প্রথম ময়নাতদন্তকারীর বক্তব্য প্রত্যাখ্যান তনুর মা–বাবার
কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনুর লাশের প্রথম ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক শারমিন সুলতানার বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছেন তাঁর মা-বাবা।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে তনুর মা আনোয়ারা বেগম গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে দাবি করেন, তনুর লাশের প্রথম সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে অসত্য তথ্য লেখা হয়েছে। এতে তনুর মাথার পেছনের জখম ও নাকের আঘাতের কথা উল্লেখ করা হয়নি। শরীরের বিভিন্ন অংশে ও পায়ের আঘাতের কথাও লেখা হয়নি। একই কথা বলেন তনুর বাবা ইয়ার হোসেনও।
১৯ মে তনুর বাবা ইয়ার হোসেনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক সালমা আলী কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের তিন চিকিত্সককে উকিল নোটিশ দেন। গতকাল বুধবার ওই নোটিশের জবাব দেন তিন চিকিত্সক। এর মধ্যে প্রথম ময়নাতদন্তকারী চিকিত্সকের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছেন তনুর পরিবার। অন্য দুই চিকিত্সকের বক্তব্য নিয়ে তাঁদের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই।
প্রথম ময়নাতদন্তকারী চিকিত্সক শারমিন সুলতানা উকিল নোটিশের জবাবে বলেন, ‘সোহাগী জাহান তনুর (১৯) লাশ ময়নাতদন্ত করার জন্য কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সাইফুল ইসলাম সুরতহাল প্রস্তুত করেন। এরপর পুলিশ কনস্টেবল মোবারক হোসেনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে তনুর লাশ পাঠানো হয়। বাংলাদেশের সব মেডিকেল কলেজে যে নিয়মে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়, সেই নিয়মেই যথাযথভাবে তনুর লাশের ময়নাতদন্ত ও সুরতহাল প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা হয়। সুরতহাল প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে কুমিল্লা সিএমএইচ হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিত্সক লে. কর্নেল সেলিনা বেগম, তনুর বাবা ইয়ার হোসেন, মা আনোয়ারা বেগম এবং ভাই আনোয়ার হোসেনসহ ছয়জন সাক্ষীর সাক্ষ্যসহ সুরতহাল প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হয়। ওই সুরতহাল প্রতিবেদনে তনুর লাশে যে জখমের কথা উল্লেখ আছে, তার সঙ্গে মলদ্বার এবং যৌনাঙ্গ স্বাভাবিক ছিল বলে উল্লেখ রয়েছে। চিকিত্সক হিসেবে আমি ভালোভাবে সুরতহাল প্রতিবেদন ও তনুর লাশের জখমগুলো মিলিয়ে দেখি এবং আমি আমার বিজ্ঞানসম্মত জ্ঞানানুসারে সব প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে যথাযথ প্রক্রিয়ায় সঠিকভাবে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দিই। এতে মৃত্যুর কারণ নির্ণয় করা যায়নি এবং ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি। প্রথম ময়নাতদন্তের সময় আমার কাছে ডিএনএ পরীক্ষার কোনো চাহিদাপত্র দেওয়া হয়নি। সাধারণত সুরতহালে পুলিশ কর্তৃক চাহিদাপত্র দেওয়া না হলে ডিএনএ অ্যানালাইসিসের জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয় না। তনুর ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে কোনো মিথ্যা তথ্য প্রদান করিনি। সুতরাং প্রথম ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে আমার সম্পর্কে যে তথ্য প্রদান করা হয়েছে, তা সঠিক নয়।’
চিকিত্সক শারমিন সুলতানার এমন বক্তব্যের সঙ্গে ভিন্ন মত পোষণ করেন তনুর বাবা ইয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমি নিজের চোখে দেখেছি, তনুর মাথার পেছনে আঘাতের চিহ্ন। নাক চ্যাপ্টা হয়ে গেছে। কানের নিচে দাগ রয়েছে। এখন শারমিন সুলতানা যা বলছেন, সব মিথ্যা তথ্য। দ্বিতীয়বার কবর থেকে লাশ উঠানোর সময়ও মাথার পেছনে আঘাতের চিহ্ন দেখেছেন সংশ্লিষ্টরা। আমি এ প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করছি।’
এই অভিযোগ প্রসঙ্গে চিকিত্সক শারমিন সুলতানা বলেন, ‘সুরতহাল অনুযায়ী প্রথম ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন করা হয়েছে। আমি যা পেয়েছি, তা থেকেই প্রতিবেদন দিয়েছি।’
গত ২০ মার্চ তনুর লাশ কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসের পাওয়ার হাউসের অদূরের কালভার্টের পাশে পশ্চিমে ঝোপ থেকে উদ্ধার করা হয়। ২১ মার্চ তনুর লাশের প্রথম ময়নাতদন্ত হয়। এতে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত নয় এবং ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি বলে প্রতিবেদন দেন চিকিত্সক শারমিন সুলতানা। ২৮ মার্চ আদালত নির্দেশ দেন, তনুর লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত করার। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ৩০ মার্চ তনুর লাশ মুরাদনগর উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের বাড়ির কবরস্থান থেকে উত্তোলন করা হয়। এদিন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের গঠিত মেডিকেল বোর্ড দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত করে। এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন প্রকাশ হয়নি।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
বাগেরহাটে চাষ হচ্ছে ‘নেদারল্যান্ডের লিলিয়াম’
দেশের মাটিতে নতুন সংযোজন লিলিয়াম ফুল। এটি শীতপ্রধান দেশের হলেওবিস্তারিত পড়ুন
আন্দোলনে হামলা-হুমকি-র্যাগিংসহ বিভিন্ন অপরাধে রাবির ৩৩ শিক্ষার্থীকে শাস্তি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরাসরি হামলা-হুমকি-র্যাগিংসহ বিভিন্ন অপরাধে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি)বিস্তারিত পড়ুন
বায়ুদূষণে আজ শীর্ষে দিল্লি, ঢাকা দ্বিতীয়
বাংলাদেশের জনবহুল রাজধানী ঢাকা রবিবার সকাল সোয়া ৮টার দিকে দূষিতবিস্তারিত পড়ুন