প্রাইভেট না পড়ায় দিনমজুরের ছেলের ওপর নিষ্ঠুরতা!
লালমনিরহাট পাটগ্রামে প্রাইভেট না পড়ার জের ধরে এক এইচএসসি পরীক্ষার্থীর ওপর অমানুষিক নির্যাতন করেছেন এক শিক্ষক।
নির্যাতিত মামুন হাতীবান্ধা উপজেলার নিজ শেখ সুন্দর গ্রামের মজিবর রহমানের ছেলে। তার বাবা দিনমজুর।
শনিবার দুপুরে আহত ওই শিক্ষার্থীকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নির্যাতনকারী শিক্ষকের নাম ফরিদুল ইসলাম। তিনি বাউড়া পুনমচাঁদ ভুতরিয়া কলেজের পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ের প্রভাষক।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বুধবার আবদুল্লাহ ইবনে মামুন নামে ওই শিক্ষার্থীকে আহত অবস্থায় পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
সেখানে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
এদিকে দিনমজুর পরিবারের পক্ষে মামুনের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে আহত মামুন সুস্থ হয়ে আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন কিনা- তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
এদিকে শিক্ষার্থীকে পেটানোর ঘটনায় ফরিদুল ইসলাম নামের ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। সাত দিনের মধ্যে তাদেরকে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে জমা দিতে বলা হয়েছে।
পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, বুধবার শিক্ষার্থী মামুন আহত অবস্থায় হাসপাতালে আসে। এসময় তার একটি কান ও নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ হতে দেখা যায়। তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
শুক্রবার সন্ধ্যায় পাটগ্রাম হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, কান আর মাথার প্রচণ্ড ব্যাথায় কাতরাচ্ছে শিক্ষার্থী মামুন।
আহত মামুন জানায়, পদার্থ বিজ্ঞানের প্রভাষক ফরিদুল ইসলামের কাছে ওই বিষয়ে কলেজের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী প্রাইভেট পড়ে। এতে মামুনকেও প্রাইভেট পড়ার জন্য বেশ কয়েক দিন চাপ দেয়া হয়। কিন্তু মামুনের বাবা দিনমজুর হওয়ায় প্রাইভেট পড়া সামর্থ হয়নি তার।
মামুন জানায়, এতে তার ওপর রাগ ছিল ওই শিক্ষকের। গত বুধবার মামুন শরীরে জ্বর নিয়েই কলেজের সব শিক্ষার্থীর জন্য আয়োজিত বিশেষ কোচিংয়ে অংশ নিতে যায়। কিন্তু দুটি বিষয়ে টানা ক্লাস করার পর তার জ্বর বেড়ে গেলে কলেজের মাঠে রোদের মধ্যে গিয়ে দাঁড়ায়।
এসময় শিক্ষক ফরিদুল ইসলাম পিয়ন দিয়ে তাকে ডেকে এনে প্রথম মাথার চুল ধরে সজোরে ঘুষি মারেন। এতে করে মটিতে লুটিয়ে পরে। পরে তাকে আবার চুল ধরে মাটি থেকে তুলে উপর্যুপরি চর-থাপ্পর ও কিলঘুষি দেন।
মামুনের ডান কান ও নাক দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে। এই অবস্থায় অন্যান্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এগিয়ে এসে মামুনকে উদ্ধার করে পাটগ্রাম হাসপাতালে ভর্তি করেন।
চিকিৎসাধীন মামুন আক্ষেপের সুরে বলে, ‘আমার বাবা দিনমজুর। বর্তমানে তিনি অসুস্থ থাকায় এখন আর কাজকর্ম করতে পারেন না। তাই আমি স্কুলের ছেলেমেয়েদের প্রাইভেট পড়িয়ে নিজের পড়ালেখাসহ সংসারের খরচ যোগাই। আমার পক্ষে স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়া সম্ভব না।’
মামুন আরো জানায়, কলেজে এইচএসসি বিভাগের প্রি-টেস্ট পরীক্ষায় সব বিষয়ে পাশ করি। কিন্তু টেস্ট পরীক্ষাতেও সব বিষয়ে পাশ করলেও প্রাইভেট না পড়ার কারণে ওই শিক্ষক (ফরিদুল) পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ে মাত্র ৪ নম্বর দিয়ে ফেল করিয়ে দেয়।
বিষয়টি কলেজ কর্তৃপক্ষ বুঝতে পেরে পরে এইচএসসি পরীক্ষায় ফরম-ফিলাপ করার সুযোগ দেয়।
মামুনের মা আসমা বেগম বলেন, ‘ডাক্তার ছেলেকে রংপুর নিয়ে যেতে বলেছে। আমরা গরিব মানুষ, তাই তিন বেলা ঠিকমত ভাত জোগাতে পারি না। সেখানে রংপুর নিয়ে গিয়ে চিকিৎসার খরচ পাবো কোথায়?’
তিনি বলেন, পরীক্ষার আগে আমার ছেলে যদি সুস্থ না হয়, তাহলে তার লেখাপড়া করার এতদিনের স্বপ্ন ধুলোয় মিশে যাবে!’
এ ঘটনায় তিনি অভিযুক্ত শিক্ষক ফরিদুল ইসলামের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবি করেন।
একই দাবি আহতের চাচা জয়নাল আবেদিনের। তিনি বলেন, ‘মামুনের বাবা খুবই গরিব ও অসুস্থ। এরপরেও আমরা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অনেক কষ্টে কিছু টাকা জোগার করে শনিবার দুপুরে আহত মামুনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করি।’
ঘটনা সম্পর্কে জানতে অভিযুক্ত শিক্ষক ফরিদুল ইসলামের মুঠোফোনে গত দুদিন ধরে কল দেয়া হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। পরে শনিবার দুপুরে তার কলেজে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি বিশেষ কাজে কলেজের বাইরে গেছেন।
তবে বাউড়া পূনমচাঁদ ভুতরিয়া কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বিশ্বনাথ রায় বলেন, ‘ফরিদুল সাহেব ছাত্রছাত্রীদের প্রাইভেট পড়ান ঠিকই। কিন্তু ওই কারণে তিনি মামুনকে পিটিয়েছে কিনা? তা আমার জানা নেই।’
ঘটনাটি নিয়ে কলেজের ৩ শিক্ষকের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ৭ দিনের মধ্যে তারা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান অধ্যক্ষ বিশ্বনাথ রায়।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের রেল যোগাযোগ শুরু
লালমনিরহাট থেকে বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেনের লাইনচ্যুত হওয়া ৩টি বগি উদ্ধারবিস্তারিত পড়ুন
পাটগ্রাম সীমান্তে ভারতীয় নাগরিক আটক
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশে অণুপ্রবেশের দায়ে ভারতীয় নাগরিকবিস্তারিত পড়ুন
ভিক্ষুক মুক্ত হচ্ছে লালমনিরহাট জেলা
মানুষের দ্বারে দ্বারে আর ভিক্ষাবৃত্তি নয়। সরকারই নিচ্ছে ভিক্ষুকের দায়।বিস্তারিত পড়ুন