সকালে গ্রামবাসীরা দেখতে পান, এই যুগলের বাড়ি থেকে ৪০০ মিটার দূরত্বে একটি গাছের একই ডালে একসঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলে রয়েছে তারা।

বাড়ি থেকে মেনে নিতে পারেনি ওদের ভালবাসা। অনেকবার চেষ্টা করা হয়েছিল দু’জনের মধ্যে দূরত্ব তৈরির, কিন্তু সম্ভব হয়নি। দুই বাড়ির লোকজন আর গ্রামবাসীরা সকলেই চাইছিল ওদের মধ্যে দুরত্ব। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সমস্ত দুরত্ব ঘুচিয়ে এই দুই প্রেমিক-প্রেমিকা একসঙ্গে আত্মহত্যার পথ বেছে নিল। এদিন সকালে গ্রামবাসীরা দেখতে পান, এই যুগলের বাড়ি থেকে ৪০০ মিটার দূরত্বে একটি গাছের একই ডালে একসঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলে রয়েছে তারা।

ঘটনাটি ঘটেছে মালদহ জেলার গাজোল থানার চাকনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের কদুবাড়ি এলাকায়। মৃত দুই প্রেমিক ও প্রেমিকার নাম অশোক ওঁরাও ও ডলি হেমব্রম। জানা গিয়েছে, অশোক ওঁরাও এক দিনমজুর। সে ভিন রাজ্যে কাজ করে। বাবা মারা গিয়েছেন বেশ কয়েক বছর আগে। তারা তিন ভাই। অন্যদিকে, ডলি হেমব্রমের বাবা পরেশ হেমব্রম কৃষিজীবি। এক ভাই এক বোন। এবারই মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে। সে ডোবা খোকসান হাইস্কুলের ছাত্রী। দু’জনের বাড়ি পাশাপাশি। ফলে কয়েক বছর ধরে তাদের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হয়।

কিছুদিনের মধ্যে তাঁদের এই সম্পর্ক জানাজানি হতেই বাধা দেন মেয়ের বাবা পরেশ হেমব্রম। পরেশবাবুর অবস্থা একটু হলেও ভাল, তাই দিনমজুর অশোকের সঙ্গে তাঁর মেয়ের বিয়ে দিতে রাজী হননি। তাই এক মাস আগে অশোক ও ডলি পালিয়েও যায়। সেই সময়ে গাজোল থানায় অশোকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন মেয়ের বাবা। পুলিশ কয়েকদিন পর ধরে নিয়ে আসে তাদের। মেয়েকে তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দেয়। অন্যদিকে, গ্রামবাসীরা অশোককে বুঝিয়ে নিয়ে যায় গ্রামে।

এদিকে এ বিষয়ে গ্রামেও একটি সালিশি সভা হয়। সেখানে গ্রামের সকলে মিলে সালিশিতে সিদ্ধান্ত নেয়, অশোক ও ডলির মেলামেশা বন্ধ থাকবে। যাতে ডলি পরবর্তীতে আবার পালিয়ে না যায়, সেইজন্য তাকে মামার বাড়িতে পাঠিয়েও দেওয়া হয়। কিন্তু কয়েকদিন মামার বাড়িতে থাকার পরে হঠাৎই দিন তিনেক আগে ডলি মামার বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। তার পর থেকে ডলির খোঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না ঠিকই, কিন্তু অশোক বহাল তবিয়তে নিজের বাড়িতেই ছিল। গ্রামবাসীরা মনে করছেন, সকলের মনে যাতে সন্দেহ না হয় তাই তারা লুকিয়ে মিলিত হয়েছিল এবং ডলিকে কোথাও লুকিয়েও রেখেছিল।

কিন্তু এদিন সকালে একসঙ্গে, একই গাছে, একই ডালে দু’জনের ঝুলন্ত দেহ দেখে সকলেই অবাক হয়ে যায়।