ফার্মেসির আড়ালে চলছে মাদক ব্যবসা
মাদকের ভয়াল থাবায় ধ্বংস হচ্ছে দেশ। শিশু কিশোর থেকে সব বয়সীরাই এখন আসক্ত হচ্ছে মাদকের নেশায়। পুরুষের পাশাপাশি এ নেশায় যুক্ত হয়েছে নারীরাও। অনেকের কাছেই এখন পার্টি মানেই সেখানে মাদক থাকা চাই। বিভিন্ন ক্লাবে চলছে মাদকের পার্টি। রাত হলেই রাজধানীর বিভিন্ন হোটেল ও রেস্টুরেন্টে জমে উঠছে এসব পার্টি। আর এসব পার্টির আড়ালে চলছে মাদক গ্রহণ।
হোটেল ও রেস্টুরেন্ট ছাড়াও এখন খোলামেলা জায়গায় বসে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে মাদকাসক্তরা। হাতের নাগালে মাদক চলে আসায় সেবনকারীর সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। রাস্তাঘাটে, উন্মুক্তস্থানে, পার্কে এখন গাঁজার গন্ধে চলাফেরা করা দায় হয়ে পড়েছে। সিগারেটের মতো এখন গাঁজা সেবন শুরু করেছে সেবনকারীরা। রিকশাচালক, সিএনজি অটোরিকশা চালক এমনকি পেশাজীবীরাও রয়েছেন মাদকসেবীদের তালিকায়। তারা নির্দ্বিধায় সড়কের পাশে উন্মুক্ত স্থানে, পার্কে মাদক নিচ্ছে। এ সমস্ত জায়গা দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে সাধারণ পথচারীদের পড়তে হয় বিপাকে। সন্তানদের নিয়ে স্কুলে যাওয়ার সময় এসব জায়গায় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে লোকজনকে।
রাতের আধার নেমে এলেই মাদকদ্রব্য বিক্রেতারা সেবনকারীদের চাহিদামতো মাদক চালান করছে। মাদক বিক্রেতারা এখন কখনও ভিক্ষুক, কখনও হকার আবার কখনও পাগল সেজে এমনকি বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় মাদকদ্রব্য সরবরাহ করছে। এছাড়া বিভিন্ন বৈধ ব্যবসার আড়ালে চালাচ্ছে এসব অবৈধ মাদক ব্যবসা। বিভিন্ন ফার্মেসিতে এখন মাদকদ্রব্য বিক্রির অভিযোগ পাওয়া যায়।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা যাতে সন্দেহ না করে, খুব সহজেই যাতে তাদের চোখ এড়িয়ে মাদক ব্যবসা চালানো যায় সেজন্য মাদক ব্যবসায়ীরা এখন ফার্মেসির আড়ালে চালাচ্ছে এসব মাদক ব্যবসা। ফার্মেসিতে ওষুধ রাখার পাশাপাশি মাদক সেবনকারীদের চাহিদা অনুযায়ী তারা মাদকদ্রব্য রাখছে। বিভিন্ন ফার্মেসিতে ফেন্সিডিল ও ইয়াবা রাখছে এসব ব্যবসায়ীরা।
মাদক ব্যবসা ছাড়াও ফার্মেসির আড়ালে চলছে অজ্ঞান পার্টির কাজ। মানুষকে অচেতন করার বিভিন্ন ধরণের ওষুধ বিক্রি হচ্ছে ফার্মেসিতে। এসব নিষিদ্ধ ওষুধ অবৈধভাবে দেশে এনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে ফার্মেসির আড়ালে বিক্রি করছে কিছু চক্র।
এদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও তৎপর হয়ে উঠেছে। তাদের নিয়মিত অভিযানে বিভিন্ন সময় মাদকদ্রব্য ধরা পড়ছে। সম্প্রতি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ফেনসিডিল, হেরোইন, গাজা ও ইয়াবা ট্যাবলেট এবং বিভন্ন মাদকদ্রব্য জব্দ করেছে পুলিশ-র্যাব-বিজিবি।
এরমধ্যে সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন জায়গায় গত আগস্ট মাসে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) অভিযানে উদ্ধার হওয়া মাদক দব্যের মধ্যে রয়েছে ৫ লাখ ৪৫ হাজার ৭৮২ টি ইয়াবা ট্যাবলেট, ৩৯ হাজার ২৮২ বোতল ফেন্সিডিল, ৭২২ কেজি গাঁজা, ২৫ হাজার ৪৫৬ বোতল বিদেশি মদ, ৩৭০ গ্রাম হেরোইন, ৮৩ হাজার ২৯২ পিস বিভিন্ন প্রকারের উত্তেজক ট্যাবলেট, ৫ হাজার ৭৫৫টি নেশা জাতীয় ইনজেকশন এবং ২৮ লাখ ১০ হাজার ৭১৮ পিস বিভিন্ন প্রকারের অবৈধ ট্যাবলেট। বিজিবি সদর দফতরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহম্মদ মোহসিন রেজা এ তথ্যটি নিশ্চিত করেন।
ডিবি দক্ষিণের সহকারী পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর চকবাজার এলাকায় এক হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ দুইজন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে মাদক ব্যবসার সঙ্গে ২-৩ বছর জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। তাদের সঙ্গে আরো ২-৩ জন জড়িত রয়েছে বলে তারা জানিয়েছে।
র্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান জানান, মাদক দ্রব্যের বিরুদ্ধে আমাদের নিয়মিত অভিযান চালু রয়েছে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন ধরনের মাদক দ্রব্য প্রায়ই উদ্ধার করছে র্যাব। দেশকে মাদকমুক্ত করতে এ ধরণের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
ডিবি দক্ষিণের উপকমিশনার (ডিসি) মাশরুকুর রহমান খালেদ জানান, ফার্মেসির অভ্যন্তরে ওষুধ বিক্রির সঙ্গে মাদক বিক্রি করে আসছে বলে স্বীকার করে গ্রেফতারকৃতরা। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া এখন মাদক ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন কৌশল নিচ্ছে, ফার্মেসির আড়ালে তারা মাদক ব্যবসা করছে। এ ধরনের ফার্মেসির আড়ালে মাদক বিক্রির বিষয়ে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
কোকেনের সবচেয়ে বড় চালানে জড়িতদের নাম পেয়েছে ডিএনসি
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর দেশে কোকেনের সবচেয়ে বড় চালান জব্দের ঘটনায়বিস্তারিত পড়ুন
শপথ করছি, মাদক ছোঁব না
মাইকে ঘোষণা হলো ‘এখন মাদকের বিরুদ্ধে আমরা শপথ নেবো’। শপথবিস্তারিত পড়ুন
ক্ষতি বছরে ১ লাখ কোটি ডলারঃ ধুমপানের পিছনে
ধুমপানে প্রতি বছর বিশ্ব অর্থনীতির ক্ষতি হয় এক ট্রিলিয়ন বাবিস্তারিত পড়ুন