প্রধানমন্ত্রী সংসদে কাঁদলেন , সবাইকে কাঁদালেন….
বিকেলে সংসদ অধিবেশনে প্রবেশের আগেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছিলেন হাস্যোজ্জ্বল। কিন্তু নিজ পরিবারের সদস্যদের নির্মম হত্যার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যার হাস্যোজ্জ্বল মুখে নেমে আসে কালো ছায়া। কথা বলার একপর্যায়ে কেঁদে ফেললেন তিনি। নেতার এ কান্নায় চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি উপস্থিত অন্য সংসদ সদস্যরাও।
বুধবার সংসদ অধিবেশনে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য বেগম ফজিলাতুন নেসা বাপ্পীর লিখিত প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়েই প্রধানমন্ত্রী আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন।
বিভীষিকাময় সেইসব দিনরাত্রির অভিজ্ঞতা তাকে নতুন শপথে বলিয়ান হয়ে দেশ ও মানুষের কল্যাণে আত্মনিয়োগ করার সাহস যুগিয়েছে বলেও জানান সংসদ নেতা।
তিনি বলেন, ‘দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্যই রাজনীতি করি। আমি জানি আমার পদে পদে বাধা আসবে। আমার জীবন দেশের মানুষের জন্য উৎসর্গ করেছি। জীবনে কখনো কারো কাছে মাথানত করি নাই, করবো না। তাই ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার মতো ভয়াবহ ঘটনার পরও মৃত্যুভয় কাজ করেনি। মৃত্যুকে কখনো ভয় পাই না।’
বঙ্গবন্ধু হত্যার পরবর্তী সময়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ৩০ জুলাই আমি ও রেহানা জার্মানি রওনা হই। ১৫ দিনের মাথায় হঠাৎ শুনি আমরা দুই বোন এতিম হয়ে গেছি। নিঃস্ব, রিক্ত হয়ে গেছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর সড়কের বাসায় ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাতে আমার পিতা-মাতা, ভাইসহ পরিবারের সকল সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের জীবনে যেমন এই দিনটি একটি কালো দিন তেমনি বাংলাদেশের জনগণের জীবনেও নেমে আসে অমানিষার অন্ধকার।’
তিনি বলেন, ‘১৫ আগস্ট ঘাতকের দল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ছিলেন এবং যেদিন তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে সেদিনও তিনি রাষ্ট্রপতি ছিলেন। আমার মা বেগম ফজিলাতুন নেসা, আমার ছোট ভাই মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, মুক্তিযোদ্ধা লেফটেনেন্ট শেখ জামাল, দশ বছরের ছোট্ট শিশু ভাই শেখ রাসেলকে নির্মমভাবে হত্যা করে। কামাল ও জামালের নব পরিণীতা বধূ যাদের হাত তখনও বিয়ের মেহেদির রঙ রাঙানো, তাদের নির্মমভাবে হত্যা করে। আমার চাচা মুক্তিযোদ্ধা শেখ আবু নাসেরকে হত্যা করে। রাষ্ট্রপতির মিলিটারি সেক্রেটারি কর্নেল জামিলকে হত্যা করে। কর্তব্যরত পুলিশ অফিসারদের হত্যা করে। একই সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা শেখ ফজলুল হক মনি এবং তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনিকে হত্যা করে। কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, তার ১৩ বছরের ছেলে আরিফ, ৪ বছরের নাতি সুকান্ত, ১৭ বছরের ভাগ্নে রিন্টু, ভ্রাতুস্পুত্র সাংবাদিক শহীদ সেরনিয়াবাত, কাজের মেয়ে ও তার শিশু সন্তান পোটকাসহ আরো অনেককে নির্মমভাবে হত্যা করে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার ফুফু হেলেন গুলির আঘাতে আহত হন। তার পুত্রবধূ সাহানা, ১২ বছরের মেয়ে রীনা, ২০ বছরের বিউটি, ১৮ বছরের ছেলে খোকন গুলির আঘাতে আহত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করে। একইসঙ্গে ঘাতকরা আমার ছোট ফুফু লিলির বাড়িতে যায় এবং আমার ফুফা সৈয়দ হোসেনকে গ্রেপ্তার করে এবং ফুফুকে গৃহবন্দী করে রাখে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অত্যন্ত দুঃখের বিষয় সভ্য দেশ, উন্নত দেশ হয়েও বঙ্গবন্ধু পরিবারের খুনিদেরকে আশ্রয় দিচ্ছে। আমেরিকা, কানাডার মতো দেশ কেন এটা করছে আমার জানা নেই। তাদের সরকারের কাছে অনুরোধ করেছি, কোনো সহযোগিতা করছে না। যে কোনো কারণেই হোক আমাদের সহযোগিতা করছে না এটাই হলো বাস্তবতা, এটা দেশবাসীর জানা দরকার।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর খুনিদের মধ্যে দুইজন আমেরিকায়, একজন কানাডায়, দুইজন লিবিয়ায় ছিল, পরে পাকিস্তানে গেছে। বিভিন্ন মাধ্যমে জানা গেছে, তারা পাকিস্তানে আছে। যদিও পাকিস্তান সরকার স্বীকার করে না। এরই মধ্যে চ্যানেল আই কর্নেল রশিদ চৌধুরীর সাক্ষাৎকার নিয়ে এসেছে। কাজেই সেখানে যে রশিদ চৌধুরী রয়েছে সেটা নিশ্চিত।’
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ভরিতে এবার ১,৯৯৪ টাকা বাড়লো স্বর্ণের দাম
দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছিল বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনবিস্তারিত পড়ুন
সংস্কার হলে পেট্রোল-ডিজেলের দাম কত কমানো সম্ভব জানালো সিপিডি
মূল্য নির্ধারণ কাঠামোর সংস্কার হলে লিটার প্রতি পেট্রোলের দাম ১১বিস্তারিত পড়ুন
রাজশাহীতে সমন্বয়ককে হাতুড়ি দিয়ে পেটানোর অভিযোগ
রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় এক সমন্বয়ককে হাতুড়িপেটা করার অভিযোগবিস্তারিত পড়ুন