প্রথম চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়ার মুহূর্তটি আমাকে যেভাবে বদলে দিয়েছে
যখন আমার বস এবং তার বস আমাকে তাদের পিছু পিছু নিচতলার বৈঠক ঘরে যে বললেন আমি একটি নোটপ্যাড এবং কলম তুলে নিলাম। আমি নিজেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সংক্রান্ত একটি একঘেঁয়ে কথপোকথনের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছিলাম।
দিনটি ছিল জানুয়ারির মধ্যভাগের এক ঠাণ্ডা ও ধূসর শুক্রবার। আর আমি কোনো ঘটনা ছাড়াই দিনটি পার করতে চেয়েছিলাম যাতে আমি পানশালায় যেতে পারি।
আমার উর্ধ্বতনরা হয়তো উত্তেজিত এবং বিষণ্ন ছিলেন। কিন্তু বিষয়টি আমি সত্যিই লক্ষ্য করিনি। আমার বস কথা শুরু করলেন। তিনি বললেন, “আপনার মনে হয় এখানে কাজ করে খুব একটা ভালো লাগছে না, তাই কি?”
আমার বসের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে তার বস বললেন, “আপনার কাছে অনেক ভালো ভালো ধারণা আছে। আর আপনি একজন ভালো লেখকও বটে। কিন্তু আপনাকে আমরা যে জন্য নিয়োগ দিয়েছি আপনি তা করছেন না। আমাদের এমন একজন লোক দরকার যিনি প্রতিষ্ঠান চালানোর প্রতিষ্ঠান চালানোর ক্ষেত্রে সত্যিই বেশ দক্ষ। আর আপনি বলেছেন, এ বিষয়ে আপনি অত বেশি একটা শক্তিশালি নন। ”
“আমরা আপনাকে পরের মাসের বেতন দিয়ে দেব এবং আমাদের এখানে কাজের অভিজ্ঞতার রেফারেন্স দেওয়ার সুযোগ দেব। আপনি এখানে কাজ করার বিষয়টিকে একটি ইন্টারনশীপ হিসেবে বলে চালিয়ে দিতে পারেন। ”
অবশেষে আমি বুঝতে পারলাম বসরা আসলে কী বলতে চান। আমার চোখগুলো জ্বলজ্বল করে উঠলো। এবং আমার তলপেটেও মোচড় দিল। আমার বস কদর্যভাবে আমার হাত চাপড়ে দিলেন। বললেন, “একদিন এই মুহূর্তটি আপনার স্মৃতির গভীরে তলিয়ে যাবে। ”
আমার বয়স ছিল তখন ২২ এবং আমি একজন সাড়ম্বর ও একটি ধনসমৃদ্ধ স্বচ্ছল জীবনের স্বপ্নে বিভোর ছিলাম। ফরে তার মন্তব্যগুলো আমার কাছে হাস্যকর লাগছিল। তবে ১০ বছর পর আমি একটি বই লিখি। আমার তৃতীয় বই। যাতে ওই ঘটনার একটি বিবরণ আছে। বইটির নাম “কীভাবে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ হতে হবে”। আগামী বসন্তে বইটি প্রকাশিত হবে।
একটা সময়ে বুঝতে পারলাম আমি আসলে ওই চাকরিতে যতটা মন্দি ছিলাম কোনো মানুষের পক্ষেই হয়তো কোনো কিছুতে এতটা মন্দ হওয়া সম্ভব নয়। তারা আমাকে চাকরিচ্যুত করে ঠিক কাজটিই করেছিল।
এর আগের গ্রীষ্মে আমি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে উচ্চতর দ্বিতীয় শ্রেণিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছি। এরপর আমি দাম্ভিকতা এবং আতঙ্ক নিয়ে তিন বছর সময় পার করেছি। অবশ্য আমি অবশেষে ঠিক হয়ে যাই। যেমনটা আমি সবসময়ই করি। কিন্তু আমি যদি তা করতে না পারতাম তাহলে কী হত? স্কুলে থাকাকালেও আমি প্রচুর আত্মবিশ্বাসহীনতায় ভুগেছি। কিন্তু সবসময়ই আমি অবশেষে সব বাধা পেরিয়ে শীর্ষস্থানটি দখল করতাম।
বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজটি আরো বেশি কঠিন ছিল। আর আমি এর বেশিরভাগ সময়ই তীব্র ক্ষোভ ও বিরক্তি নিয়ে কাটিয়েছি। কিন্তু নিজেকে সত্যিকার অর্থেই কাজে লাগানোর চেষ্টা করিনি। যাই হোক সকল বাধা-বিপত্তি এড়িয়ে আমি অবশেষে একটি ডিগ্রি অর্জন করি যা আমার আত্মবিশ্বাস আরো বাড়িয়ে তোলে। আমি জানতাম যে আমি সবসময়ই শেষ পর্যায়ে এসে ভালো করি।
আর আমার বন্ধু মহলের মধ্যে আমিই যদি সবার আগে একটি যথাযথ “চাকরি” যোগাড় করতে পারি তাহলে বিষয়টি আরো নিশ্চিত হবে। পাবলিক রিলেশন বা গণ সংযোগ সম্পর্কে আমার ধারণা গড়ে উঠেছিল “স্লাইডিং ডোরস” নামের সিনেমার ওপর ভিত্তি করে। আর আমি আসলে এই খাতেই ক্যারিয়ার করতে চাইনি। তবে আমার সত্যিকার স্বপ্নের পিছু তাড়া করা এবং জীবিকার জন্য লেখালেখি করাটা হাস্যকরই মনে হত। আমাকে ওই ধরনের একটি চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা করতে হবে! শুরু করার আগেই আমি ব্যর্থ হব।
চাকরি হারিয়ে আমি বুঝতে পারি আমি আসলে এমন লোক নই যিনি সুখি সমাপ্তির যোগ্য। আমি আসলে কোনো কিছুরই যোগ্য না। আমার পছন্দটা আসলে ঠিক হয়নি। আমাকে যে পদ দেওয়া হয়েছিল আমি আসলে তার যোগ্য ছিলাম না। আমি যথেষ্ট কঠোর চেষ্টা করিনি। আর পরিণতিগুলো মোকাবিলা করার দায়িত্বও আমার ওপরেই ছিল।
আর এটা আমাকে এও দেখায় যে, আপোষ করা থেকে কোনো ভালো বা বৈধতা আসে না। আর কাউকেই আপনার দ্বিতীয় পছন্দ হিসেবে বাছাই করাটা ভালো কাজ নয়। আর যখন সবকিছু উল্টো পথে চলতে থাকে তারা আর আপনাকে পুনরায় পছন্দ করবে না।
আমি আমার বাবা-মার বাড়ি ফিরে যেতে পেরে এবং একটি কল সেন্টারে খণ্ডকালীন কাজ পেয়ে নিজেকে যথেষ্ট ভাগ্যবান মনে করছিলাম। এরপর আমার স্বপ্নের চাকরির বিজ্ঞাপন হলো। এটি ছিল একটি কিশোর ম্যাগাজিনের ফিচার ইন্টার্নশীপ। আর আমি সেখানে কাজ করার জন্য এতটাই উদগ্রীব ছিলাম যে, আমি পীড়ি হয়ে পড়ছিলাম।
তখনও আমার মনে পেছনে লুকিয়ে রাখার মতো বিকল্প কোনো পরিকল্পনা ছিল না। আমার সম্পাদক বলেন, তিনি আমাকে চাকরিটি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তখন যখন আমি তাকে বলি যে ভোগ ম্যাগাজিনের জন্য কাজ না করে বরং আমি তার জন্যই কাজে করতে চাই। আমি আসলে সত্যিই তাই চাই।
আমি সরাসরি ক্যারিয়ারের পথের দরজায় কড়া নেড়েছিলাম এবং অবশেষে ঘন জঙ্গলের মধ্য দিয়ে নিজের রাস্তাটি বের করে নিতে বাধ্য হয়েছি। এখন একজন ফ্রিল্যান্স লেখক হিসেবে আমি পছন্দের একটি কাজই করছি। আমি মনে করি এটাই আমার প্রাপ্য ছিল। তবে এই ক্যারিয়ার অর্জন করতে আমাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠা, সাপ্তাহিক ছুটিতে লেখা, নিজের উদ্যম এবং পছন্দের প্রতি প্রতিশ্রুতিশীলতা প্রদর্শনের জন্য যা পারি অনবরত তাই করে যাওয়া এন সবই করেছি আমি। চাকরি হারানোর পর আমি বুঝতে পারি দুনিয়ায় আমার জন্য কোনো চাকরি নেই। বাজে ভাবে ব্যর্থতাই আমাকে নিজের ভাগ্য নিজে গড়ার ব্যাপারে এবং নিজের পছন্দের পিছু তাড়া করার অনুপ্রেরণা যোগায়।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত চলায় এমবাপ্পেকে বিজ্ঞাপন থেকে সরাল রিয়াল
আর্থিক দ্বন্দ্বের মধ্যে পিএসজি ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে আসার পর একেরবিস্তারিত পড়ুন
মিয়ানমারে বন্যায় মৃতের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে ২২৬
ঘূর্ণিঝড় ইয়াগির প্রভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণেবিস্তারিত পড়ুন
ইসরাইলি হামলায় আরও ৩৮ ফিলিস্তিনি নিহত
গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি বাহিনীর তান্ডবে প্রাণ গেছে আরও ৩৮বিস্তারিত পড়ুন