প্রথম টেস্ট জয়ের এক যুগ
ততক্ষণে জয়টা নিশ্চিত হয়ে গেছে। গ্যালারিজুড়ে চলছে উন্মাদনা। ডগলাস হন্ডো আর ক্রিস্টেফার এমপফু জুটিটা টিকল মাত্র ১৭ বল। এনামুল হক জুনিয়রের বলে এমপফুর ব্যাট ছুঁয়ে বল তখন বাতাসে। সবার নজর বলটার ওপর। সিলি মিডঅফে মোহাম্মদ আশরাফুল ক্যাচটা ধরতেই চিৎকার আর গর্জনে ফেটে পড়ল চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়াম। টেলিভিশন আর রেডিওর মাধ্যমে খবর পড়ে গেল সারা দেশে। এর পর প্রথম টেস্ট জয়ের উৎসব চলল গোটা দেশজুড়ে। টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম জয়ের আনন্দে ভাসল লাল-সবুজের পতাকা। বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে দিনটি হয়ে গেল শ্রদ্ধা আর অহংকারের।
ক্রিকেটের সর্বোচ্চ পরিসরে যে মুহূর্তটির জন্য দেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা অপেক্ষা আর প্রার্থনায় ডুবে ছিল, এবার তার অবসান হলো। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশ পেল তাদের প্রথম টেস্ট জয়ের স্বাদ। বিশ্ব ক্রিকেটে স্বর্ণাক্ষরে লেখা হলো বাংলাদেশের নাম। আজ দীর্ঘ এক যুগ পরও ১০ জানুয়ারি কোটি ক্রিকেটপ্রেমীকে যেন বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছে সেই চিৎকার আর উল্লাসের কথাই।
টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পাঁচ বছরের মাথায় চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে সংগ্রহ ৪৮৮ রান। প্রথম ইনিংসে জিম্বাবুয়ে ৩১২ রানে অলআউট হয়ে যাওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ অলআউট ২০৪ রানে। জিম্বাবুয়ের সামনে লক্ষ্য ৩৮১ রানের। পঞ্চম দিনে দারুণ খেলছেন মাসাকাদজা-টেলর, ১৫ ওভারেই তুলে ফেলেছেলেন ৬৬ রান। কিন্তু ৪৪ রান করা টেইলরকে এলবিডব্লিউ করে সাজঘরে ফেরান এনামুল হক জুনিয়র। আর তাতেই যেন তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল জিম্বাবুয়ে। এরপর মাশরাফি ও এনামুল হক জুনিয়রের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেল জিম্বাবুয়ের ইনিংস। ২২৬ রানের জয়টাই হয়ে রইল দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় ঘটনা।
তবে অভিষেক থেকে প্রথম জয়, মাঝের পাঁচ বছরের হাসিকান্নার গল্পটাও ছোট নয়। ২০০০ সালের ২৬ জুন বাংলাদেশ দশম টেস্টখেলুড়ে দেশ হিসেবে আইসিসির সদস্যপদ লাভ করে। ১৩ নভেম্বর বাংলাদেশ ক্রিকেট দল নাইমুর রহমানের অধিনায়কত্বে প্রথম আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেট অঙ্গনে প্রবেশ করে। ভারতের বিপক্ষে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচে অভিষেক টেস্টেই সেঞ্চুরি (১৪৫) করে অস্ট্রেলিয়ার চার্লস ব্যানারম্যান ও জিম্বাবুয়ের ডেভিড হটনের পাশে নাম লেখান আমিনুল ইসলাম। অধিনায়ক নাইমুর রহমানের ১৩২ রানে ৬ উইকেট অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসে কোনো বোলারের সেরা বোলিং।
কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিং বিপর্যয়ের কারণে ৯ উইকেটে হেরে যায় বাংলাদেশ। পরে ২০০১ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কলম্বোর এসএসসিতে অভিষেক টেস্টে ১৭ বছর ৬১ দিন বয়সে সেঞ্চুরি করে রেকর্ড গড়েন মোহাম্মদ আশরাফুল। ২০০৩ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে করাচি টেস্টে প্রথমবারের মতো প্রথম ইনিংসে লিড নেয় বাংলাদেশ। মুলতানে তৃতীয় ও শেষ টেস্টে জিততে জিততে ১ উইকেটে হেরে বসে তারা। এই সিরিজে বাংলাদেশের পক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম হ্যাটট্রিক করেন অলক কাপালি। টানা ২১ টেস্ট হারার পর হাবিবুল বাশারের নেতৃত্বে ২০০৪ সালে জিম্বাবুয়ে সফরে দ্বিতীয় টেস্টে ড্র করতে সমর্থ হয় বাংলাদেশ, যদিও খারাপ আবহাওয়ার কারণে তিন দিন খেলা বন্ধ থাকে। ২০০৪ সালে সেন্ট লুসিয়া টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হাবিবুল বাশার, মোহাম্মদ রফিক ও খালেদ মাসুদের সেঞ্চুরির কল্যাণে প্রথম নিজেদের কৃতিত্বে ড্র করে বাংলাদেশ। আর তারপরই ২০০৫ সালের ১০ জানুয়ারি ৩৫তম টেস্টে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম জয় পায় বাংলাদেশ।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
নারী ফুটবল দলের বেতন বকেয়া, দ্রুত সমাধানের আশ্বাস
টানা দ্বিতীয়বার সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেবিস্তারিত পড়ুন
প্রোটিয়াদের রানের পাহাড়, টাইগাররা নামতেই বদলে গেল পিচের ধরন!
চট্টগ্রাম টেস্টে প্রথম ৫ সেশনেরও বেশি সময় ব্যাটিং করেছে দক্ষিণবিস্তারিত পড়ুন
নেপালকে হারিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে স্বাগতিকদের ২-১ গোলে হারিয়ে সাফবিস্তারিত পড়ুন