণগঞ্জে বহুল আলোচিত ৭ খুনের ঘটনার আগে নূর হোসেন ছিলেন প্রচার পাগল মানুষ। ট্রাক স্ট্যান্ডসহ তার নিয়ন্ত্রিত এলাকা নিজের ছবিযুক্ত পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুনে ছেয়ে রাখতেন। এছাড়াও বিভিন্ন সংগঠনের ক্রোড়পত্র বা স্মরণিকায় বাণী দিয়ে ছবি প্রকাশ করতেন।
পুলিশ সপ্তাহে পুলিশ সদস্যদের স্মরণিকার মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
এতে দেখা যায়, সবার ওপরে লেখা, পুলিশ সপ্তাহ সফল হোক। এর নিচে লেখা হাজী মো: বদরউদ্দিন শপিং টাওয়ার, নয়াআঁটি, মুক্তিসরণি, চিটাগাং রোড, সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ। বক্স করে লেখা আছে পুলিশ সপ্তাহ-২০১৪ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সকল সদস্যকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। নিচেই রয়েছে তার নিজের ছবি। প্রোপাইটর হাজী মো: নূর হোসেন এবং সর্বশেষ নিজের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নম্বর।
স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই সময় এ নিয়ে কোন আলোচনা হয়নি। তবে এই বাণী দেয়ার পর নূর হোসেন নিজেকে সমাজে আরও বেশি প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।
সরেজমিন চিটাগাং রোডের ট্রাক স্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, তার অফিসটি তালাবদ্ধ। কাঁচের জানালা দিয়ে ভেতরে দেখা যায় তার নিজের চেয়ারের পেছনে বিশাল আকৃতির এক ছবি। পাশেই বিভিন্ন পোস্টার এবং অনুষ্ঠানের ছবি। এসব পোস্টারে নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী রাজনীতিকদের ছবি ছোট দেখা গেলেও পাজামা-পাঞ্জাবি পরিহিত নূর হোসেনের ছবি বড় দেখা গেছে। গাল ভরা হাসিমুখে নেতাদের সঙ্গে করমর্দন করছেন- এমন ছবিও রয়েছে। সরকারের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের পাশেও নূর হোসেনকে দেখা গেছে কিছু ছবিতে।
স্থানীয়রা জানান, চিটাগাং রোডে ট্রাক স্ট্যান্ড, ব্রিজ সংলগ্ন বিশাল বালু মহাল, কদমতলি নতুন মহল্লা, সিআই খোলা, সানাড়পাড়, বার্মাস্ট্যান্ড, ওয়াপদা কলোনি এবং সিদ্ধিরগঞ্জের ১,২,৩,৪ নম্বর ওয়ার্ড ও আশপাশ এলাকা নূর হোসেনের অবৈধ বাণিজ্যের স্থানে পরিণত হয়। আর এ বাণিজ্যকে পোক্ত করতে এসব এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ মোড়, সরকারি বেসরকারি স্থাপনা, স্কুল-কলেজ, বাসাবাড়ির দেয়ালে, যানবাহনের পেছনে সেঁটে দেয়া হতো পোস্টার ও ব্যানার। এলাকার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের পোস্টার ছিড়ে ফেলে সেই জায়গায় নূর হোসেনের ছবি এঁটে দিয়েছে তার লোকরা। কোন সভা-সমাবেশ হলে পুরো এলাকায় ৪/৫ দিন ধরে নূর হোসেনের পক্ষে মাইকে প্রচার চালানো হতো। যা নারায়ণগঞ্জের অন্য কোন প্রভাবশালী রাজনীতিকের পক্ষেও সম্ভব হয়নি। আর এসব করা হতো নিজের আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদা আদায়ে সামাজিক শক্তি অর্জনের জন্য।
পুলিশকে শুভেচ্ছার ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের জনসংযোগ কর্মকর্তা কামরুল হাসানের। তিনি বলেন, ‘ওই সময় নারায়ণগঞ্জ জেলায় পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের একটি অনুষ্ঠান ছিল। এ উপলক্ষে একটি স্মরণিকা বের করা হয়। সেখানে সার্ভিসের সদস্যদের শুভেচ্ছা জানানো হয়।’
নূর হোসেনের নিজের এই প্রচারের বিষয়টি অন্যতম এক বাণিজ্য- এ কথা উল্লেখ করে নারায়ণগঞ্জ সিটি মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, ‘এসব করে সে মূলত নিজেকে তুলে ধরেছে। অল্প সময়ে নিজেকে সাধারণ মানুষের কাছে পরিচিত করানোই ছিল তার প্রধান উদ্দশ্য, যাতে কেউ তার অন্যায়ের প্রতিবাদ করার সাহস না পায়।’ সেলিনা হায়াৎ আইভী জানান, তার নিজের পোস্টার ও ব্যানারও ছিড়ে ফেলেছে নূর হোসেনের লোকজন।
২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে ফতুল্লার শিবু মার্কেট এলাকা থেকে কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে অপহরণ করা হয়। ঘটনার তিন দিন পর শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা বাদি হয়ে নূর হোসেনসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করে একটি এবং আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে ফতুল্লা মডেল থানায় পৃথক মামলা দায়ের করেন। এরপরই নূর হোসেনের লোকজন আত্মগোপনে চলে যায়।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

ডিএমপি: ৫ আগস্ট পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. সারোয়ার জাহানবিস্তারিত পড়ুন

আমির খসরু: নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “গণতন্ত্রেরবিস্তারিত পড়ুন

নরসিংদীতে সন্ত্রাসী হামলায় হার্ট এ্যাটাক হয়ে ব্যবসায়ীর মৃত্যু
নিজস্ব সংবাদদাতা: নরসিংদী জেলাধীন ভাঙ্গা এলাকার অধিবাসী ব্যবসায়ী জনাব মুস্তাকবিস্তারিত পড়ুন