টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ
পেশাদারির ফেরিওয়ালা ‘ওরা ১১’
পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে ঘর। হোটেল। স্টেডিয়াম। খোলা চোখে দূর থেকে মনে হয় ধবল পাহাড়ের দল পরম মমতায় কোলে নিয়ে আছে সব। দিনে হালকা গরম। সন্ধ্যা নামতেই ঠাণ্ডা। যখন-তখন আকাশ জুড়ে বৃষ্টি নামে। ঠাণ্ডা বেড়ে যায়। ভারতের হিমাচল প্রদেশে দিনরাত চলে প্রকৃতির এমনই নৈসর্গিক খেলা। যা দেখলে ব্যর্থ প্রেমিকের মনে আশার সঞ্চার হতে বাধ্য। ডাকাত সর্দারও হয়ে যেতে পারেন কবি! শুধু শান্তিতে নেই বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। পেশাদারির কঠিন এক যুদ্ধ মোকাবিলা করতে হচ্ছে মাশরাফি-সাকিবদের।
এশিয়া কাপ ফাইনাল শেষ হয় রাত সাড়ে এগারোটার দিকে। ফ্রেশ হয়ে ডিনার করে বিছানায় যেতে যেতে রাত দেড়টা। সকাল আটটায় বিমান বন্দরে! সেখান থেকে দিল্লি। দিল্লি থেকে ধর্মশালায়। একটি ম্যাচ হারলেই বিশ্বকাপের মূল পর্বে ওঠা হুমকির পড়বে। তার চেয়ে বড় কথা শেষ দেড় বছরে যে ক্রিকেট অর্জন তা নিয়ে রমিজ রাজাদের মতো নিন্দুকরা প্রশ্ন তুলে দিবেন। এই যখন অবস্থা, তখন পরিবেশ বিরুদ্ধ আচরণ করছে ছেলেদের। যেখানে খেলা হচ্ছে তা সমতল ভূমি থেকে প্রায় সাড়ে চার হাজার ফিট উপরে। প্রথমদিন অনুশীলনে নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা হয়েছে খেলোয়াড়দের। দিন কয়েক আগে যারা ঢাকার ৩৫ ডিগ্রি ছুঁইছুঁই গরমে ক্রিকেট খেলেছেন তারা এখন কনকনে ঠাণ্ডায়। সঙ্গে হিমেল হাওয়া। বৃষ্টি। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, শীতকালে এই শহরে নাকি তাপমাত্রা শূন্যের নিচে নেমে যায়। যতই রোদ হোক ২০ ডিগ্রির উপরে ওঠে না। রাতে তা চলে যায় ১০ ডিগ্রিতে।
আশার কথা হল, এমন পরিস্থিতির মোকাবিলা করে নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচটিতে জয় পেয়েছে ছেলেরা। বাংলাদেশ যেদিন প্রথম এখানে পা রাখে সেদিনও তুমুল বৃষ্টি হয়। পরদিন সকালে বৃষ্টি ছিল না। রোদ থাকতে থাকতে অনুশীলন সেরে ফেলা হয়। আবহাওয়ার শক্ত চেহারার পাশাপাশি মাশরাফিদের আটকে থাকতে হচ্ছে নিরাপত্তার কঠিন বেড়াজালে। এমন নিরাপত্তার জালে আটকা পড়তে হবে, তা বোধহয় মাশরাফি বিন মুর্তজারা স্বপ্নেও কল্পনা করেননি। বিমানবন্দর থেকে আইসিসি-র বাস সটান তাদের নিয়ে যায় পাহাড় চূড়ায়। প্যাভিলিয়ন হোটেলে। ঢোকামাত্রই বিশাল লোহার দরজা দুম করে বন্ধ হয়ে যায়। ম্যাচের পুরো সপ্তাহ বহিরাগতদের প্রবেশ সেখানে নিষিদ্ধ। ঢাকায় বা কলকাতায় খেলা থাকলে টিম হোটেলের বাইরে সমর্থকদের ভিড় খুব পরিচিত দৃশ্য। সাংবাদিকরা হোটেলের লবি বা রেস্তোরাঁতেও অনায়াসে যাতায়াত করতে পারেন। কিন্তু এখানে সে সবের বালাই নেই। পাকিস্তান ইস্যু নিয়ে স্থানীয়রা খেপে আছেন। তাই প্রশাসনও এভাবে জেগে আছে। দলের সঙ্গে থাকা এক কর্মকর্তা জানালেন, তিনি নাকি প্রথমদিন মোবাইলের সিম কিনতে আধাঘণ্টার জন্য বাইরে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আয়োজকদের সায় মেলেনি। পরে বাধ্য হয়ে হোটেলের এক ছেলেকে পাঠিয়ে সিম কিনিয়ে আনেন।
ধর্মশালা হিমাচল প্রদেশের একটা ছোট্ট শহর। সাধারণভাবে দুই ভাগে ভাগ করা- ধর্মশালা বা লোয়ার ধর্মশালা- যেখানে সব অফিস, বাজার আর বাসস্ট্যান্ড। আর নয় কিলোমিটার দূরে প্রায় দেড় হাজার ফিট ওপরে ধৌলাধার পর্বতের ছায়ায় ‘আপার ধর্মশালা’ বা ম্যাকলয়েডগঞ্জ। ম্যাকলয়েডগঞ্জ এখন নির্বাসিত তিব্বতি সরকারের পীঠস্থান। ১৯৬০ এ দালাইলামা এখানে প্রথম আসেন। আর ধর্মশালা এখন মোটামুটিভাবে ‘লিটল লাসা’ নামেই পরিচিত। এরও আগে ম্যাকলয়েডগঞ্জ ছিলো ব্রিটিশ ক্যান্টনমেন্ট। বিখ্যাত গুর্খা রেজিমেন্টের শুরু এইখানেই হয়েছিলো। ইতিহাসের গন্ধ সেই সঙ্গে প্রকৃতির অপার মহিমায় চোখ ভেজাতে এখানে প্রতি বছর হাজির হয় হাজার হাজার পর্যটক। কিন্তু মাশরাফিরা কিছুতেই এই ভ্রমণে চোখ-মন জুড়াতে পারছেন না। এখানো আরো দুটি ম্যাচ খেলতে হবে। ‘এ’ গ্রুপ থেকে চ্যাম্পিয়ন হলে তারপর আবার ফিরতে হবে কলকাতার গরম পরিবেশে! সাধারণ কোনো পর্যটক হলে হয়তো বলতেন ‘ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি’। কিন্তু তারা যে ক্রিকেটের ফেরিওয়ালা।
ভুল।
‘পেশাদারি’র ফেরিওয়ালা!
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
নারী ফুটবল দলের বেতন বকেয়া, দ্রুত সমাধানের আশ্বাস
টানা দ্বিতীয়বার সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেবিস্তারিত পড়ুন
প্রোটিয়াদের রানের পাহাড়, টাইগাররা নামতেই বদলে গেল পিচের ধরন!
চট্টগ্রাম টেস্টে প্রথম ৫ সেশনেরও বেশি সময় ব্যাটিং করেছে দক্ষিণবিস্তারিত পড়ুন
নেপালকে হারিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে স্বাগতিকদের ২-১ গোলে হারিয়ে সাফবিস্তারিত পড়ুন