পুলিশের অপরাধ: তদন্তের ফাইল চলে না
পুলিশের বিরুদ্ধে করা পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখছে না। প্রতিবেদনে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থার সুপারিশ করা হয়, তাও জানা যায়নি কখনও। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে কেবল সাময়িক বরখাস্ত করেই শেষ হয় তদন্ত। কখনও কখনও অভিযুক্তকে তার কর্মস্থল থেকে বদলি করা হয়। এরপর আর হয় না কিছুই।
তবে পুলিশ অবশ্য এসব অভিযোগ মানতে নারাজ। তাদের দাবি, বিভাগীয় তদন্ত করতে কখনও কখনও দেরি হলেও কারও দোষ প্রমাণ হলে কঠোর ব্যবস্থাই নেয়া হয়। গত বছর চাকরিচ্যুতসহ বিভিন্ন অপরাধে এক হাজার ১৩৪ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে ফৌজদারি অপরাধে ৭৪ জনকে গুরুদ- ও ৯৬০ জনকে লঘুদ- দেয়া হয়।
তবে পুলিশ সদরদপ্তরের এই পরিসংখ্যানই সবশেষ কথা নয়। গত এক বছরে আলোচিত বেশ কিছু ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের কোন সাজাই হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতার পর হারিয়ে যায় ঘটনা আর পার পেয়ে যান অভিযুক্তরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার মারুফ হাসান সরদার বলেন, ‘অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার পর নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হয়। কখনও কখনও সেটা সময়সাপেক্ষ’।
আলোচিত কিছু ঘটনা
নববর্ষে নারী লাঞ্ছণার প্রতিবাদে গত বছরের ১০ মে ছাত্র ইউনিয়নের কর্মসূচিতে এক নারী কর্মীকে লাঠিপেটার ঘটনায় সাময়িক বরখাস্ত করা হয় নায়েক আনিসুর রহমানকে। সে সময়ে তিনি ডিএমপির সদর দপ্তর এলাকায় নিরাপত্তার জন্য অতিরিক্ত ফোর্সের সঙ্গে তিনি দায়িত্ব পালন করছিলেন।
এ ঘটনা তদন্তে পুলিশের পক্ষ থেকে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। দুটি কমিটিকেই সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। কিন্তু অভিযুক্ত নায়েকের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তিনি এখন কোথায় আছেন, তার কিছুই বলতে চাইছে না পুলিশ।
এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সদর দপ্তরের তদন্ত কমিটির প্রধান উপ-মহাপরিদর্শক অপারেশন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আইজিপি তদন্ত কমিটি করে দেন আমরা তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেই। ওই বিভাগ কী ব্যবস্থা নেয় তা আমরা জানি না’।
গত ৯ জানুয়ারি রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা গোলাম রাব্বিকে মারধোর ও ঘুষ চাওয়ার অভিযোগে মোহাম্মদপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাসুদ শিকদারকে বরখাস্ত করা হয়। ওই অভিযোগের তদন্ত করে তদন্ত করে গত ১৭ জানুয়ারি পুলিশ কমিশনারের দপ্তরে প্রতিবেদন দেন মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী কমিশনার হাফিজ আল ফারুক।
তেজগাঁও জোনের উপ-কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ‘ওই প্রতিবেদন কমিশনারের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। কী আছে ওই তদন্ত প্রতিবেদনে এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে পারবো না’।
এ ঘটনায় ডিএমপির যুগ্ন কমিশনার মোসলেহ উদ্দিনের নেতৃত্বেও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু ওই প্রতিবেদন এখনও জমা পরেনি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন বিভাগের পরিদর্শক বিকাশ চন্দ্র দাসকে মারধরের ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানার উপ-পরিদর্শক আরশাদ হোসেন আকাশ বরখাস্ত হন উপরের ঘটনার কদিন পরেই। এর তদন্তে ওয়ারী জোনের উপ-কমিশনার সৈয়দ নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে গঠিত হয় কমিটি। এই তদন্ত প্রতিবেদনও জমা দিয়েছে পুলিশ।
এই প্রতিবেদন সম্পর্কে ওয়ারী জোনের উপ-কমিশনার সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিবেদনে অভিযুক্ত উপ-পরিদর্শক আরশাদ হোসেন আকাশের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তির জন্য সুপারিশ করা হয়েছে’।
আরশাদ হোসেন আকাশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে আরও একটি কমিটি করা হয় ডিএমপির পক্ষ থেকে। ওই প্রতিবেদনও জমা পড়েছে ডিএমপির সদরদপ্তরে। কী আছে ওই প্রতিবেদনে?- জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের যুগ্ম কমিশনার বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ‘ আরশাদ হোসেন আকাশের কিছু ত্রুটি পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে’।
দুটি নির্যাতনের ঘটনা তদন্তে পুলিশ সদরদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক হারুন অর রশিদের নেতৃত্বে আরও একটি কমিটি করা হয়। এরই মধ্যে জমা পড়েছে সে প্রতিবেদন। তবে এতে কী বলা হয়েছে, সে বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি হারুন অর রশিদ।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ড. ইউনূসের মন্তব্য দেশের মানুষের জন্য অপমানজনক : আইনমন্ত্রী
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, কর ফাঁকি দেওয়ার মামলাকে পৃথিবীর বিভিন্নবিস্তারিত পড়ুন
ময়মনসিংহে ওসি-এসপি’র বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তি স্বাক্ষর
সরকারি দায়-দায়িত্ব ও কর্মকান্ডে স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা বৃদ্ধি, সম্পদের যথাযথবিস্তারিত পড়ুন
ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় জনগণের সাথে রায়েছে বিচার বিভাগ
দেশের মানুষের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বিচার বিভাগ জনগণের সঙ্গে আছেবিস্তারিত পড়ুন