পড়াশোনা হলো না শাহানারার
মা-বাবা বিয়ে ঠিক করেছিলেন মালয়েশিয়া প্রবাসী এক যুবকের সঙ্গে। আবার পাড়ার এক কিশোরও তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিল। এখনই জীবনের এসব অধ্যায়ে না গিয়ে পাঠ্যবইয়ে মুখ গুঁজে থাকতে চেয়েছিল শাহানারা খাতুন। কিন্তু পড়াশোনাকে ছেড়ে শাহানারা চলে গেছে না ফেরার দেশে।
গত শুক্রবার মারা যায় শাহানারা। কীটনাশক পানে শাহানারার মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ধুলিহর ইউনিয়নের দরবাস্তিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। শাহানারা ধুলিহর বালিকা বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের চিকিৎসকদের দেওয়া প্রতিবেদনে জানা গেছে, শাহানারা কীটনাশক পানে মারা গেছে। পরিবারের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ দাবি করেছে, শাহানারা আত্মহত্যা করেছে। ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করা হয় শাহানারার লাশ।
আজ সোমবার শাহানারাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে এখনো নীরব, নিস্তব্ধ হয়ে আছে তাঁদের বাড়ি। শোকে পাথর হয়ে আছে শাহানারার স্বজনরা।
শাহানারার মা হাফিজা খাতুন বলেন, ‘আগে কিছুই বুঝতে পারিনি। সকালে এক সঙ্গে বসে ভাত খেয়েছি। খাবার পর এক বালতি কাপড় পরিষ্কার করেছে শাহানারা। এরপর কখন যে বিষ খেয়েছে জানি না। বিষ খাওয়ার পর বমি করল। পানি খেল। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তার বলল শাহানারা মারা গেছে।’ তিনি বলেন, ‘শাহানারা এখনই বিয়ে করতে চাইত না।’
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছে, মালয়েশিয়া প্রবাসী ছেলেকে বিয়ের জন্য চাপ দিয়েছিলেন শাহানারার মা-বাবা। শাহানারা এতে রাজি হয়নি। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে ঝগড়াও হয় শাহানারার।
শাহানারার বাবা শাহজাহান সরদার বলেন, ‘ঘরে বিষ থাকে না। শাহানারা কীভাবে বিষাক্ত ওষুধ পেল তা আমি জানি না।’ শাহানারার বড় ভাই হাফিজুল ইসলাম জানিয়েছেন, কীভাবে শাহানার কাছে ওষুধ গেল তাই খুঁজে দেখা হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, শাহানারাদের প্রতিবেশী দশানন মণ্ডল শাহানারাকে পছন্দ করত। দশানন স্থানীয় একটি স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র। দশানন শাহানারার ছবি তুলে বিকৃত করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল। শাহানারার বাবা শাহজাহান সরদার তাদের বাড়িতে গিয়ে মোবাইল ফোন থেকে মেয়ের ছবি তুলে দেওয়ার অনুরোধ জানালেও দশানন তাতে কান দেয়নি।
এদিকে শাহানারার মৃত্যুর পর থেকেই বাড়িতে পাওয়া যাচ্ছে না দশাননকে। আজ সোমবার শাহানারার ভাই হাফিজুল ইসলাম বাদী হয়ে সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদ শেখ জানান, এ মামলায় আসামি হিসেবে নির্দিষ্ট কারো নাম দেওয়া হয়নি।
এ ব্যাপারে ব্রহ্মরাজপুর পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক অচিন্ত্য কুমার অধিকারী বলেন, ‘মা-বাবার ওপর অভিমান করে আত্মহত্যা করেছে শাহানারা। খবর পেয়ে হাসপাতালে এসে দেখি সে মারা গেছে। পরিবারের দাবি অনুযায়ী আইন লঙ্ঘন না করে ময়নাতদন্ত ছাড়াই শাহানারাকে দাফন করার অনুমতি দেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে অধিক তদন্ত চলছে।’
ধুলিহর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য শামীম রেজা চৌধুরী বলেন, ‘খবর পেয়ে আমি ওদের বাড়িতে যাই। পরে হাসপাতালে যাই। ওর বাবা ও মায়ের অনুরোধে ময়নাতদন্ত না করেই লাশ দাফনের ব্যবস্থা করা হয়।’
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
সাতক্ষীরা জেলায় আম সংগ্রহ উদ্বোধন
আমের গুণগত মান বজায় রেখে নিরাপদে আম বাজারজাত করতে সাতক্ষীরাবিস্তারিত পড়ুন
সুন্দরবনে আগুন নেভানোর কাজ শুরু
ফায়ার সার্ভিস, বনবিভাগ ও গ্রামবাসী একত্রে পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জেরবিস্তারিত পড়ুন
কোটি টাকার স্বর্ণসহ ইউপি মেম্বার গ্রেপ্তার
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বৈকারী সীমান্ত থেকে ৯ পিছ স্বর্ণের বারসহবিস্তারিত পড়ুন