ফরহাদ মজহারের অপহরণের ঘটনা ‘সাজানো নাটক’, তদন্তে বেরিয়ে এলো চমকে দেয়ার মতই তথ্য!
কবি-প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহার অপহরণ রহস্যের জট খুলতে শুরু করেছে। দু-একদিনের মধ্যে সব রহস্যের সমাধান হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ। তবে এর আগে রহস্য ছিল কার ফোন পেয়ে বাসা থেকে ওই দিন বের হয়েছিলেন তিনি?
সম্প্রতি আইন শৃঙ্খলা বাহিনী অবশেষে নিশ্চিত হয়েছে একজন নারীর ফোন পেয়েই তিনি বের হন। ওই নারী ফরহাদ মজহারের পূর্বপরিচিত। অর্চনা রানী (২৮) নামে ওই নারীর ফোনের পরই বাসা থেকে বের হয়েছিলেন ফরহাদ মজহার।
ওই নারীর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই সম্পর্ক বজায় রাখছিলেন তিনি। নিখোঁজ হওয়ার আগে এবং নিখোঁজ থাকা সময়টাতে ওই নারীর সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছেন ফরহাদ মজহার। তাকে ‘গুরুবাবা’ সম্বোধন করতেন অর্চনা। অর্চনা রানী গত সোমবার এ বিষয়ে মহানগর হাকিম সত্যব্রত শিকদারের আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
এদিকে ফরহাদ মজহার তার বান্ধবীর সঙ্গে ঘটনার আগে-পরে মোবাইল ফোনে যে ধরনের কথা বলেছেন, কথোপকথনের রের্কডও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সংগ্রহ করেছে। উভয়ের মোবাইল থেকে যে ম্যাসেজ আদান-প্রদান করেছেন এ রের্কডও রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে।
৩ জুলাই ভোরে তিনি মোহাম্মদপুর স্যার সৈয়দ রোডের বাসা থেকে বের হন। এরপর নিখোঁজ হন। তার পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয় তাকে অপহরণ করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। তার পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবি করে।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও পুলিশ সদর দফতরের সমন্বয়ে ফরহাদ মজহারের কথিত অপহরণের ঘটনার তদন্ত শুরু হয়। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় এ তদন্তে। তদন্তে শনাক্ত করার হয় এক নারীর মোবাইল ফোন। এ ফোনের সঙ্গে ফরহাদ মজহারের হয়েছে কথা বার্তা। এ মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে তদন্তকারী কর্মকর্তারা অর্চনা রানী নামের ওই নারীর খোঁজ পান ।
ঐ নারী হলেন ফরহাদ মজাহারের “উবিনীগ” নামের এনজিও’র সাবেক কর্মী। তিনি সহজ সরল এক নারী। বাঁচার তাগিদে অনেক কাঠখড় পুড়িয়েছেন। ২০০৫ সালে উবিনীগ নামক এনজিওতে চাকরি নেন তিনি। অর্চনা রানী ভাবছেন এই বুঝি তার এক ঠাঁই হলো। কিন্তু কাজের ফাঁকে ফরহাদ মজহারের সঙ্গে তার হয়ে উঠে ঘনিষ্টতা। প্রথম লালন ফকিরের আদর্শে ফরহাদ মজহারকে গুরু মেনে ফকিরী বায়াত নেন। এর থেকে শুরু হয় তাদের ঘনিষ্ঠতা। পরবর্তীতে মন দেওয়া নেওয়া এবং দৈহিক সম্পর্ক।
তদন্ত কর্মকর্তাদের বলেন, তিনি ফরহাদ মজহারকে মনপ্রাণে ভালবাসেন ও ভক্তি করেন। প্রায়ই অর্চনা রানীর বাসায় যাতায়াত এবং দৈহিক মেলামেশা করতেন ফরহাদ মজহার। ফরহাদ মজহার তাকে আর্থিক সহযোগিতা করতেন। বাড়ি ভাড়া থেকে শুরু করে সংসারের অন্যান্য খরচ দিতেন তিনি। ২০০৭ সালে অর্চনা রানী অন্তঃসত্তা হয়ে পড়েন। ওই সময় তার অবৈধ গর্ভপাত ঘটনানো হয়। ঐ গর্ভপাত ঘটাতে গিয়ে ঐ সময় অর্চনা রানী শারীরিক ক্ষতিগ্রস্ত হন। সুস্থ হয়ে উঠতে তার অনেক সময় লাগে। ঐ সব ঘটনা ফরহাদ মজহারের পরিবারে জানাজানি হলে অর্চনা রানী উবিনীগ থেকে চাকরি হারান।
তিনি চাকরি হারালেও ফরহাদ মজহারের আর্থিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকায় অর্চনা রানীর কোন সমস্যা হয়নি। সর্বশেষ তিনি আবার ৪ মাসের অন্তঃসত্তা হয়ে পড়েন। তিনি ফরহাদ মজহারকে বলেন, আপনার সম্পর্ক এখন আমার পেটে। ফরহাদ মজহার অর্চনা রানীকে আশস্ত করেন যে, এবার তোমাকে ভাল ডাক্তার দেখানো হবে। আগের মত তোমার শারীরিক ক্ষতি যাতে না হয়। সে বিষয়টি ফরহাদ মজহার গুরুত্ব সহকারে দেখছেন। ইতিমধ্যে অর্চনা রানীর বাবা অসুস্থ হয়েছেন। বাবার চিকিত্সার জন্য অর্চনা রানীর দরকার অনেক টাকা। ফরহাদ মজাহারের কাছে সেই পরিমাণ অর্থ নেই। অবশেষে অর্থের নেপথ্যে ফরহাদ মজহারের অপহরণের নাটক। এ নাটক ছিল তার পরিবারের কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা আদায় করা।
অর্চনা রানীর দেওয়া তথ্য, কথপোকথন রেকর্ড ও বিভিন্ন তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত হন যে ফরহাদ মজহারের অপহরণের ঘটনা “সাজানো নাটক।” ঘটনার দিন সকাল ১১টার দিকে ফরহাদ মজহার স্ত্রীকে ফোন করে বলেন, ৩০ লাখ টাকা তোমার কাছে রেখে দিও এবং তোমার কাছে ঐ টাকা চাইলে বলবে ডেলিভার হয়ে গেছে। ফিরে এসে বাকিটা দেখব। খুলনা গিয়ে তিনি নিউমার্কেটে (খুলনা) গেছেন ও বের হয়েছেন।
ঐ দিন সন্ধ্যায় খুলনা থেকে অর্চনা রানীকে তার দুইটি নম্বরের প্রথম দফা ১৩ হাজার টাকা ও দ্বিতীয় দফায় দুই হাজার টাকা পাঠিয়েছেন ফরহাদ মজহার। সময় সন্ধ্যা ৭টা ১৮ মিনিট ও সন্ধ্যা সাতটা ১৯ মিনিট। বাসের টিকেট নিজে ক্রয় করেছেন। তারও প্রমাণ তদন্তকারী কর্তৃপক্ষের হাতে। তার কথিত অপহরণের সময় মাইক্রোবাসের কথা বলা হলেও গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ঐ মাইক্রোবাসের কোন হদিস পাননি গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
এর আগে ফরহাদ মজহার পুলিশের কাছে ১৬১ ধারা ও আদালতে ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে বলেন, চোখের ওষুধ কিনতে গত সোমবার ভোরে রাজধানীর শ্যামলীর রিং রোডের বাসা থেকে তিনি বের হন। এরপর শ্যামলীর কাছ থেকে তিনজন অপরিচিত লোক জোর করে তাকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। তার চোখ বেঁধে গাড়ির সিটে বসানো হয়। তিনি নিজেই অপহরণকারীদের টাকা দিয়ে মুক্তি পেতে চান।
এর কিছুক্ষণ পরই তিনি স্ত্রীর মোবাইলে ফোন দিয়ে নিজের অপহরণ হওয়ার কথা জানান। তাকে মেরে ফেলা হবে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন। পরে তিনি কয়েক দফায় ফোন দিয়ে মুক্তি পেতে ৩৫ লাখ টাকা দেওয়ার কথা বলেন।
হানিফ কাউন্টারের ম্যানেজার ঢাকায় এসে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে বলেন, ‘গফুর’ পরিচয়ে এক ব্যক্তি বাসের টিকিট কাটেন। পরে টেলিভিশন দেখে জানতে পারেন, ওই গফুরই ফরহাদ মজহার।
পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, বাসা থেকে বের হবার সময় তার সঙ্গে থাকা ব্যাগে মোবাইল ফোনের চার্জার, একটি পোশাক ছিল। বাসা থেকে বের হবার সময় তার কাছে সাড়ে ১২ হাজার টাকা ছিল। এ থেকে অনুমান করা যায় তার বাসা থেকে বের হওয়ার পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে। সেটাই এখন পরিস্কার হতে চলেছে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
জাবি ছাত্রদলের পুনর্মিলনীতে দুই গ্রুপের বাগ্বিতণ্ডা, ককটেল উদ্ধার
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ছাত্রদলের সাবেক-বর্তমান নেতাকর্মীদের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে দুই গ্রুপেরবিস্তারিত পড়ুন
ফখরুল: ফ্যাসিবাদের ফেরার সম্ভাবনা বাড়ছে
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ফ্যাসিবাদ পরাজিত হলেওবিস্তারিত পড়ুন
বিচারপতিকে ডিম ছোড়ার ঘটনায় প্রধান বিচারপতির উদ্বেগ
হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালকে আদালত কক্ষে ডিম ছোঁড়ারবিস্তারিত পড়ুন