প্রতিদিন মরছে ২৩ জন, সরকারি হিসাবে ৯
শুধু সড়ক দুর্ঘটনায় দেশে প্রতিদিন ২৩ জনের বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে। অন্য একটি হিসাবে প্রতিদিন মারা যাচ্ছে ১৪ জন। আর সরকারি হিসাবে গড়ে নিহতের সংখ্যা সাড়ে ৯ জন।
সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করা দুটি বেসরকারি সংগঠন এবং সরকারি তথ্য পর্যালোচনা করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
গত ৯ জানুয়ারি যাত্রী কল্যাণ সমিতি উপস্থাপিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে সারাদেশে ৬ হাজার ৫৮১টি ছোট-বড় সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ৮ হাজার ৬৪২ জন নিহত হন। আহত হন ২১ হাজার ৮৫৫ জন। মোট নিহতের সংখ্যাকে দিন হিসাবে ভাগ দিলে গড়ে প্রতিদিনের মৃতের সংখ্যা হয় ২৩ জন।
এর কিছুদিন আগে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) পরিসংখ্যান উপস্থাপন করে, ২০১৫ সালে সারাদেশে ২ হাজার ৬২৬টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এই দুর্ঘটনায় ৫ হাজার ৩ জন মারা যান, আহত হন ৬ হাজার ১৯৭ জন। এখানে মোট নিহতের সংখ্যাকে দিন হিসাবে ভাগ দিলে গড়ে প্রতিদিনের মৃতের সংখ্যা হয় ১৪ জনের বেশি।
যদিও সংগঠনটি বলেছে, আগের বছরের চেয়ে দেড় হাজার কম মানুষ মারা গেছে ২০১৫ সালে। তাদের হিসাবে ২০১৪ সালে সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছিল ২ হাজার ৭১৩টি। নিহতের সংখ্যা ছিল ৬ হাজার ৫৮২ জন।
আর সরকারি হিসাবে গত ১০ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষ মারা গেছে ৩৪ হাজার ৯১৮ জন। প্রতি বছর মারা যায় ৩ হাজার ৪৯১ জন। যা গড় করলে হয় ৯ জনের মতো।
তবে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) পরিসংখ্যান মতে, এ সংখ্যা দিনে ১৬ এবং বছরে ৫ হাজার ৭৬০ জন।
সরকারি হিসেবে নিহতের সংখ্যা কম আসার যৌক্তিকতা হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি হিসাব করা হয় সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর তথ্য এবং পুলিশি রেকর্ডের ভিত্তিতে। এক্ষেত্রে অনেক ঘটনা মামলা বা থানায় রেকর্ড হওয়ার আগেই চাপা পড়ে যায়। সে হিসাবে প্রকৃত মৃতের সংখ্যা কম হতে পারে। আর বেসরকারি দুটি সংগঠনই নিহতের সংখ্যা নির্ণয় করে মিডিয়ায় প্রকাশিত এবং প্রচারিত সংবাদের ভিত্তিতে। এক্ষেত্রে কিছু হিসাব বাদ পড়তে পারে। সে হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সড়ক দুর্ঘটনায় প্রকৃত মৃতের সংখ্যা আরো বেশি।
অন্য একটি গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের প্রায় ৩২ শতাংশ ১৬ থেকে ৩২ বছর বয়সের মধ্যে। অর্থাৎ সড়ক দুর্ঘটনায় আমরা হারাচ্ছি সম্ভাবনাময় তরুণ ও কর্মক্ষম যুবশক্তি। যা দেশের অগ্রগতি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য মারাত্মক হুমকি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গড় যা হোক সড়ক দুর্ঘটনায় একজন মানুষও মারা যাওয়া কাম্য নয়। কারণ স্বাধীনতার পর থেকে আমাদের দেশে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ এবং উন্নয়ন হয়েছে সড়ক পথে। সেক্ষেত্রে এ খাতে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্য কখনোই কাম্য নয়।
সড়ক দুর্ঘটনা প্রাকৃতিক নয়, মানবসৃষ্ট কারণ। সে হিসেবে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতরা পরোক্ষভাবে হত্যার শিকার হন। কিন্তু হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেই দেশে। আবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও বাস্তবায়ন হয় না বললেই চলে। ফলে সড়ক দুর্ঘটনা না কমে জ্যামিতিক হারে বেড়ে চলেছে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, দুর্ঘটনার প্রকৃত তদন্ত হয় না। বড় বড় দুর্ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটিতে সড়ক বিভাগ, বিআরটিএ ও পুলিশ কর্মকর্তাদেরও রাখা হয়। কিন্তু দুর্ঘটনার সব দায় চালকের ওপরই চাপানোর একটা প্রবণতা সবসময় আমরা দেখেছি। এ কারণে দুর্ঘটনার সঠিক কারণ চিহ্নিত করে প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয় না।
সমাধান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দুর্ঘটনা তদন্তে বিশেষায়িত ইউনিট গঠন করতে হবে। ওই কমিটি দুর্ঘটনার স্থান, যানবাহন, পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতিসহ সব বিষয় খতিয়ে দেখে কারণ চিহ্নিত করবে। এরপর সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে আন্তরিকতার সঙ্গে উদ্ভুত সমস্যা সমাধান করতে হবে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপকবিস্তারিত পড়ুন
দুই দফা কমার পর ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম
টানা দুই দফা কমার পর দেশের বাজারে ফের স্বর্ণের দামবিস্তারিত পড়ুন
চট্টগ্রামে দুর্ঘটনার কবলে হাসনাত-সারজিসের বহরের গাড়ি
আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের কবর জিয়ারত শেষে ফেরার পথে সড়কবিস্তারিত পড়ুন