বঙ্গবন্ধু-নজরুল একে অন্যের মন বুঝতে পেরেছেন: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবন্ধু বিপ্লবী নেতা ছিলেন। নজরুল ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের নেতা ছিলেন। তাঁরা একে অন্যের মনকে বুঝতে পেরেছেন।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৬ তম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে আজ সোমবার আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বিকেল চারটায় কুমিল্লা টাউন হল মাঠে ওই অনুষ্ঠান হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সাম্যের চেতনার বাংলাদেশ গড়তে হবে। নজরুলের অগ্নিঝরা কবিতা ও গান আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে ছিল অনন্ত প্রেরণার উৎস। জাতির পিতা বজ্রকণ্ঠ দিয়ে বাঙালি জাতির স্বাধীনতা এনেছেন। কবি নজরুলের লেখনী তাঁকে প্রেরণা দিয়েছে। জাতির পিতার আত্মজীবনীতে নজরুলের কথা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ২৪ মে নজরুলকে সপরিবারে বাংলাদেশে এনে নাগরিকত্ব প্রদান করেন। তিনিই তাঁকে জাতীয় কবির মর্যাদা দিয়েছেন। তাঁর পরিবারকে সপরিবারে এ দেশে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু বিপ্লবী নেতা ছিলেন। নজরুল ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের নেতা ছিলেন। তাঁরা একে অন্যের মনকে বুঝতে পেরেছেন। অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে কুমিল্লা নগরে সংস্কৃতিপ্রেমীদের ঢল নেমেছিল। নগর জুড়ে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে তোরণ, ফেস্টুন ও ব্যানার ছিল চোখে পড়ার মতো। জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কুমিল্লার সঙ্গে কবির অনেক স্মৃতি বিজড়িত। তাই আমরা এবার জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানের জন্য কুমিল্লাকে নির্বাচিত করেছি। আমাদের বাংলা সাহিত্যে কবি নজরুল এক নক্ষত্র। বিশ্বের অনেক ভাষার সঙ্গে তাঁর লেখনীর চমৎকার সম্মিলন তিনি ঘটিয়েছেন। কুমিল্লায় কবি দীর্ঘদিন অবস্থান করেছেন। এখন অতি সহজে কুমিল্লায় আসা-যাওয়া করা যায়। তখন কলকাতা থেকে কবি রেলগাড়ি, নৌকা ও কাদা মাটি মাড়িয়ে কুমিল্লায় এসেছেন। এই কুমিল্লাকে তিনি ভালোবেসেছেন। কবি নজরুল স্বাধীনচেতা ছিলেন। তিনি আমাদের সংস্কৃতি ও সংগীতকে সমৃদ্ধ করেছেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কুমিল্লায় কবি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন করেছেন। এখান থেকে হারিয়েছেন, পেয়েছেন এবং দিয়েও গেছেন। যে কারণে এখানে আমরা অনুষ্ঠান করছি। তিনি সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কথা লিখেছেন। ধনী দরিদ্র, নারী-পুরুষের কথা তাঁর লেখনীতে ফুটে উঠেছে। নারী অধিকারের কথা তিনিই উচ্চারণ করেছেন। তাঁর লেখায় কুলি, হরিজন, সাধারণ শ্রমিক, কৃষক, কামার, কুমার কেউ বাদ যায়নি। তাঁর কবিতা পড়লে মনে হয় সবকিছুই তিনি লিখে গেছেন। তাঁর লেখনীতে অসাম্প্রদায়িক চেতনা ছিল। তাঁর ক্ষুরধার লেখনী প্রেরণা জুগিয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান ‘জয় বাংলা’ কবি নজরুলের কবিতা থেকেই নেওয়া। অনেকে বলছে, ‘জয় বাংলা’ হিন্দুদের ভাষা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সব সময় নজরুলের স্মৃতি সংরক্ষণ করি। ১৯৭৪ সালের ৯ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কবি নজরুলকে ডি-লিট উপাধি দেওয়া হয়েছে।’ এর সঙ্গে তিনি যোগ করেন, ‘বিশ্ব ভারতীর অনুষ্ঠানে গিয়ে আমি কবি নজরুলের চুরুলিয়া গ্রামে গিয়েছিলাম। সরকার প্রধান হিসেবে সম্ভবত আমিই একমাত্র সেখানে গিয়েছিলাম। নজরুল আমাদের চেতনা ও প্রেরণার নাম। ১৯৯৬ সালে যখন আমরা সরকার গঠন করি তখন টানা দুই বছর ব্যাপী কবির জন্ম শতবার্ষিকী পালন করি। কবির প্রতি আমাদের সম্মান রয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে আরও কয়েকটি বিভাগ হবে। বৃহত্তর কুমিল্লাকে নিয়ে ভবিষ্যতে বিভাগ করার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘বিভাগের নাম কি কুমিল্লা হবে নাকি অন্য কিছু হবে? ’ এ সময় উপস্থিত সুধী হাত তুলে কুমিল্লার পক্ষে মত দেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আশা করি কুমিল্লাবাসী কোনো কুকর্ম করবে না। সুকর্ম করবে। ইনশাআল্লাহ আমরা বিভাগ করে দেব।’
সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের সভাপতিত্বে ওই অনুষ্ঠান হয়। উদ্বোধনী পর্বে ‘কুমিল্লায় নজরুল: ভিন্নমাত্রা’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা দেন লেখক শান্তনু কায়সার।
উদ্বোধনী পর্বের পর জাতীয় পর্যায়ের শিল্পীরা গান, নাচ ও আবৃত্তি পরিবেশন করেন।
১০ মিনিটে ১৯ প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেন প্রধানমন্ত্রী
এর আগে প্রধানমন্ত্রী সুইচ টিপে কুমিল্লার বিবিরবাজার স্থলবন্দর, কুমিল্লা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার (ইপিজেড) তরল বর্জ্য পরিশোধনাগার, চৌদ্দগ্রাম জেলা পরিষদ ডাক বাংলো, দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য নির্মিত ছাত্রাবাস, লাকসাম উপজেলা মৎস্য ভবন কাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, মেঘনা উপজেলার কাঠালিয়া ও পাড়ারবন্দ নদীর ওপর নির্মিত সেতু, ময়নামতি মেডিকেল কলেজ ও নবনির্মিত চৌদ্দগ্রাম থানা ভবনের উদ্বোধন করেন।
একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী কুমিল্লা শহরের শাসনগাছা রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণ প্রকল্প, বুড়িচং উপজেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন স্থাপন প্রকল্প, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন পরিদপ্তর আধুনিকায়ন ও এর কুমিল্লা জেলা কার্যালয় ভবন, বিএসটিআইয়ের জেলা কার্যালয়, বিখ্যাত সংগীতশিল্পী শচীন দেববর্মন কালচারাল কমপ্লেক্স, অটিস্টিক শিশুদের জন্য হিউম্যান কনসার্ন ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, বঙ্গবন্ধু ল কলেজ ভবন, কুমিল্লা প্রেসক্লাবে স্থাপিত কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ম্যুরাল, পয়ালগাছা টেকনিক্যাল স্কুল ও কুমিল্লা জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করবেন। ১০ মিনিটের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী ১৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ভরিতে এবার ১,৯৯৪ টাকা বাড়লো স্বর্ণের দাম
দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছিল বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনবিস্তারিত পড়ুন
সংস্কার হলে পেট্রোল-ডিজেলের দাম কত কমানো সম্ভব জানালো সিপিডি
মূল্য নির্ধারণ কাঠামোর সংস্কার হলে লিটার প্রতি পেট্রোলের দাম ১১বিস্তারিত পড়ুন
রাজশাহীতে সমন্বয়ককে হাতুড়ি দিয়ে পেটানোর অভিযোগ
রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় এক সমন্বয়ককে হাতুড়িপেটা করার অভিযোগবিস্তারিত পড়ুন