প্রবাসের জীবন ও বাস্তবতা
সিল্কসিটিতে বসে আছি। জানালা দিয়ে দূরে তাকিয়ে দেখছি আর ভাবছি কীভাবে বিস্তীর্ণ সবুজ পেছনের দিকে মিলিয়ে যাচ্ছে। হালকা বৃষ্টির দুই একটা ফোঁটা এসে পড়ছে হাতে আর অজস্র স্মৃতির মাঝে আমি কীভাবে যেন তলিয়ে যাচ্ছি। আমার এই হারিয়ে যাওয়াটাকে আমি সব সময় উপভোগ করি। মনে হয় এই সময়টুকু যেন একান্তই আমার। যারা পৃথিবীর সব কিছুতেই থাকে কিন্তু কোথাও থাকে না তারা হয়তো এভাবেই ভাবে। হঠাৎ বৃষ্টির একটা ঝাপটা এসে মুখে পড়তেই ঘুম ভেঙে গেল। চারপাশে তাকাতেই কেমন যেন আইসোলেটেড হয়ে গেলাম। ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না আমি কোথায়, কোন্ ভিনগ্রহে? কিছুক্ষণ পর বুঝলাম পুরটাই স্বপ্ন ছিল। আমি রাতের ট্রেনে সেনইয়াং থেকে বেইজিং যাচ্ছি। ভিনদেশে হাজার মাইল দূরে থেকেও মাটির গন্ধ বাতাসের ঝাপটা যেন আমাকে মনে করিয়ে দেয় এ আমার নয়।
অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে, এক দেশ থেকে আরেক দেশে চলে এসেছি। কিন্তু আজও মনের অজান্তে হয়তো নিজের পৃথিবীটাকে খুঁজে ফিরি। হাজার মানুষের ভিড়ে শত কর্ম ব্যস্ততার মাঝে সেই চিরচেনা মুখগুলোকে খুঁজি। এ যেন অন্ধকারের মাঝে একটুকরো আলো খোঁজার বৃথা চেষ্টা।
সকালে ঘুম থেকে ওঠার জন্য আজ আর ছোট বোনের ডাকের প্রতীক্ষায় থাকতে হয় না। এখন আর বিকেল আর সকালের পার্থক্য বুঝি না, সারা দিনের শেষে না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লে এখন আর কেউ ডাকে না, বাবা খেতে আয়। আমার প্রতিটা অভিমান ভরা দিন শুধু ক্যালেন্ডারের পাতাতেই আটকে থাকে।
কখনো তুষারে জমে যায় তো আবার কখনো বৃষ্টিতে ভিজে যায়। তবু আমি এখনো যেন মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনতে থাকি বারান্দায় বসে টিনের চালে বৃষ্টির সেই রিমঝিম শব্দ। দেখতে পাই মাঝরাতে নারিকেলের চিরল পাতার মাঝে আধ ফালি চাঁদ, রাতের বাতাসে যেন এখনো ভেসে আসে বুনো ফুলের গন্ধ।জার্মানিতে গানের আসরে
ইদানীং আমার কর্মস্থল ৩০ ফিট মাটির নিচে। যেখানে কোনো আলো বাতাস, মানুষজন নেই। চারপাশে শুধু মেশিন, ক্লাস্টার আর ইন্টার ফের মিটার লেজার ল্যাব। সারা দিন এই মেশিনগুলোর সঙ্গে থাকার পর সন্ধ্যায় বের হয় বাসার পথে, যত্নে বেড়ে ওঠা টিউলিপ চেরি বা নানান বর্ণের গন্ধের ফুলগুলোও যেন আমার দেশের পথের ধারে অযত্নে বেড়ে ওঠা শিমুল বা কৃষ্ণচূড়ার জায়গাটা নিতে পারে না।
তবুও কী সব কিছু আজীবন ধরে রাখা যায়! একদিন চেনা পৃথিবীটাও হয়তো হারিয়ে যায়, মুখগুলো অস্পষ্ট হয়ে যায়, বর্ণগুলো বিবর্ণ হতে থাকে। দুইটা সত্তা নিয়ে বেঁচে থাকার যন্ত্রণাটা মনে হয় শুধু তারাই বুঝবে, যারা যা থাকতে চায় কিন্তু থাকতে পারে না আর যা হতে চাই তা কখনো পারা হয়ে ওঠে না। আর দিন শেষে আপনজনদের এই না বোঝাটাই থেকে যায় হিসাবের খাতায়। আর এভাবেই পারা ও না পারার মাঝে হয়তো কেটে যায় একটা জীবন। তাই হয়তো প্রায়ই ভাবি আমার শেষ নিশ্বাসটুকু হয়তো আটকে থাকবে ভোরের উঠানে পড়ে থাকা শিউলির জন্য, শিমুলের ডালে বসে থাকা কোয়েলের জন্য, মায়ের মমতার জন্য।
(Student Assistant at Max Planck Institute for Gravitational Physics, Hannover, Germany. Joint Masters Student in ITIS, TU Braunschweig Leibniz University of Hannover, TU Clausthal The Georg August University of Gottingen, Braunschweig, Germany. Alumni Shenyang University of Chemical Technology, Shenyang, China. Hajee Mohammad Danesh Science and Technology University, Dinajpur, Bangladesh)
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
যে কারনে যুক্তরাজ্য বিএনপির সম্মেলন স্থগিত
বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশক্রমে মাত্র এক সপ্তাহের নোটিশে যুক্তরাজ্য বিএনপিরবিস্তারিত পড়ুন
ইউরোপ থেকে অবৈধ বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনতে বাড়ছে চাপ !
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্যভুক্ত বিভিন্ন দেশে অবৈধভাবে থাকা বাংলাদেশিদের ফিরিয়েবিস্তারিত পড়ুন
বাংলাদেশ থেকে তিন হাজার শ্রমিক নেবে সৌদি আরব
চলতি বছরের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন পেশার প্রায় ৩ হাজারবিস্তারিত পড়ুন