প্রার্থী বাছাইয়ে আ.লীগ তৃণমূলের নানা অভিযোগ
দলীয় প্রতীকে এবারই প্রথম ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন হচ্ছে। এ নির্বাচনে প্রথম দফায় অনুষ্ঠেয় ৭৩৯ ইউপির মধ্যে ৫০৩ টির (এ রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়া পর্যন্ত সবকটির চূড়ান্ত) দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তবে দলের মনোনয়ন নিয়ে মন্ত্রী-এমপি, সংসদ সদস্য ও জেলার প্রভাবশালী নেতাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তৃণমূল নেতাদের।
তৃণমূলের নেতারা দাবী করছেন অর্থের বিনিময়ে বিএনপি নেতা, রাজাকারের সন্তান, ইয়াবা ব্যবসায়ী, হত্যা মামলার আসামিদের প্রার্থী করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এমন শতাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে।
তৃণমূল থেকে আসা অভিযোগগুলো বিশ্লেষণ করছেন দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য এসএম কামাল হোসেন ও আমিনুল ইসলাম আমিন। খুব শিগগিরই আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে উত্থাপন করা হবে এসব অভিযোগ।
তৃণমূল থেকে একক প্রার্থীর নাম পাঠানোর জন্য দলের জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের নির্দেশনা দেয় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। ১৬ ফেব্রুয়ারি মধ্যে তৃণমূলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা চেয়ারম্যান প্রার্থীদের তালিকা কেন্দ্রে পাঠান।
পটুয়াখলি জেলার সদর উপজেলাধীন মরিচবুনিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. দেলোয়ার হোসেন মৃধা, সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুল ওহাব মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক মো. জালাল উদ্দিন হাওলাদার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এসে লিখিত অভিযোগ করেন যে, মরিচবুনিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়ায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ সকল ইউনিয়ন কমিটিকে বাদ দিয়ে একজনের নাম তৃণমূলের মনোনয়ন বোর্ড কেন্দ্রে পাঠিয়েছে। তাদের অভিযোগ মাদারবুনিয়া ইউনিয়নে বিএনপির জেলা শাখার সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদককে ( বর্তমানে আওয়ামী লীগে যোগদানকারী) প্রার্থী হিসাবে নাম প্রস্তাব করা হয়েছে।
পটুয়াখালীর মাদারবুনিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি লতিফ সিকদার অভিযোগপত্রে বলেছেন, ইমরান আহমেদ জুয়েলকে মনোনয়ন বঞ্চিত করার জন্য জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট শাহজাহান মিয়ার নির্দেশে কোনো কারণ ছাড়াই ইউনিয়ন কমিটি ভেঙে আহ্বায়ক কমিটি গঠন এবং ওই কমিটির মাধ্যমে জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মতিউর রহমানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এ জেলার স্থানীয় উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের রাঙ্গাবালি ইউনিয়নে সাইদুজ্জামান মামুনকে মনোনয়ন দিলেও জেলা নেতারা তা মানছেন না বলে অভিযোগ এসেছে। বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের রামচন্দ্রপুর ইউনিয়ন থেকেও অনিয়মের অভিযোগ পাঠানো হয়েছে।
কক্সবাজারের মহেষখালীর ধলঘাটা ইউনিয়নে মনোনয়নের বেলায় উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটির সিদ্ধান্ত অগ্রাহ্য করে স্থানীয় এমপি তার পছন্দের ব্যক্তির নাম পাঠিয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
কক্সবাজার থেকে আসা অভিযোগে বলা হয়েছে, জেলা নেতারা বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন থেকে আসা প্রার্থী তালিকায় রদবদল করেছেন।
সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার ধলবাড়িয়া ইউনিয়নে রাজাকারের সন্তান গাজী শওকত হোসেকে একক প্রার্থী হিসাবে নাম প্রস্তাব অভিযোগ করা হয়েছে। তৃণমূলের আট জন নেতা লিখিত এ অভিযোগ করেন।
অভিযোগকারীরা বলেন, ১৯৭১ সালের গাজী শওকত হোসেনের বাবা রাজাকার থাকাকালে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের বাড়িতে ডিনামাইটের বিস্ফোরণ ঘটায়।
দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-বিবাদের কারণে পটুয়াখালীর দশমিনার বর্তমান চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ লিটন দলের মনোনয়নই চাইতে পারেননি। তাকে স্থানীয়ভাবে তৈরি করা নির্ধারিত ফরম পূরণের সুযোগ দেওয়া হয়নি। তিনি সম্প্রতি নিজে এসে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে অভিযোগপত্র দিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনেক ইউপিতে দল থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী একাধিক ছিল। তাই তৃণমূল নেতারা চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী বাছাইয়ে রীতিমতো হিমশিম খান। এতে করে বেশিরভাগ ইউনিয়নেই যোগ্য প্রার্থী বাছাইয়ে বড় ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হয়। প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় না রাখার পরও স্থানীয় এমপিদের অনেকেই বিপত্তি বাড়িয়েছেন। তারা নিজেদের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়ে মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অনেক ইউপিতে এমপিদের পছন্দের প্রার্থীর নাম কেন্দ্রে পাঠাতে বাধ্য হয় তৃণমূল।
এদিকে বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানানো হয় ইউপি নির্বাচনের ৭৩৯টির মধ্যে ৫০৩টির দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত হয়েছে এবং তাদের নাম ঘোষণা করেন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। সাংবাদিকরা এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের তৃণমূল থেকে প্রার্থীর নামের তালিকা এসেছে। সেখানে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা আ.লীগের ত্যাগী নেতাদের বাচাই করে পাঠিয়েছেন। আমরা আস্থার সাথে বলতে পারি প্রার্থী বাচাইয়ের ক্ষেত্রে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করেছি। সেখানে যার বিরুদ্ধে হত্যা মামলার অভিযোগ ছিল তাকে বিবেচনায় আনি নাই। এছাড়াও অন্যকোন রাজনৈতিক দল থেকে আসা কাউকে মনোনয়ন দেয়ার প্রশ্নই উঠে না। কারণ আ.লীগের প্রতিটি স্তরে একাধিক যোগ্য নেতা আছেন যারা যে কোন সময় নির্বাচন করার মত ক্ষমতা রাখেন।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ফের ২ দিন রিমান্ডে আনিসুল হক
রাজধানীর বাড্ডা থানার স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা আল-আমিন হত্যা মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন
আমির খসরু: নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “গণতন্ত্রেরবিস্তারিত পড়ুন
জামিন পেলেন সাবেক বিচারপতি মানিক
অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের সময় সিলেটের কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত এলাকা থেকেবিস্তারিত পড়ুন