পুলিশ তাদের চেনে না!
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমতিয়াজ আহমেদের ওপর প্রকাশ্যে হামলা চালিয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আজ রোববার বিজয়নগর উপজেলায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে নেতাকর্মীরা ওসির ওপর এই হামলা চালায়।
এ ঘটনায় আজ সন্ধ্যায় অজ্ঞাতনামা ৭০ থেকে ৮০ জনকে আসামি করে বিজয়নগর থানায় মামলা করেছে পুলিশ। মামলার বাদী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জালাল উদ্দিন ভূঁইয়া।
প্রকাশ্যে ওসির ওপর হামলা করা হলেও মামলায় কারো নাম উল্লেখ না করায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিজয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা ঘোষণা দিয়ে আজ সেখানে হরতাল পালন এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ছায়েদুল হককে ঠেকানোর ঘোষণা দিলেও মামলায় তাঁদের কাউকে হুকুমের আসামি করা হয়নি।
ওসির ওপর হামলার ফুটেজ পুলিশের কাছে রয়েছে বলে দাবি করেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) মিজানুর রহমান। আওয়ামী লীগের বাইরে অন্য একটি চক্র ওসির ওপর হামলা করতে পারে বলেও মনে করছেন তিনি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিজয়নগরে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হকের আগমন ঠেকাতে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে আজ সকাল থেকে জুতা নিয়ে বিক্ষোভ করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় দায়িত্ব পালন করতে বেলা দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বিজয়নগরের চান্দুরা এলাকায় হামলার শিকার হন নবীনগর থানার ওসি। হামলায় তাঁর মাথা ফেটে রক্ত বের হয়। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় ওসিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরে এ ঘটনায় থানায় মামলা করা হয়।
তবে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ করলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি।
এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমাদের কাছে আজকের ঘটনার (ওসির ওপর হামলা) ভিডিও ফুটেজ আছে। এখন আমরা সেগুলো খুঁজে দেখছি। ওই ফুটেজ পর্যালোচনা করে এবং তদন্ত শেষেই বোঝা যাবে ওসির ওপর হামলার ঘটনায় কারা জড়িত।’
‘হামলায় কারা জড়িত সে বিষয়টি এখনো নিশ্চিত হওয়ার যায়নি। তাই মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।’
হরতাল ঘোষণাকারী আওয়ামী লীগের নেতারা ওই মামলার হুকুমের আসমি হতে পারে কি না- এ প্রশ্নের জবাবে এসপি মিজানুর রহমান বলেন, ‘তাঁরা হরতালের ঘোষণা দিয়েছিলেন আগেই। আর গতরাতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। তাই ১৪৪ ধারা ভাঙার সঙ্গে হরতার পালনের যোগসূত্র নেই। এ কারণে এই মামলায় আওয়ামী লীগ নেতাদের হুকুমের আসামি করা হয়নি।’
এসপি আরো বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতারা আমাদের কাছে দাবি করেছেন, ওসির ওপর হামলায় তাঁদের কেউ জড়িত নন। কোনো একটি পক্ষ সুযোগ নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা করেছে। তাই আমরা ওই চক্রটিকে ধরার চেষ্টা করছি।’
এদিকে বিক্ষোভের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া পাহারায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আজ বিজয়নগরে প্রাণিসম্পদ উন্নয়নকেন্দ্র উদ্বোধন করেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। দুপুরে মন্ত্রী ঘটনাস্থল ত্যাগ করার আগে বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার ওপর হামলা, সেখানেও আসামি অজ্ঞাত
মন্ত্রীর সফরের দুদিন আগে গত শুক্রবার বিজয়নগরে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. লুৎফুর রহমানের ওপর হামলা চালায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তাঁরা কর্মকর্তার মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে যায়। অফিসকক্ষ তছনছ করে। পরে অফিস থেকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রীর উদ্বোধন অনুষ্ঠানের নামফলক ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়।
ওই ঘটনার পর প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা লুৎফর রহমান সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ৭০-৮০ জন নেতাকর্মী হামলা চালায়।
কিন্তু ভাঙচুর ও হামলার ঘটনায় বিজয়নগর থানায় মামলা করার সময় ১২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।
মন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান আওয়ামী লীগ নেতাদের
বিজয়নগরে প্রাণিসম্পদ উন্নয়নকেন্দ্র উদ্বোধন অনুষ্ঠানে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি। এ কারণে তাঁর সমর্থকরা খুব ক্ষুব্ধ ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার বিজয়নগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সংবাদ সম্মেলন করে মন্ত্রীর অনুষ্ঠান বর্জনের ঘোষণা দেন। মন্ত্রীর আগমন ঠেকাতে উপজেলা আওয়ামী লীগ রোববার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া গতকাল শনিবার জানিয়েছিলেন, অন্তত ২০ হাজার মানুষ মন্ত্রীর আগমন ঠেকাতে রাজপথে অবস্থান নেবে। তবে আজ সেই সংখ্যক মানুষ দেখা যায়নি।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী ছায়েদুল হক বিজয়নগরে যাওয়ার ঘোষণা দেন। হরতালের প্রসঙ্গ টেনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীকে ইঙ্গিত করে মন্ত্রী বলেন, ‘এটা আমার ব্যক্তিগত সফর নয়। মানুষকে সেবা দেওয়ার জন্য বিল্ডিং (প্রাণিসম্পদ হাসপাতাল) উদ্বোধন করব। এতে আপনি (মোকতাদির চৌধুরী) বাধা দেবেন আর মন্ত্রী তো হাতে চুড়ি পরে বসে থাকবে না। আপনার যা ইচ্ছে করুন। আসেন, দেখান। আপনার যা দেখানোর ইচ্ছে।’
এই অবস্থায় যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, বিজয়নগর, আশুগঞ্জ ও সরাইল উপজেলায় ১৪৪ ধারা জারি করে স্থানীয় প্রশাসন। শনিবার দিবাগত রাত ১২টার পর থেকে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।
হরতাল কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি আজ সকাল থেকে বিজয়নগরে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে বিক্ষোভ করেন সংসদ সদস্য মোকতাদির চৌধুরীর সমর্থকরা ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় সেখানে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। নেতাকর্মীরা মুখে কালো কাপড় বেঁধে এবং হাতে জুতা নিয়ে রাস্তায় নামে। বিক্ষোভের মধ্যেই কড়া পাহারায় মন্ত্রী ছায়েদুল হক বিজয়নগরে যান।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ডিএমপি: ৫ আগস্ট পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. সারোয়ার জাহানবিস্তারিত পড়ুন
আমির খসরু: নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “গণতন্ত্রেরবিস্তারিত পড়ুন
নারায়নগঞ্জে কোটা আন্দোলনকারীর উপর আক্রমন
নিজস্ব প্রতিবেদক : নারায়নগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ এলাকায় কোটা আন্দোলনকারী সংগঠকবিস্তারিত পড়ুন