‘বড় ছেলের লাশ পেলাম, ছোট ছেলেরটা পেলাম না’
তিন বছর আগের ঘটনা। সাভারে রানা প্লাজা ভবন ধসের ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন ১১শর বেশি শ্রমিক। আহত হন ২৪শর বেশি।
ওই ঘটনায় পরিবারের তিনজন সদস্যকে হারান সাভারের বৈদপাড়া এলাকার বাসিন্দা কাশেম আলী। তিনবছর পর এখন কেমন কাটছে তার পরিবারের দিন?
সন্তানহার বাবার মুখেই শুনুন-আমার নাম কাশেম আলী। বড় ছেলের নাম উজ্জ্বল, বয়স ছিল ২৭। ছোট ছেলের নাম আফজাল বয়স ১৮।
আর বড় ছেলের বউ খাদিজা। তার বয়স আনুমানিক ২২ বছর।
বড় ছেলে সিনিয়র অপারেটর। ছোট ছেলে হেলপার। বউ কোয়ালিটি। ওরা কাজ করতো তিন তলায় নিউ বটম (নিউ বটম ওয়েভ লিমিটেড) কারখানায়।
রানাপ্লাজা ধসের ঘটনায় সময় এর ভেতরে থাকা একজন জানিয়েছেন, আমি যেসময় বের হয়ে আসছি জানালা দিয়ে লাফ দিলাম। উজ্জ্বল ভাইরে ডাক দিলাম । উজ্জ্বল ভাই আসলো না’।
কাশেম আলী বলেন, পুত্রবধূকে বের করে আনতে গিয়ে তার ছেলে উজ্জ্বল আর বের হতে পারেনি।
আর ছোট ছেলে গেটের কাছেই ছিল। সেও দাঁড়িয়ে ছিল। বলে ভাই আসুক একসাথে বের হবো। সেও আসতে পারেনি।
অধরচন্দ্র মাঠে পাঁচ দিনের দিন বড় ছেলের লাশ পেলাম। ছোট ছেলের লাশ তো পেলামই না। খুঁজলাম কত।
চার দিন ধরে তালাশ করে পাঁচ দিনের দিন সকাল সাতটার গাড়িতে গেলাম। দশ মিনিট পরেই বউর লাশ আসলো।
বউর নাম ধরে বলছে, ‘এই লাশের নাম খাদিজা’। দৌড় দিয়ে দলে দলে যাচ্ছে। একজন বলে আমার বোনের লাশ, আরেকজন বলে আমার ভাইয়ের বউর লাশ। আমিও আস্তে আস্তে গিয়ে ভালো করে দেখলাম। দেখি আমার ছেলের বউর লাশ।
ডোম ছেলেটাকে বললাম, আমার কাছে ছবি ছিল। আইডি কার্ডের সাথে একদিকে ছেলের ছবি আরেক দিকে তার বউয়ের ছবি ছিল।
তাও জোর করে অন্যরা নিয়ে নিতে চায়। পরে কি করবো? পুলিশকে গিয়ে খবর দিলাম। এরপর আস্তে করে তারা সরে গেল।
একটু পরেই বললো একজন পুরুষের লাশ আসলো। দৌড়ে গেলাম। সেখানে তিন-চারজন দাবিদার।
একজন বলে আমার ভাইর লাশ, একজন বলে আমার ভাতিজার লাশ। একেকজন একেক কথা বলে।
কিন্তু আমি ভাল করে দেখে বললাম, আমার ছেলের লাশ। ডোম ছেলেটা বলল, কাকা চিনলেন কি করে?
আমার ছেলের তো কোথাও একটু কাটেনি, ফাটেনি, কিছু হয়নি।
টাকা ছিল ২০ হাজার পকেটে। ডোম ছেলেটা জিজ্ঞেস করে, কাকা আপনার ছেলের কি কোন ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স ছিল না?
আমি বললাম, ব্যাংক ব্যালেন্স ছিল কি ছিল না তা আমরা বলতে পারবো না। তবে এক সপ্তাহ আগে জানতে চেয়েছিল, ‘আব্বা ২০/২২ হাজার টাকা হলে কি একটা গরু কেনা যাবে নাকি? গরু যখন আছে কয়েকটা আর একটা বাছুর কিনে কোরবানির সামনে বিক্রি করা যাবে’।
আমি বললাম হবে। তা সেই টাকা কোথায় রেখে গেছে এখনো সে খবর পাইনি। এরপর আইডি কার্ড দেখালাম মিলে গেল।
পরে ডোম বলল, ‘পুলিশের কাছে আপনার ছেলের টাকা জমা আছে, নিয়ে নিয়েন।
কাশেম আলী বলেন, সারা বিশ্বে শুনিনি বিল্ডিং এভাবে ভাঙ্গে। বিল্ডিং ভাঙলে কাত হয়ে থাকবে, ঝুলে থাকবে, রড সিমেন্টের বিল্ডিং তো। ঝপাৎ করে পড়ে ধসে যাবে এটা তো বিল্ডিং এর কাজ না।
তিনি বলেন, ক্ষতিপূরণ দিয়েছে তবে ষোলো আনা দেয়নাই। তালবাহানা করছে। দুই ছেলে তো। কিন্তু একটা অ্যাকাউন্ট করছি। পঞ্চাশ লাখের মত পাইছি, সেটা ব্যাংকে রেখে টুকটাক করে যা আসে তা দিয়ে চলি।
এখন আমার উপার্জনের কেউ নেই। দুই মেয়ে। বড় মেয়ের জামাইটা ভাল না। মেয়েকে নেয় না। বিদেশ পাঠিয়েছিলাম। আর ছোট মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি।
বড় মেয়ে আর মুসলিমে চাকরি করে। নিষেধ করি। চিন্তা হয়। কখন কি ঘটে। মেয়ে বলে ‘নাতিটা আছে, তার পড়ালেখার খরচ লাগে। তুমি একলা কি করবা?’
আমার স্ত্রী তার দুই সন্তানকে হারিয়ে এখন খুবই মেজাজ খারাপ থাকে। কারও সামান্য একটু কিছু হলেই সে অস্থির হয়ে যায়। অনেকটা যেন পাগলের মত চিৎকার করে ওঠে।
যার প্রমাণ পাওয়া গেল উজ্জ্বল ও আফজালের স্মৃতি হিসেবে থাকা ছবি মাটিতে পড়ে যাওয়ার ঘটনা। তাদের ছোট বোন নামাতে গেলে নিচে পড়ে যায়। এই দৃশ্য দেখে তড়িৎবেগে দৌড়ে আসেন তাদের মা। সূত্র: বিবিসি বাংলা
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
রবিবার যেসব এলাকায় ১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না
গ্যাস পাইপলাইনের মেরামত কাজ ও জরুরি স্থানান্তরের জন্য রবিবার দেশেরবিস্তারিত পড়ুন
জেমিনি চ্যাটবটে যুক্ত হলো মেমোরি, যে সুবিধা পাওয়া যাবে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চ্যাটবট জেমিনিতে নতুন সুবিধা যুক্ত করেছে গুগল।বিস্তারিত পড়ুন
ঢাকা সিটি কলেজে ক্লাস বন্ধ রাখা নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত
ঢাকা কলেজের বাস ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত বুধবার সংঘর্ষেবিস্তারিত পড়ুন