পহেলা বৈশাখ: হিজড়া আতঙ্কে রাজধানীসহ সারা দেশ
সারা বছর রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় হিজড়া আতঙ্কে থাকে সাধারণ মানুষ। রাস্তাঘাট যেখানে সেখানে ইচ্ছে মত চাঁদা আদায় করে হিজড়ারা। কেউ টাকা দিতে রাজি না হলে তাকে সবার সামনে লাঞ্চিত করা হয়।
হিজড়াদের উৎপাত শহর কেন্দ্রীক হলেও বর্তমানে গ্রামে-গঞ্জেও এদের প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে। রাস্তা, দোকন, বাসা, পরিবহণ কোন স্থানেই হিজরা থেকে রেহাই পাচ্ছে না সাধারণ নাগরিকরা।
সোমবার (১১ এপ্রিল) অ্যাসাইনমেন্টের উদ্দেশ্যে ঝিগাতলা থেকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দিকে যাচ্ছিল আরিফুল ইসলাম। হঠাৎ তিনি চিৎকারের শব্দ শুনলেন। ঘুরেই দেখলেন চার জন হিজড়া ধানমন্ডির ১৫ নাম্বার রোডের ৩৬ নাম্বার বাসায় হাতাহাতি করছে। ঘটনাটি দেখে কাছে বিষয়টি জানার চেষ্টা করলেন এ আরিফুল।
কাছে গিয়ে বাড়ির মালিক সামাদকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চার হিজরা আমার বাসায় ঢুকে দুই হাজার টাকা দাবি করে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে তাদের নাকি অনেক খরচ আছে। আমি তাদের ২০০ টাকা দিতে চাই তারা নিতে না চাইলে আমি তাদের চলে যেতে বলি। তখনি তারা আমাকে পরিবারের সামনে লাঞ্চিত করতে শুরু করে পরে প্রতিবেশীরা আমাকে উদ্ধার করেন।
তিনি বলেন, কয়েক মাস আগে আমার এক ছেলে জন্মগ্রহণ করার পর আমার বাসায় এ হিজরারা ৭ হাজার টাকা দাবি করে আমি তাদেরকে ৩ হাজার টাকা দিয়ে ম্যানেজ করি। এরা শুধু আমার বাসয় নয় এই মহল্লার প্রায় সব বাসায় বিভিন্ন অজুহাতে চাঁদা আদায় করে।
হিজরাদের কাছে বিষটি জানতে চাইলে, তারা বলে তুই কে? পহেলা বৈশাখে আমাদের অনেক খরচ আছে টাকা উঠাইতে আসছি। সাহেবের কাছ থেকে টাকা নিব।ওনার টাকা কি তুই দিবি। পুলিশ ঢাকার কথা বললে হিজড়ারা বলে পুলিশ ডেকে কোন লাভ হবে নাঅ। আমাদের টাকা দরকার কাল আবার আসব।
এছাড়ও সংসদ ভবন আর পরিকল্পনা মন্ত্রণালযের মাঝখানে রাস্তায় প্রায় দিনই এ ধরণের ঘটনা দেখা যায়। কিছুদিন আগেও দুই জন হিজড়া এক যুবককে রিকসা থেকে টেনে-হিচড়ে নামাচ্ছে আর বলছে, ছেলেটি নাকি তাদের কাপড় খুলতে বলেছে এবং কু-প্রস্তাব দিয়েছে। ঘটনাটি দেখে আমি কাছে গেলাম ।
তারা কি করণে ছেলেটিকে লাঞ্চিত করছে? জানতে চাইলে, উত্তরে তারা পাল্টা প্রশ্ন করলেন, আপনি কে? অমাদের কাজ আমাদের করতে দেন।আপনি যে কাজে যাচ্ছেন সে কাজে যান। ঝামেলা করবেন না। কাছেই থাকা এক পুলিশকে সাংবাদ কর্মী বলে পরিচয় দিয়ে বলি হিজড়ারা এ রকম কাজ করছে আপনি কিছু বলছেন না? উত্তরে পুলিশ বলেন আমরা কি বলব? আপনারা পত্রিকায় লিখে দিন এদের বিরুদ্ধে।
পুলিশের সাথে কথা শেষ করে এগিয়ে যেতেই হিজড়ারা আমাকে বলল, ‘কিরে তর পুলিশ বাপ কিছু করতে পারল, কিছুই করতে পারবে না। প্রতিদিন পুলিশের পিছনে আমাদের খরচ আছে।’
পরে লাঞ্চিত ঐ ছেলেটির কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বাসা কাজীপাড়া, ফার্মগেটে আমার অফিস। গাড়ি না পেলে অনেক সময় রিকসায় যেতে হয়। এই পথে বেশ কয়েক দিন আমাকে হিজড়ারা আটকিয়ে টাকা নিয়েছে। আমি প্রতিদিন কি তাদের টাকা দিব, আপনিই বলেন? আজকে দিতে চাইনি তাই আমাকে লাঞ্চিত করেছে। এখন দেখছি এই পথে আর চলাচল করতে পারব না।
রাস্তার পাশে ফুটপাতের দোকানদার জহির বলেন, এখানকার হিজড়ারা সিগনালে দাঁড়িয়ে থাকা পথচারীদের কাছ থেকে প্রতিদিন চাঁদা আদায় করে। কোন পথচারী চাঁদা না দিলে জনসমুখে পথচারীকে লাঞ্চিত করা হয়। অনেক সময় পথচারীর কাপড়ও খুলে নেয় হিজড়ারা।
এ চিত্র শুধু সংসদ ভবন এলাকায় নয়। সারাদেশের সাধারণ মানুষ হিজড়াদের চাঁদাবাজির কারণে অতিষ্ঠ। আর হিজড়াদের সহযোগিতা করার অভিযোগ রয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধে। প্রতিদিন হাজারো মানুষ এদের হাতে হচ্ছেন লাঞ্চিত হয়।
এ বিষয়ে দিনের আলো হিজড়া উন্নয়ন মহিলা সংস্থার সভাপতি মায়া খান, বলেন, প্রকৃত হিজড়ারা কখনও জোর করে টাকা নিবে না। আমরা কোথও কাজ পাইনা তাই চেয়ে খাই, কিন্তু জোর করে টাকা উঠাই না এবং কাউকে লাঞ্চিতও করি না।
তিনি আরও বলেন, যারা অসৎ উদ্দেশ্যে আসল পরিচয় গোপন করে হিজড়া সেজে বিভিন্নভাবে চাঁদাবাজি করছে, তারাই এসব কাজ করে। তারা হিজড়া পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষকে অর্থনৈতিক, মানসিক ও সামাজিকভাবে হয়রানি, ভয়-ভীতি দেখিয়ে জোর পূর্বক সাধ্যের অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে। বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির নিকট থেকে টাকা আদায় করছে তারা।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
উত্তর প্রদেশে মাদ্রাসা চালু রাখতে বাধা কেটে গেল
ভারতের উত্তর প্রদেশে ২০০৪ সালে তৎকালীন রাজ্য সরকারের তৈরি মাদ্রাসাবিস্তারিত পড়ুন
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশে মাজারে হামলা, দানবাক্স উধাও
ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশের হয়রত হাজী খাজা শাহবাজ (রাহ:) এরবিস্তারিত পড়ুন
সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ৯ নির্দেশনা
রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর সরকারি কর্মচারীদের বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে সতর্কবিস্তারিত পড়ুন