মো: ফরমান শেখ, টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ

ধুলাবালি ও বালুবাহী ট্রাকের দখলে এখন টাঙ্গাইলের বঙ্গবন্ধুসেতু-ভূঞাপুর সড়ক। এতে করে পৌঁহাতে হচ্ছে চরম জনদুর্ভোগ। আবার ঘটছে নানা রকম ছোট-বড় দুর্ঘটনা। অপর দিকে তীব্র ধুলা বালির কারণে সড়কের দুপাশে থাকা যমুনা নদী ভাঙ্গনের অসহায় মানুষদের হচ্ছে বিভিন্ন রোগ বালাই। সব মিলিয়ে এখন ভূঞাপুরের অন্যতম প্রধান সড়কটি ট্রাক ও ধুলাবালির দখলে দিন দিন চলে যাচ্ছে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, আগে সপ্তাহে রবিবার ও বৃস্পতিবার গোবিন্দাসী হাট হওয়ায় অতিরিক্ত বালুর ট্রাক ও সিএনজি ও অটোরিকসা-অটোভ্যান যাতায়াতের কারণে সড়কে জ্যাম লেগে থাকত। কিন্তু বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে হাটের দিন নয়, রাত দিন ২৪ ঘন্টাই লেগে থাকে তীব্র যানযট। সকাল হলে ছেলে-মেয়েরা এই যানযটের কারণে নিয়মিত পৌঁছতে পারে না স্কুলে। বালুবাহী অতিরিক্ত ট্রাক চলাচলের কারণে রাস্তায় সৃষ্টি হচ্ছে ধুলা বালি। যানবাহনের বাতাসের সাথে সেই ধুলায় প্রতিনিয়ত অসুস্থ হচ্ছে শিশু থেকে সব বয়সের মানুষ।

স্থানীয়রা আরো জানান, বঙ্গবন্ধু সেতুর গোলচত্বর ও রেল স্টেশন হতে ভূঞাপুর যাওয়ার গোবিন্দাসী টি-রোড পর্যন্ত সবচেয়ে বেশী যানযট লেগে থাকে প্রতিনিয়ত। বিশেষ করে বালুর উত্তোলনের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে এ সমস্যা সৃষ্টি হয়। বালু উত্তোলের পয়েন্ট গুলোতে রয়েছে গোবিন্দাসীতে ২টি, কষ্টাপড়ায় ২থেকে ৩টি, জিগাতলায় ১টি, চিতুলিয়া পাড়ায় ৯থেকে ১২টি, মাটিকাটায় ৪থেকে ৬ট, সিরাজকান্দিতে ৫ থেকে ৭টি, নোংরা বাজার এলাকায় ২টি ও পাথাইলকান্দি ও সারপলশিয়া এলায় ৩থেকে ৫টি পয়েন্ট। এই পয়েন্ট শত শত ট্রাকে বালু লোড দেওয়ার সময় দীর্ঘ লাইন পড়ে যায় সড়কের বাম পাশে। আবার লোড করে যাওয়ার পথে ডান পাশে দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। অন্য দিকে যাত্রীবাহী সিএনজি ও অটোরিকসা-অটোভ্যান তো আছেই। এতে করে জনদুর্ভোগ চরম হতাশায় যাত্রী পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রীগণ। এই বালুবাহী ট্রাকের দীর্ঘ লাইনের কারণে যাত্রীরা সঠিক সময়ে পৌঁছাতে পারে না তাদের গন্তব্য স্থাঁনে।

মাটিকাটা উচ্চ বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে বললে তারা জানান, সকালের খাবার খেয়ে বাড়ীতে থেকে স্কুলে যাওয়ার জন্য সড়কে পা দিলেই বালুবাহী ট্রাকের দীর্ঘ লাইন চোখে পড়ে যায়। ঠিক মত রাস্তাও পার হতে পারি না ট্রাকের জন্য। আবার এই ট্রাকের জন্য সৃষ্টি হয় ধুলা। যা আমাদের শারীরিকভাবে অসুস্থ করে তোলে। মাঝে মাঝে স্কুলেও নিয়মিত উপস্থিত হতে পারি না।

গোবিন্দাসী উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ুয়া যমুনা থেকে আসা শিক্ষার্থীরা জানান, বঙ্গবন্ধুসেতুর যমুনা থেকে বিশেষ করে গোবিন্দাসী পর্যন্ত সবচেয়ে বেশী যানযটের কবলে পড়তে হয়। বাইসাইকেল ও সিএনজি অথবা অটোরিকসা-অটোভ্যানে যাতায়াত করতে যে সময় লাগত এখন তার চেয়ে দ্বিগুণ সময় লাগে স্কুলে পৌঁছাতে অতিরিক্ত বালুবাহী ট্রাকের কারণে। অন্যদিকে এই অতিরিক্ত ট্রাক চলাচলের কারণে ধুলা বালি চোখে মুখে পুরো শরীরে লেগে কাপড়-চোপড় নোংরা হয়ে যায়। সৃষ্টি হয় বিভিন্ন রোগ, লেগে যায় সর্দি-জ্বর।

সিএনজি শ্রমিকরা জানান, বালুবাহী অতিরিক্ত ট্রাকের দীর্ঘ লাইনের কারণে এ যানযটের সৃষ্টি হয়, যার কারণে বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনায় পড়তে হয়।

অটোরিকসা-অটোভ্যান শ্রমিকরা জানান, অতিরিক্ত বালুবাহী ট্রাকের কারণে সেতু থেকে ভূঞাপুরের গোবিন্দাসী পর্যন্ত প্রতিদিনই তীব্র যানযট লেগেই থাকে। ট্রাকের কারণে সঠিক সময়ে যাত্রীদের গন্তব্য স্থানে পৌঁছে দিতে সমস্যা হয়। সড়কে আবার কিছু কিছু স্থানের সৃষ্টি হয় ধুলা। যা বাতাসের সাথে চোখে লাগলে ঝাঁপসা দেখা যায়। অপর দিকে শরীরে সৃষ্টি হয় বিভিন্ন রোগ। এ থেকে মুক্তি চাই।

শুধু শিক্ষার্থী, যাত্রী, যাত্রী পরিবহন শ্রমিকদের অভিযোগ শেষ তা নয়। অভিযোগ রয়েছে পথচারীর, রাস্তার দু-পাশে থাকা মানুষদের এবং এলাকাবাসীর। তারা উপজেলা প্রশাসন ও গোবিন্দাসী এবং নিকরাইল ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিদের কাছে জোর দাবি করে বলেন, যমুনা থেকে গোবিন্দাসী টি-রোড পর্যন্ত যানযট নিরসনে সড়কের গুরুত্বপূর্ণ বালু উতোলনের স্থানগুলোতে বিশেষ করে ট্রাকের যেখানে দীর্ঘ লাইন হয় সে সব জায়গায় ট্রাফিক পুলিশের ব্যবস্থা করা সহ রাস্তায় যেন ধুলা বালি সৃষ্টি না হয় এর জন্য দ্রুত সময়ে সমাধান চান।